ছবিঃ আমার তোলা।
১। আমি খুব ভালো মোটরসাইকেল চালাতে পারি।
একবার একটা লোক একজন মেয়ের হ্যান্ডব্যাগ কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে চেপে পালিয়ে যাচ্ছিলো। মেয়েটা অসহায়ভাবে চ্যাচামেচি করছিলো। তারপর করুন চোখে চেয়েছিলো। আমার খুব মায়া হলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। পাশেই অন্য কার একটা মোটরসাইকেল রাখা ছিলো, লাফিয়ে সেটায় উঠে পড়ে তাড়া করলাম চোরটাকে।
উঁচু নিচু রাস্তা, চোরটা যত স্পিড দিচ্ছে, আমিও তত স্পিড বাড়াচ্ছি।
চোরটা ট্র্যাফিকের লাল বাতি মানছে না, আমিও মানছি না। রাস্তার সব লোক অবাক হয়ে আমাদের দেখছে। মেয়েটার করুন ভিষন্ন মুখ দেখে আমার খুব মায়া হয়েছে। আমি চোরটাকে ধরবোই, লুকাবে কোথায়! খানিক পরে দেখি, রাস্তাটা অনেক উচু থেকে খাড়া নেমে গেছে, সামনেই একটা খাল বা পুকুরের মতো। এত স্পিডে চালাচ্ছি যে থামাবার উপায় নেই। সোজা গিয়ে খালে পড়তে হবে। তখন চোরটাকে ধরা যাবে ঠিকই, কিন্তু মেয়েটার হ্যান্ডব্যাগটা যদি ডুবে যায়!
তাই শেষ মুহুর্তে আমি একদম সিনেমার নায়কদের মতন মোটরসাইকেলের ওপর দাড়িয়ে উঠে ঝাপিয়ে পড়লাম লোকটার ঘাড়ের ওপর।
২। সন্ধ্যায় সুরভিকে বললাম, চা দাও।
সুরভি কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বলল, একটু পরপর চা বানাতে পারবো না। বিয়ের আগে সুরভি বলেছিলো, রাত তিনটায় চা চাইলেও সে হাসিমুখে বানিয়ে দিবে। কেউ কথা রাখে না! মন খারাপ করে বসে আছি। একটু পর দেখি কন্যা চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। চায়ে চুমুক দিয়েই মনে হলো- Life is Beautiful.
৩। কুড়ি বছর আগের ঘটনা।
পদ্মা নদীর পাশে ছোট্র একটা গ্রাম আমাদের। পাশের গ্রামে ফুটবল ম্যাচ খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। খেলা শেষ হতে দেরী হয়ে গেল। তখন শীত কাল। মাঘ মাসই হবে। সেই সময় পদ্মা নদীর পাড়ের গ্রাম গুলোতে প্রচন্ড শীত পড়তো। এখকার মতো এত ঘনবসতি ছিল না তখন। খেলা দেখে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা প্রায় শেষের দিকে কিন্তু মনে হচ্ছে গভীর রাত। একাএকা বাড়ি ফিরছি। চারপাশে প্রচন্ড কুয়াশা আর অন্ধকার যেন হুট করে নামলো। আলামিন বাজার বায়ে রেখে 'কামার গাও' এর দিকে যাচ্ছি। দুই পাশে জঙ্গল, মাঝখানে সরু পথ। একেবারে নিশুত রাতের মতো নিঃঝুম। শুধু ঝি ঝি ডাকছে।
মাঝ রাস্তায় আসতেই হঠাৎ শুনতে পেলাম খুব কাছ থেকে কে যেন বলে উঠল, 'রাজীব একটু তাড়াতাড়ি যা বাবা।' আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। গলাটা খুব চেনা। আমার বড় মামার গলা। কিন্তু মামা এখানে এই জঙ্গলে আসবে কি করে? তার তো বিছানা থেকে ওঠার'ই সামর্থ্য নেই। আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম, কোথাও কেউ নেই। কঠিন অন্ধকার আর কুয়াশায় ঢাকা। বললাম, কে? কে আপনি? কেউ জবাব দিল না। শুধু একটা পেঁচা ডেকে উঠলো। আর দুইটা বাদূর এক ডাল থেকে আরেক ডালে গিয়ে বসলো। একটা গাছের ঢালে এক প্যাঁচা দেখলাম। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো আমার।
কথাটা স্পষ্ট শুনেছি। ভুল নেই।
কিছুক্ষন হাত পা সব কাঠ হয়ে রইল। তারপর হঠাৎ মনে হলো, গলাটা বড় মামার'ই। হয়তো মামা আর বেঁচে নেই। মনে হতেই প্রায় ছুটতে শুরু করলাম। মাইল খানেক পথ দৌড়ে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই কান্নার রোল শুনতে পেলাম। এসে দেখি মামা বেঁচে নেই।
৪। করোনা শুরু হবার কয়েকদিন আগে আমি লিখেছিলাম- প্রকৃতি কঠিন প্রতিশোধ নিবে। নির্মম সব রোগ, মহামারী, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস দিয়ে জনসংখ্যা কমিয়ে দিবে। হচ্ছে তাই-ই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৫৭