
ভিড় আমার পছন্দ না।
এজন্য বিশেষ বিশেষ দিন গুলোতে আমি ঘর থেকে বের হই না। বিশেষ দিন মানেই ঢাকায় গজব অবস্থা। আর কয়েকদিন পর রমজান মাস। বেশ কয়েকবার বাজারে গিয়েছি। কিন্তু বাজার না করেই ফিরে এসেছি। প্রচণ্ড ভিড়। আরেহ ভাই এটা কি! সকালে যাই, ভিড়। দুপুরে যাই ভিড়। রাতে যাই ভিড়। ঈদের সময় মার্কেটে গেলে যেরকম ভিড় থাকে তারচেয়ে বেশি ভিড়। যেহেতু বাজারে খুব ভিড় তাহলে দেশের মানুষের কাছে ভালোই টাকা পয়সা আছে। এখন সবাই রমজানের কেনাকাটা নিয়ে ভীষন ব্যস্ত। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাতে কি, লোকজন বেশি দাম দিয়েই কিনছে। না খেয়ে তো আর থাকা যায় না। অনেকে হাহুতাশ করেন গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বলে। আমাদের এখানে একটা গরুর মাংসের দোকান আছে। প্রতিদিন পনের টা গরু জবাই করে। এত মাংস কারা কিনছে?
ছাদে আমার তিনটা গাছ আছে।
আম, লেবু আর পেয়ারা। গত বছর প্রায় ৭/৮ কেজি আম পেয়েছিলাম। আম গুলো খেতে দারুন ছিলো। এবার কপাল খারাপ। আম, লেবু আর পেয়ারা তিনটা গাছ'ই মরে গেছে। গাছের সব পাতা ঝরে গেছে। তিনটা গাছের মৃত্যু আমাকে ভীষন ব্যথিত করেছে। আসলে দোষ আমারই। গত ছয় মাস আমি গাছের কোনো যত্ন নিই নি। গাছের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। অপরাধ বোধ হচ্ছে। একদিন স্বপ্নে দেখলাম- গাছ গুলো আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে। তুমিই আমাদের মেরেছো। খুব বেশি অবহেলা করেছো আমাদের। এমন না যে তুমি ঢাকার বাইরে ছিলে। ছাদে আসতে পারো নাই। তুমি তো রোজ ছাদে উঠেছে সিগারেট খাওয়ার জন্য। আমাদের দিকে একবারও ফিরেও তাকাও নি! কী অন্যায় করেছি আমরা! আমাদের কথা কি করে ভুলে গেলে! তোমাকে শাস্তি পেতে হবে রাজীব নূর। অবশ্যই তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। কি শাস্তি চাও বলো? তাড়াতাড়ি বলো, সময় কম।
স্বপ্নটা ভয়ের না। কিন্তু আমার ভয় লাগলো।
পরের দিন সকালে সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক। তিনটা গাছ কে বাঁচাতে হবে। অন্ততপক্ষে গাছ গুলোকে বাচানোর চেষ্টা করতে হবে। গাছে পানি দেওয়ার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠি। বিকেলেও পানি দেই। আগাছা পরিস্কার করি। গাছ মরে গেছে। এখন পানি দিলেই কি আর না দিলেই কি। কিন্তু টানা তিন মাস গাছের যত্ন নিলাম। নিতে থাকলাম। একদিন দেখি গাছ গুলোকে কেমন যেন মনে হচ্ছে। আগের সেই করুণ রুগ্ন অবস্থা নেই। যত্নের পরিমান আরো বাড়িয়ে দিলাম। মাশাল্লাহ, আল্লাহর রহমতে গাছ প্রান ফিরে পেয়েছে। নতুন পাতা দিয়ে গাছ ভরে গেছে। লেবু গাছে লেবু পর্যন্ত ধরেছে। পেয়ারা গাছে ফুল এসেছে। আম গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। তবে এবছর আম পাবো না। ফল না পাই। গাছ প্রান ফিরে পেয়েছে তাতেই আমি খুশি।
গাছ পালার যত্ন নিতে হয়।
যত্ন নিলে ফল পাওয়া যায়। পেয়ারা গাছে একটা মিষ্টি কুমড়া বা চালি কুমড়া গাছ একাএকা হয়েছে। কয়েকদিন পরপর সাদা সাদা ফুল দিয়ে পেয়ারা গাছ ঢেকে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফুল থেকে ফল হয়নি। হবে নিশ্চয়ই। দেরী হোক যায়নি সময়। ঠিক তেমনি আম গাছে তুলসী গাছ হয়েছে একাএকা। তুলশী গাছ বেশ বড় হয়ে গেছে। যখন গাছে পানি দেই। পাইপ দিয়ে গাছে পানি দেই। ছোট কন্যা ফারাজাকে সাথে করে নিয়ে যাই। বাবাকে গাছে পানি দিতে দেখে সে ভীষন মজা পায়। খিলখিল করে হাসে। কন্যার গায়ে পানির ছিটা পড়লে সে খুশিতে লাফায়। মাঝে মাঝে গাছের পাতার ফাঁকে লুকাতে চেষ্টা করে। যেন এখন তাকে আর দেখা যাবে না। যাই হোক, দীর্ঘদিন ধরে একটা পেঁপে গাছ লাগানোর ইচ্ছা হয়েছে। দুই বস্তা মাটি এনে রেখেছি। কিন্তু ভালো উন্নত মানের পেঁপে গাছের চারা পাচ্ছি না। পেয়ে যাবো। লোক লাগিয়ে রেখেছি।
বাজারে প্রচুর তরমুজ উঠেছে।
দাম খুব বেশি। একটা বড় সাইজের তরমুজ পাঁচ শ' টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। বাসায় ১৩ তেরো জন সদস্য একটা তরমুজে হবে? দুইটা আনলেও কম পড়ে যাবে। আর কয়েকদিন পর আমাদের বাসায় সদস্য সংখ্যা আরো একজন বাড়বে। ছোট ভাইয়ের ছেলে হবে। আব্বা হঠাত করে না মারা গেলে আজ আমাদের সদস্য সংখ্যা হতো পনের জন। আব্বা বেঁচে থাকতে আমার কোনো টেনশন হতো না। আব্বাকে যদি ফোন করে বলতাম, তরমুজ পাঠাও কাউকে দিয়ে। এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় তরমুজ চলে আসতো। যদি ফোন দিয়ে বলতাম- আজ তো হাজী বিরানী খেতে ইচ্ছা করছে- আব্বা লোক দিয়ে বাসায় হাজী বিরানী পাঠিয়ে দিত। যদি বলতাম, ইলিশের মাছের ডিম খেতে ইচ্ছা করছে- ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ নিয়ে আসতো। কোনো দিন আব্বা বিরক্ত হতো না। বরং খুশি হতো। আমাদের বংশে সবার লম্বা হায়াত। আমার দাদা দাদী দীর্ঘিদিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু আব্বা করোনাতে চলে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




