হুমায়ূনকে আমি প্রথম দেখি একুশের বইমেলায়।
৮৭ সালের এক সন্ধ্যায়। তারপর বছর পাঁচেক পরে ঢাকার একুশের বইমেলায় ঢুকেই দেখি বিশাল লাইন। বই হাতে মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। প্রশ্ন করে জানলাম ওঁরা হুমায়ূন আহমেদের বই কিনে দাঁড়িয়ে আছেন অটোগ্রাফ করিয়ে নেবেন বলে। অন্তত পাঁচ-ছ’শো মানুষ একই আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন দেখে অবাক হলাম।
আমাদের কলকাতা বইমেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে কি না মনে পড়ল না। সমরেশ বসু-শংকর-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা যখন মেলায় আসতেন, তখন তাঁদের ঘিরে ছোটখাট ভিড় জমলেও এমন লাইন পড়ত না।
উনিশশো বিরানব্বই।
কোলকাতা বইমেলায় একটি স্টলের সামনে চেয়ারে বসে হুমায়ূন মাথা নিচু করে একের পর এক সই দিয়ে যাচ্ছে। যে বই এগিয়ে দিচ্ছে তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। আমি একটা ‘গীতবিতান’ এগিয়ে ধরতে সে আমাকে না দেখে বইটি নিল। সই করার ঠিক আগে থেমে গিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘‘সর্বনাশ, আপনি কি আমাকে দোজখে পাঠাতে চান? এই বই-এ সই করার যোগ্যতা তো আমার—!’’ বলতে বলতে মুখ তুলেই সে আমাকে দেখতে পেল। তার চোখ বিস্ফারিত হল। লাফিয়ে উঠে আমাকে প্রণাম করতে এল সে। বলল, ‘‘ছি ছি, আপনি আমায় এ কী লজ্জায় ফেললেন!’’
হুমায়ূন তখনও অসুস্থ হননি।
ঠিক তার আগে ঢাকায় যেতেই ওর ফোন এল, ‘‘সমরেশদা, আসুন, অনেক কথা আছে।’’ আমি তাঁর বাসায় গেলাম। সে শ্বাস ফেলল শব্দ করে। বলল, ‘‘খুব কষ্ট হয় সমরেশদা। জীবনে যা চেয়েছি, তার অনেকটাই পেয়েছি। এই চাইতে গিয়ে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। কী করি বলুন তো?’’
‘‘আমৃত্যু এই কাঁটা তোমার আমার সবার মনে বিঁধতে থাকবে। এই নিয়েই তোমাকে বাস করতে হবে। তোমার কাজটা তুমি করে যাও, কষ্টটা কমে যাবে।’’
(আনন্দবাজার পত্রিকা, সমরেশ মজুমদার)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১৯