জীবন বদলাতে হলে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হয়।
দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হলে প্রথম বিশ্বাস করতে হবে যে, আমি আমাকে বদলাতে পারবো। বিশ্বাস আসতে চাচ্ছে না? সংশয় বার বার উঁকি দিয়ে বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিচ্ছে? যে কেউ ইচ্ছা করলেই নিজের জীবন বদলাতে পারে। ভাবুন কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার পরিবর্তন প্রয়োজন। ফরাসী মনোবিজ্ঞানী ডা. এমিল বাস্তব গবেষনায় দেখেন- 'ভালো কথা বার বার বললে ভালো জিনিস গুলোই তার দিকে আকৃষ্ট হয়। সে ভালো হতে থাকে'। আমি নিজে দেখেছি, পড়ার টেবিলেই বসে না যে শিক্ষার্থী, তাকে এখন পড়া থেকে তোলা যায় না জোর করেও। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে ব্যর্থ ছাত্র করেছে বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট। মনের মধ্যে তীব্র ইচ্ছা থাকলে- বদলে যাবে আপনার জীবন।
আপনার মস্তিস্ক এক সুপার কম্পিউটার।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা হাজার হাজার গবেষনা করে দেখেছেন মানুষের নার্ভাস সিস্টেম বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে কোনো তফাৎ করতে পারে না। সিনেমায় আমরা অভিনয় দেখে হাসি আবার কান্নায় বিষাদে মন ভরে উঠে। আপনি জানেন পুরোটাই অভিনয়। কিন্তু তারপরও উত্তেজনা বা বিষাদে রেশ কাটাতে সময় লাগে। 'বেশ ভালো আছি' আপনি যদি দিনে ২০ বা ৩০ অথবা ৪০ জনের সাথে দেখা হওয়ার পর যদি একই কথা বলেন, তাহলে ৪০ বার আপনার মস্তিস্কে এই ভালো থাকার কথা বাণী যাচ্ছে। বার বার একই বাণী যাওয়ার ফলে মস্তিস্কে ভালো থাকার তরঙ্গ তৈরি হচ্ছে। ভালো থাকার আকুতি বাড়ছে। নিজের যা সামান্য আছে, সেখান থেকেই দান করুন দেখবেন এক আকাশ আনন্দ পাচ্ছেন।
আপনাদের জন্য কিছু পরামর্শ - রাগটা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
নিজে হাজার কষ্ট পেলেও অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। সব সময় মনে রাখা উচিত- অন্যের হৃদয়ে প্রবেশের সহজ পথ বিনয় ও সততা। একমাত্র বিনয় কোনো রকম খরচ ছাড়াই অন্যের হৃদয়কে স্পর্শ করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে নিজেই পর্যবেক্ষন করা উচিত। মনে করুন কেউ আপনাকে দেখছে না, তখন আপনি যে কাজটি করছেন- তার মধ্যেই আপনার আসল চরিত্র প্রকাশ পায়। আপনি অন্যদের বুঝতে চেষ্টা করুন তাহলে তারা আপনাকে বুঝতে পারবে। এই সমাজে সবাই ভালোবাসা পেতে চায়, অল্প কিছু মানূষ ভালোবাসা দিতে চায়- আপনি সেই অল্প কিছু মানূষদের একজন হোন। যদি ভাগ্যবান হতে চান- তাহলে মেঘের আড়ালে রঙধনু দেখতে চেষ্টা করুন। প্রচুর বই পড়ুন- বিশ্লেষন ও সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সব সময় হাতের মুঠোয় রাখা উচিত। নিজের উপর বিশ্বাস রাখা খুব জরুরী।
একটু চেষ্টা করলেই সব সময় প্রিয় মানূষদের খুশি রাখা যায়।
আড্ডাতে কখনও গীবত বা পরচর্চা করবেন না। ভালো কিছু বলতে না পারলে চুপ করে থাকবেন। ভদ্র মানূষ ধর্ম নিয়ে কখনো বাড়াবাড়ি করে না। কাউকে কথা দেয়ার আগে চিন্তা করা উচিত, কথা দিলে আমি তা রক্ষা করতে পারবো কিনা। দেশকে ভালোবাসা এবং দেশের জন্য কিছু করবো এইরকম মনোভাব থাকা খুব জরুরী। আমরা মহান এক জাতি। বিশ্বের সেরা জাতিতে পরিণত হতেই হবে। কাউকে নিয়ে উপহাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহস ও কৌশলের সাথে নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। একটি ছোট ছিদ্র বিশাল জাহাজকেও ডুবিয়ে দিতে পারে, তাই ছোট ছোট ভুলের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কোনো কারনে সত্য বলতে না পারলে অহেতুক মিথ্যা না বলে চুপ করে থাকা ভালো।
