somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া

৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

প্রতিটা স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়।
কথা কাটাকাটি হয়। মান অভিমান হয়। স্বামী স্ত্রী রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়ে। অনেক সময় স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়। স্বামীও রাগ করে বাসায় ফিরে না। অথচ একজন যদি এগিয়ে গিয়ে ভালোবেসে হাত ধরে সর‍্যি বলে, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। রাতে না খেয়ে থাকতে হয় না। দুজন মানুষ পাশাপাশি থাকবে অথচ ভালোবাসা থাকবে না- তা কি করে হয়! আপনার স্ত্রী আপনাকে দুটা সন্তান দিয়েছেন, এটা ভেবেও তার অনেক অপরাধ, দোষ আপনি ক্ষমা করে দিতে পারেন। যে স্বামী স্ত্রীর ঘরে কোনো সন্তান নেই, তাদের হাহাকার কি কখনও দেখেছেন? অথচ আপনাদের ঘরে দুটা সন্তান। কিন্তু আপনারা আছেন ঝগড়ায় মেতে। এটা মোটেও ভালো কথা নয়। যান পরিবার নিয়ে সমুদ্র আর পাহাড় থেকে ঘুরে আসুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।

পনের বছর সংসার করলেও ঝগড়া হয়।
বিয়ের বয়স যত বেশি হবে ঝগড়া, কথা কাটাকাটি তত বেশী হবে। এখন কথা হচ্ছে দুজনের মধ্যে ভালোবাসা আছে কি নেই। অনেকে হয়তো ভাববে, ভালোবাসা থাকলে কি আর ঝগড়া হয়! হ্যাঁ ভালোবাসা থাকলেও ঝগড়া হয়। মারামারিও হয়। আবার মিল হয়। আবার ঝগড়া হয়। মারামারি হয়। কথা কাটাকাটি হয়। সংসারে সন্তান থাকলেও ঝগড়া হয়, সন্তান না থাকলে ঝগড়া হয়। এখন স্বামী স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না। আলাদা হওয়া সহজ। একসাথে থাকা, আনন্দ নিয়ে থাকা খুব জরুরী। আনন্দ নিয়ে থাকার চেষ্টা আপনাদের দুজনকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে করে দিবে না। সুন্দরর ভাবে জীবনযাপন করা নির্ভর করছে আপনাদের উপর। আপনারাই পারেন জীবন আনন্দময় করতে। অথবা সব কিছু তছনছ করে দিতে। ভাঙ্গার চেয়ে গড়া উত্তম।

আমার বাবা মা একটা সময় খুব ঝগড়া করতো।
তুমুল ঝগড়া করতো। আব্বা তো রেগে মেগে আলমারি, শোকেস, ইত্যাদি যা যা হাতের কাছে পেতো সব ভেঙ্গে ফেলতো। দুদিন পরে মিস্ত্রি এনে আব্বা আবার আলমারি শোকেস ঠিক করতো। বহু বার এরকম দেখেছি। কিন্তু তাদের ঝগড়ার পরেও দেখেছি, দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা আছে। মা অসুস্থ হলে আব্বা ডাক্তার হাসপাতাল করতো। মন খারাপ করে বসে থাকতো। বিশেষ বিশেষ দিনে নিজে পছন্দ করে আব্বা শাড়ি কিনতো। সেই শাড়ি দেখে মা খুব রাগ করতো। বলতো এটা কোনো শাড়ি হলো? জংলি ছাপা। এরকম শাড়ি আমি জীবনে পরি নাই। শুরু হতো ঝগড়া। আবার ঝগড়া মিটতো। আবার ঝগড়া হতো। ঝগড়া হতো অতি সামান্য সব বিষয় নিয়ে। আমাকে ভাঙ্গা কাপে চা দিয়েছো কেন? চায়ে চিনি দাও নি কেন? ইলিশ মাছ ভেজে রান্না করেছো কেন? বলেছি, পোলাউ রান্না করতে তুমি তেহারি রান্না করেছো কেন? একদম সিলি ব্যাপার নিয়ে তাঁরা বাচ্চাদের মতন ঝগড়া করতো। আজিব!

আপনাদের দীর্ঘদিনের সংসার।
ডিভোর্স বা সেপারেশন কোনো সমাধান নয়। সেপারেশন হয়ে গেলেই যে আনন্দে থাকবেন তা তো নয়। দুটা মানুষ একসাথে থাকলে ঝগড়া বিবাদ হতেই পারে। অফিসে দুই সহকর্মী একসাথে পাশাপাশি বসে কাজ করে। তাদের মধ্যেও ঝগড়া হয়। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া হয়। বোনে বোনে ঝগড়া হয়। মা ছেলে ঝগড়া হয়। মা মেয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়া সারা জগত জুড়েই হয়। ঝগড়া হবে, আবার মিল হবে। দুজন একসঙ্গে বসে চা খাবেন। গল্প করবেন। মন খারাপ হলে একজন আরেকজনের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদবেন। আমরা তো মানুষ। মানুষ তো ফেরেশতা নয়। মানুষের কিছু দোষ ত্রুটি থাকবেই। এসব মেনে নিয়েই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। তবে সংসার জীববনে 'ছাড়' দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলে অশান্তি কম হবে। যত 'ছাড়' দিবেন, সংসারের জন্য তত ভালো হবে। কবি বলেছেন, বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে। মনে রাখবেন, এই দুনিয়া হৃদয়বান মানুষদে জন্য। একটা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। স্বর্ন যত পুড়ে, তত খাটি হয়। ঠিক তেমনি মানুষ যত কষ্ট পায় তত খাটি হয়।

ছেলেমেয়ের সবচেয়ে বড় অশান্তি আর কষ্ট হলো-
বাবা মাকে ঝগড়া করতে দেখা। যেসব ছেলেমেয়ে ছোটবেলা থেকেই দেখে বাবা মা ঝগড়া করছে, কেউ কাউকে সম্মান করছে না, ভালোবাসছে না- সেসব সন্তানের অনেক কষ্ট। তাঁরা আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারে না। এজন্য সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা মায়ের ঝগড়া বন্ধ করতে হবে। নিজের দুঃখ কষ্ট পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ভাবার চেয়ে সন্তানের কথা ভাবতে হবে। সন্তানকে সময় দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে সন্তান যেন আনন্দ নিয়ে বড়। বাবা মায়ের মতো যেন দুঃখ কষ্টের জীবন না পায়। আমার বাবা মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের দিকে চেয়ে বাবা মা ঝগড়া করতো না। আমরা চার ভাই না থাকলে হয়তো আমাদের বাবা মা অনেক আগেই আলাদা হয়ে যেত।

কাজেই দুজন আলাদা না হয়ে চেষ্টা করে দেখুন-
মিলেমিশে থাকা যায় কিনা। যেহেতু পনের বছর পার করতে পেরেছেন। তাহলে আরো পনের বছর পার করতে পারবেন। জীবনে স্বামী স্ত্রীর বহু ঝগড়া দেখেছি। মারামারি দেখেছি। কত কুৎসিত ঝগড়া। কত নোংরা ভাষা। কিন্তু দিন শেষে তাদের মিলে যেতে দেখেছি। দেখেছি তাদের ভালোবাসা। কাজেই মাথা গরম করে ডিভোর্সে যাওয়া ঠিক হবে না। একটা ভুল সিদ্ধান্ত তখন সারা জীবনের কান্না হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই পরিবারকে সময় দিন। পরিবারকে ভালোবাসুন। ছুটির দিনে বেড়াতে যান। দুজনের ভালো লাগা, মন্দ লাগা একসাথে শেয়ার করুণ। দুজন দুজনকে প্রতিজ্ঞা করুণ। কেউ কাউকে কষ্ট দিবেন না। মনের ভিতরে কথা গুলো চেপে না রেখে প্রকাশ করুণ। স্পষ্ট করে বলুন, তোমার এই বিষয় গুলো আমার ভালো লাগে না। আপনার স্বামী বা স্ত্রী যে যা পছন্দ করে না সেটা না করলেই তো হয়। ঝগড়া করে বোকারা। বুদ্ধিমানরা ঝগড়া করে সুন্দর সময় মাটি করে না। ঝগড়া করে দিন শেষে কিছুই পাওয়া যায় না।

আপনারা কি চান আপনাদের বাচ্চাও বড় হয়ে-
আপনাদের মতো ঝগড়া করুক। ভালো না বেসে ঘৃণা করতে শিখুক। বহু লোক তো সংসার করছে। তাঁরা নানান অশান্তির পরও মিলে মিশে আছে। তাঁরা ভালো থাকলে আপনারা কেন পারবেন না? একটা সংসার তিল তিল করে গড়ে উঠে। পনের বছরের একটা সংসার ভেঙ্গে ফেলা সহজ। গড়তে সবাই পারে না। কাজেই সেপারেশনের চিন্তা মাথায় আনবেন না। ভুল গুলো কোথায়, খুঁজে দেখুন। তারপর সেই ভুল গুলো শুধরে নিন। দেরী হোক যায়নি সময়। পনের বছর সংসার জীবনে যখন ঝগড়া আর নানান রকম দ্বন্দ দেখা দিয়েছে। নিজেরা এখন শপথ করুণ আগামী পনের বছর আমরা ঝগড়া করবো না। নো নেভার। মিলেমিশে এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকব। ভালো থাকব। আনন্দে থাকবও। সবাই কে দেখিয়ে দিবো। খুব অসম্ভব কিছু না। মন থেকে সমস্ত ইগো ঝেড়ে ফেলুন। একজন আরেকজনের দোষ ত্রুটি গুলো ক্ষমা করে দেন। ভালোবেসে দুজন দুজকে জড়িয়ে ধরুন। দুটা সন্তানকে আনন্দ নিয়ে বড় করুণ। রাগ, ঘৃণাকে ভালোবাসায় পরিনত করুণ।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:০৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×