
হ্যাঁ প্রেম করেছি। অস্থির প্রেম করেছি।
তবে আমাদের প্রেম এ যুগের ছেলেমেয়েদের মতোন ছিলো না। আমাদের প্রেমে গভীরতা ছিলো। স্বচ্ছতা ছিলো, সততা ছিলো। সৌন্দর্য ছিলো। লোভ ছিলো না। কামাতুর ভাব ছিলো না। আমরা দুজনকে দুজন কখনও মুখে বলতাম না 'ভালোবাসি'। কিন্তু একজন আর একজনের ভালোবাসাটা অনুভব করতে পারতাম। অনুভবের মাত্রাটা গভীর ছিলো। আসলে ভালোবাসার কথাটা বারবার বলতে হয় না। ভালোবাসা হলো অনুভব করার বিষয়।যাদের ভালোবাসায় গভীরতা নেই, তারাই বারবার ভালোবাসার কথা মুখে বলে।
মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় প্রেমের সময়।
সুরভি যখন আমার পাশে থাকতো নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হতো। তবে আমরা ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রেম করি নাই। প্রেমিক প্রেমিকারা সাধারনত নিরিবিলি জায়গা খুঁজে। কিন্তু আমরা যেতাম ভিড়ের মধ্যে। আমি দুষ্ট প্রেমিকের মতো হাত ধরার সুযোগ খুজতাম না। রিকশায় বসে কোমরে হাত রাখার জন্য আকুলি বিকুলি করতাম না। আমাদের প্রেম ছিলো সহজ সরল সুন্দর পবিত্র। সুরভি দারুন রান্না জানে। সে আমার জন্য নানান রকম খাবার রান্না করে নিয়ে আসতো। আমরা যেতাম জেনিভা ক্যাম্পে। সুরভি লুচি, কাবাব, চাপ খেত। আর আমি সুরভির হাতের রান্না খেতাম। আহ সেই দিন গুলোর কথা এখনও মনে পড়লে ভালো লাগে। আনন্দ হয়।
আমরা যেতাম বৃক্ষ মেলা।
আমরা যেতাম বইমেলায়। আমরা যেতাম বানিজ্য মেলায়। আমরা যেতাম পিঠা উৎসবে। আমরা যেতাম টিএসসি বা চারুকলায় কোনো অনুষ্ঠানে। আমরা যেতাম নিউমার্কেট। আমরা যেতাম কম্পিউটার গার্ডেন সিটি। আমরা যেতাম নীলক্ষেত পুরোনো বইয়ের দোকানে। কোনো দিনও আমরা নিরিবিলি জায়গা খুজতাম না। প্রেম করার সময় আমার মাথায় একটা মুহুর্তের জন্য বাজে চিন্তা আসেনি। তবে আমরা রিকশায় করে খুব ঘুরতাম। আমাদের প্রিয় রাস্তাটা ছিলো মিরপুরের বেড়িবাধ। তূরাগ নদীর পার দিয়ে যেতে কি যে ভালো লাগতো। বাচ্চাদের মতো চকবারর খেতে খেতে আমরা যেতাম। আমাদের একটা পরিচিত রিকশাচালক ছিলো। ফোন দিলেই চলে আসতো।
অন্যসব প্রেমিক প্রেমিকার মতো আমরা ঝগড়া করতাম না।
আমাদের কথাকাটি হতো না। তবে বৃহস্পতিবার আমরা অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলতাম। সুরভিকে কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতাম আমি। সুরভি আমাকে গান শোনাতো। কথা বলতে বলতে একসময় আমরা ঘুমিয়ে যেতাম। দুই তিনবার আমরা একসাথে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। একবার গেলাম বরিশাল, একবার গেলাম নোয়াখালি। আর একবার নিয়ে গেলাম আমাদের গ্রামের বাড়ি। বরিশাল গেলাম কীর্তন খোলা লঞ্চে করে। শীতের সময়। সেবার অনেকে মিলে একসাথে গিয়েছিলাম। নোয়াখালি গেলাম সুরভির বোনের শ্বশুর বাড়ি। আর বিক্রমপুর গেলাম- আমার সব বন্ধুবান্ধব মিলে। সম্ভবত কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে।
সুরভিকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে এলাম।
সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। প্রথম দেখাতেই মা তার গলার চেন খুলে সুরভিকে পরিয়ে দিয়েছিলো। আর আব্বা বলেছিলো- এক কাপ চা বানাও। সুরভি চা বানালো। আব্বা চা খেয়ে মুগ্ধ! আব্বা সেদিন সুরভিকে বলেছিলো- তোমার হাতের চা অসাধারণ। আমি যদি সম্রাট হতাম তাহলে তোমাকে আমার সাম্রাজ্য লিখে দিতাম। যাই হোক, আমার পকেটে কত টাকা আছে, আমি জানি না। সবটাই তোমাকে দিয়ে দিলাম। পরে আমি সুরভিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কত টাকা ছিলো? সুরভি বলল- এগারো হাজার সাত শ' টাকা।
সুরভিকে আমি খুব চমকে দিতাম।
একবার রাত তিনটায় সুরভিকে ফোন করে বললাম, ব্যলকনিতে আসো। সুরভি ব্যলকনিতে এসে দেখে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে দেখে সুরভি ভয়ানক চমকে গিয়েছিলো। একবার দুপুর দুইটায় আমি সুরভিদের বাসায় গিয়ে হাজির। বললাম, ভাত খেতে এসেছি। তখন বাসায় কেউ ছিলো না। আমি টেবিলে ভাত খেতে বসেছি, ঠিক তখন সুরভি বাবা এসে হাজির! একবার সুরভি তার পরিবারের সাথে কক্সবাজার গেছে। সুরভিরা যে হোটেলে উঠেছে, সেই হোটেলে আমি আগে পৌঁছে যাই। আমাকে দেখে সুরভি ভীষন অবাক। চমকে দেওয়ার অভ্যাসটা আমার এখনও আছে। নানান রকম কর্মকান্ড করে সুরভিকে চমকে দেই। সুরভি বলে, একদিন তুমি আমাকে চমকে দিয়েই মেরেই ফেলবে। আমি তোমার চমকের জন্য প্রস্তুত নই। ব্যাপার বুঝ। প্লীজ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ২:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