পথে নামলে পথই পথ দেখাবে।
মস্তিস্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরোনের প্রতিটি ১ হাজার থেকে ৫ লাখ নিউরোনের সাথে সংযুক্ত। যত উদ্যেগী ও সাহসী পদক্ষেপের কথা ভাববেন, নিউরোন গুলো তত একটা আরেকটার সাথে সংযুক্ত হবে, তত তাদের কানেকটিভিটি বাড়বে। ভুলে গেলে চলবে না, অফুরন্ত সম্ভবনার আধার আপনার মস্তিস্ক। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় আপনাকে রক্ষা করবে চলার পথে হোঁচট খাওয়া থেকে। মেধাবীদের চেয়ে সাধারণ মেধার মানূষরাই ক্যারিয়ার নির্মানে সফল হন বেশি। না জানার কারণেই মানূষের ভেতর শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তাই বাঁচতে হলে জানতে হবে। জীবনের শূন্যতাই দূর করছে ধর্ম। ধর্ম বলে মানূষ এসেছে স্রষ্টার (ডারউইন আপাতত বাদ) কাছ থেকে। মৃত্যুর পর মানূষ আবার স্রষ্টার কাছেই ফিতে যাবে। ধর্মের মূল শিক্ষা হচ্ছে এক ঈশ্বরের উপাসনা করা, সবার সাথে ভালো আচরণ করা আর সৃষ্টির সেবা করা। তাহলেই বেহেশতে যাওয়া যাবে। ধার্মিক হতে হলে সফল হতে হবে, ধনী হতে হবে। নবীজী (স) সফল ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। কোরআনে নামাজের পাশাপাশি যাকাত দিতেও বলা হয়েছে । হযরত ইব্রাহিম (আ) একশ উট একদিনে কোরবানি দিয়েছিলেন।
বিশ্বের সাড়ে সাত কোটি মানূষের মধ্যে নিজেকে অনন্য ভাবুন।
আপনার মতো হুবহু দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঈশ্বর আপনাকে এমন কিছু মেধা দিয়েছেন যা আর কাউকে দেন নি। পৃথিবী সাহসী মানূষদের জন্য তাই নিজেকে সাহসী ভাবুন। আগুন ছাই চাপা দিয়ে যতই ঢেকে রাখা হোক, সে তার শক্তি ও ঔজ্জ্বল্য ঠিকই বিকিরিণ করতে থাকে। ইতিহাসে তারাই কালজয়ী হয়েছেন যারা পূর্ব পুরুষের প্রচলিত ভ্রান্ত সংস্কার ও আচরণ-অভ্যাসের ক্ষুদ্র বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন। সুখের অভাবের নামই অসুখ। মনের সুখ দেহের সব অসুখকেই ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। নিজেকে দুঃখী ও অবহেলিত মনে করা ঠিন নয়। কল্পনার মাধ্যমেই আমরা ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করি এবং জীবনধারা বদলাই। মনে মনে নিজেকে নায়ক ভাবুন এবং সবকিছুতেই জয়ী ভাবুন। আপাত ব্যর্থতা আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কোনো অবস্থাতেই ধৈর্য্য হারাবেন না। আপনি ভয় পেয়ে থেমে গেলে অন্যরা এগিয়ে যাবে। বিজয় না আসা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। দায়িত্ব নিতে পিছপা হবেন না। যত বড় দায়িত্ব নেবেন তত বড় সুযোগ আপনার জন্য তৈরি হবে। হবেই।
একটি বাচ্চা জন্মের পর প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে শুধু হার-পা নাড়তে পারে।
একসময় সে কাত হয়, তারপর শুরু হয় হামাগুড়ি দিয়ে হাতে-পায়ে হাঁটা। এরপর সে উঠে দাঁড়ায়, হাঁটি হাটি পা পা করে। হাঁটতে গিয়ে বার বার পড়ে। বার বার উঠে দাঁড়ায়, আবার হাঁটতে শুরু করে। একসময় কারো সাহায্য ছাড়াই সে হাঁটে দৌড়ায়। আপনি ও এইভাবে লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই। কিছু মানূষ সবসময় নিজেকে জাহির করতে ব্যস্ত থাকে। এটা ঠিক নয়। এই ধরনের মানূষকে অনুকরণ করা ঠিক নয়। কে কী বলছে না বলছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি নিজের সম্পর্কে কী ভাবছেন। মানূষ প্রথম পরাজিত হয় তার নিজের কাছেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪৬