ছবিঃ আমার তোলা।
আমি সাধারণ ধর্ম নিয়ে লিখতে চাই না।
ভদ্রভাবে বলতে গেলে সামুতে আমার ধর্ম নিয়ে লেখা নিষেধ। কঠোর ভাবে নিষেধ। সেই নিষেধ আমিও উপেক্ষা করতে চাই না। ধর্ম নিয়ে লাখ লাখ বই লেখা হয়েছে কোরআন আর হাদিসের আলোকে। লাখ লাখ বই আমি পড়ি নাই। তবে কোরআন-হাদীস পড়েছি। কোরআন হাদীস পড়েই অন্যান্য ধর্মীয় বই পড়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছি। সব ঘুরেফিরে একই কথা। একই প্যাঁচাল। নতুনত্ব কিছু নেই। একঘুমেয়ি। আমার কাছে যথেষ্ঠ বিরক্তকর লাগে। অন্তত এই আধুনিক যুগে এসে হাজার বছর আগের চিন্তা চেতনার সাথে খাপ খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। যারা খাপ খাওয়াতে পারছে তাঁরা সম্ভবত মানসিক রোগী।
সানাই মাহবুব নামে এক মেয়ে আছে।
বিশাল বক্ষের অধিকারী। এবং সে এই বক্ষ দেখিয়ে পুরো বাংলাদেশ প্রায় কাত করে ফেলেছেন। এখন সে ধার্মিক হয়েছে। খুব ধার্মিক হয়েছে। বোরখা পড়ে থাকেন সব সময়। টিকটকে বেশ কিছু মেয়েকে দেখেছি বুক পেট দেখিয়ে অশ্লীল ভিডিও করে। এখন তাঁরা ভালো হয়ে গেছে। টিকটকবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ভালো হয়ে গেছে। এখন শুধু ইসলামিক ভিডিও করে। নাচ গানা বন্ধ। বেশ কিছু ছেলেকেও দেখেছি এখন ধার্মিক হয়ে গেছে। মাথায় সব সময় টূপি থাকে। হাতে থাকে তজবি। ধর্মের কথা বলে। এরকম সব সময়ই সব যুগে হচ্ছে হয়। সিনেমার নায়ক নায়িকারা শেষ বয়সে এসে খুব ধার্মিক হয়ে যায়। কেউ ধার্মিক হয়ে গেলে আমার কোনো সমস্যা নাই। এটা ভালো। অশ্লীলতা মোটেও ভালো কিছু নয়। তবে অতি ধার্মিকতা খারাপ।
আমার এক বন্ধু সালাউদ্দিন।
সে রাস্তায় মেয়ে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকতো। গলায় মোটা চেনের সাথে নানান রকম লকেট পড়তো। হাতে পড়তো নানান রকম বেসলেট। জিন্স প্যান্ট আর বুট জুতা। আমরা যখন বেলী রোডে বা ফুলার রোডে আড্ডা দিতাম। সে তখন আমাদের পাশে বসে গিটার বাজিয়ে চিৎকার করে প্রেম ভালোবাসার গান গাইতো। আমার এই বন্ধু এখন ধার্মিক। কঠিন ধার্মিক। মুখ ভরতি দাঁড়ি। তার একমুঠ দাড়িতে নাকি ফেরেশতা খেলা করে। কথায় কথায় বন্ধু মাশাল্লাহ, আলহামদুল্লিলা ইত্যাদি কি কি জানি বলে বলে। ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী বউ এর সাথে ব্যবহার করে। সেদিন তার স্ত্রী বেতন পেয়েছে। বন্ধু বলল, বেতন পেয়ে সব তোমার মায়ের হাতে দিয়ে দিলে এটা ঠিক না। আমি তোমার স্বামী। আমার উপর নির্ভর করে তোমার বেহেশত। আমার কথায় তোমাকে উঠবোস করতে হবে। আমার বন্ধু সালাউদ্দিন গর্ব করে বলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানীর নাম- হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। আমার পেয়ারা নবিজি।
সালাউদ্দিন বলে, সবার আগে আমার ধর্ম।
তারপর আমার বাপ-মা এবং সন্তান। সবার আগে আমার কাছে আমার আল্লাহ, রাসূল। তারপর অন্য সবাই। এবং এই কথা কোরআন হাদিসেই নাকি বলা হয়েছে। আমি বললাম- আমার কাছে আগে আল্লাহ বা রাসূল না। ধর্মও না। আমার কাছে আমার সন্তান, আমার মা বাবা আগে। বন্ধু রেগে গেলো। বলল তুমি তো জাহান্নামে যাবি রে। এখনই আল্লাহর কাছে তোবা করে ক্ষমা চেয়ে নে রে নাদান। আমার এই বন্ধু ধর্ম-ধর্ম করে নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিলো। বন্ধুর অতি ধার্মিকতার কারনে তার বউ তাকে তালাক দিয়েছে। বন্ধু এখন বলে এটা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। হয়তো এই তালাকে আমার জন্য মঙ্গল রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি- আমার রব আমার জন্য যা করবে সব ভালো করবে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার 'পথের দাবী' উপন্যাসেলিখেছেন-
সকল ধর্মই মিথ্যা- ''আদিম যুগের কুসংস্কার। বিশ্বমানবতার এত বড় পরম শত্রু আর নেই''। ধর্মের কুসংস্কার আছে বলেই বিজ্ঞান এতো অগ্রগতি! এত জয়-জয়কার। যুক্তিবোধ থেকেই নৈতিকতার উৎপত্তি। যারা ধর্মগ্রন্থের অযৌক্তিক নির্দেশ গুলোকে নৈতিকতার উৎস মনে করে তারা যুক্তিবোধহীন বা পশুসমতুল্য। ইসলামিক দেশগুলোতে অনেকে কল্লা হারানোর ভয়ে সরাসরি ধর্মকে অস্বীকার করে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে অনেকেই ধর্ম বিশ্বাস করে না। ধার্মিক পুরুষ গুলো বোরখা জিনিসটাকে খুব পছন্দ করে। এত পছন্দ, তারপরও তারা নিজেরা কেন বোরখা পরছে না, বুঝিনা। ধর্ম নাকি মানবতার কথা বলে- তা প্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে। অথচ যেই আমরা মানব ধর্মের প্রচার করি সেই যত বিপত্তি কেন? শান্তির ধর্ম ইসলাম অথচ বিশ্ব শান্তির সূচকে শীর্ষ দশ দেশগুলোর মধ্যে কোনো ইসলামী রাষ্ট্র নেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৩৬