১। ২০ ফেব্রুয়ারী ২০০৩..... গোলাম মুস্তফা।
১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১২......হুমায়ুন ফরিদী।
আর আজ এটিএম শামসুজ্জামান।
ফেব্রুয়ারী কি তবে এমনই?
২। সাংবাদিক ছিলেন। লিখতেনও। গল্প চিত্রনাট্য, সংলাপ অারো কতো কি। একের পর এক ছবিতে ভিলেনের চরিত্র জনপ্রিয় করে তোলা অভিনেতা। গোলাপী এখন ট্রেনের মোড়ল, নানা ছবিতে নারী লোভী মাতবর, বিয়ে পাগল বুড়ো সবকিছুতে হিট।
৩। একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। আপনার আত্মা শান্তি পাক ভীষণ প্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্নাইলাইহে রাজিউন।
৪। কোনো এক বিনোদন ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এ টি এম শামসুজ্জামানের আত্মজীবনী। শৈশবে পুরনো একটি সংখ্যা পেলাম সেই কাগজের। পড়লাম ধারাবাহিক লেখার একটি কিস্তি। সেখানে শক্তিমান এ অভিনেতা জানাচ্ছেন, কয়েকদিন যাবত তার বাসায় খাবার নেই। এসময় এক প্রযোজক এসে তাকে কিছু টাকা দিয়ে গেলেন। নতুন একটি সিনেমা বানাতে চান। চিত্রনাট্য লিখে দিতে হবে এ টি এম শামসুজ্জামানকে। এ জন্যই অগ্রিম টাকা দিলেন।
সেই টাকায় বিরানি কিনে আনলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। বিরানি দেখে তাঁর স্ত্রী বললেন, “তুমি একটা পাগল”!
এটাই অকপটে জানালেন তিনি।
শক্তিমান এই অভিনেতার প্রতি মুগ্ধতা বাড়ল আরও। এমন সৃষ্টিশীল “পাগল”রা আছেন বলেই তো পৃথিবী এখনো বাসযোগ্য।
৫। মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পটা সত্যি করে দিলেন এটিএম। আপনার অভিনয়ে আর সবার মতো আমিও মুগ্ধ।
৬। সুবিধাবাদী চরিত্রের বাস্তব রূপকার
লোকটি সত্যিই দুর্দান্ত অভিনেতা ছিলেন। ঢাকার নাটক-সিনেমায় ভাঁড়ামো ও খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন দর্শক-শ্রোতাদের। কেবল পর্দা বা মঞ্চে নয়, বাস্তব এবং কর্মজীবনেও আমরণ অভিনয়ই করে গেছেন তিনি। বাংলা সিনেমার অন্যতম মন্দ চরিত্রের রূপকার তিনি। নিজের কৃতকর্মকে আড়াল করতে মানুষকে যে-অভিনয় করতে হয়, তা কিন্তু কম কষ্টসাধ্য নয়! এইখানে তিনি প্রমাণ করেছেন দারুন পারঙ্গমতা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইনি ছিলেন পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ও হানাদারদের পক্ষে নানা উদ্দীপনামূলক অনুষ্ঠান করতেন। স্বাধীনতার পর সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনের দালাল শিল্পী ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগীদের চিহ্নিত করার জন্য ড. নীলিমা ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটির সুপারিশে এটিএমকে রাষ্ট্রীয় বেতার ও টেলিভিশনে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পটবদলের পর ফের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় দোর্দণ্ড প্রতাপে ফেরার সুযোগ পান তিনি।
৭। অনেক শিল্পীরই বিকল্প তৈরি হয় কিংবা করা যায় কিন্তু এটিএম শামসুজ্জামানের কখনোই কোন বিকল্প ছিলো না, আর তৈরি হবে কিনা জানি না। তার প্রতিটি চরিত্রই ছিলো তার অভিনয় নৈপুণ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্যের।
৮। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী এই মহৎ হৃদয় মানুষের দেশপ্রেম আমাদের সকলের শিক্ষণীয় বিষয়।তার প্রয়াণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা কখনোই পূরণ হবেনা। বাংলাদেশ তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজনকে হারালো।