
আমার প্রিয় চা দুধ চা।
ঘুম থেকে উঠার পর'ই, বিছানা থেকে নামার আগেই আমার এক কাপ চা খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বাসার মানুষ আমাকে চা দেয় না। বলে ছিঃ বাসী মুখে চা। ইয়াক ইয়াক। অথচ বিয়ের আগে ভেবেছিলাম, চা চাইলেই চা পাবো। এর চেয়ে শান্তির আর কি আছে! বিয়ে করেছি, যখন তখন চা চাইলেই আমি চা পাই না। অথচ বিয়ের আগে সুরভি কথা দিয়েছিলো- রাত দুটায় চা চাইলেও চা করে দিবে। আসলে মানুষ কথা দেয়, কথা না রাখার জন্য। রাত দুটায় যে নিজের হাতে বানিয়ে চা খাবো, সেই উপায়ও নাই। রান্না ঘরে খুটখুট শব্দ হলেই স্ত্রী এবং কন্যার ঘুমের সমস্যা হয়। আমি কাউকে কোনো সমস্যা করতে চাই না। এজন্য চায়ের মগে ঠান্ডা পানি খাই চুমুক দিয়ে-দিয়ে। এবং জোর করে ফিল করি আগুন গরম দুধ চা খাচ্ছি।
কেন জানি রং চা আমার ভালো লাগে না।
জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা লাগলে রঙ চা খাই। বেশি করে আদা, লং, দ্বারুচিনি আর লেবু দিয়ে। সেটা অবশ্য আমি চা হিসেবে খাই না। ওষুধ হিসেবে খেয়ে নিই। আমার পছন্দ দুধ চা। আমার ভাগ্য ভালো আমাদের বাসার লোকজন চা টা ভালো বানায়। এত'ই ভালো বানায় যে কোনো বাসায় অথবা বাইরে দোকান থেকে চা খেয়ে আরাম পাই না। এখন কোথাও সারাদিনের জন্য গেলে বড় ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে যাই। প্রিয় কাপটাও সাথে করে নিয়ে যাই। নোংরা কাপে চা আমি খেতে পারি না। সুরভি চা ভালো বানায়। কিন্তু সে চা খায় না। খায়া না বললে ভুল হবে। বছরে ৪/৫ বার খায়। সুরভিদের বাসার চা টা ভালো হয়। বড় মগের এক মগ খাওয়ার পরও ইচ্ছা করে- আর এক মগ চেয়ে খাই। লজ্জা লাগে বলে চাই না।
কেউ যদি আমাকে এক কাপ ভালো চা খাওয়ায় মনটা খুশিতে ভরে যায়।
সকালের প্রথম চা টা ভালো হলে দেখা যায়- সারাটা দিন ভালো কেটেছে। আর সকালের চা টা যদি খারাপ হয়, তাহলে দেখা যায় সারাটা দিন খারাপ যায়। ইহা সত্য। বহুবার প্রমানিত। সাধারনত মানুষ চা বানানোর সময় আগে কেতলিতে পানি দেয়। পানি বলগ এলে চা পাতা ছেড়ে দেয়। কাপে চিনি দুধ দেওয়া থাকে। ছাকনি দিয়ে ছেকে চা দেওয়া হয়। তারপর চামুচ দিয়ে নাড়তে হয়। কিন্তু আমাদের বাসায় এভাবে চা বানায় না। আমাদের বাসায় এক পাতিল দুধের মধ্যে চা পাতি ছেড়ে দেয়। অনেকক্ষন জ্বাল দেয়। আগুন গরম চা ছাড়া আমি খেতে পারি না। ডাক্তারের পরামর্শে আমি এখন চা খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছি। সারাদিনে ৫ কাপের বেশি খাই না।
আমি চা বানাতে পারি।
কিন্তু আমার চা টা স্বাদ হয় না। হয় দুধ বেশি হবে, না হয় চিনি বেশি হবে। অথবা লিকার কড়া হবে। কতটুকু দুধ, চিনি বা চা পাতি দিতে হবে সেটা আমি বুঝি না। তালগোল পাকিয়ে ফেলি। শেষে সেই চা কেউ খেতে পারে না। দুধ চিনি, চা পাতি নষ্ট হয়। অপচয় করার কারনে নিজের কাছে অপরাধবোধ লাগে। এজন্য চা বানানো ছেড়ে দিয়েছি। যাই হোক, আমি কোথাও গেলে, দোকানদার কে বলি- ভালো চা দাও। প্রয়োজনে এক কাপ চায়ের দাম ত্রিশ টাকা রাখো। রাস্তার পাশের চায়ের দোকান গুলোকে যদি বলি ভালো করে চা বানিয়ে দাও। ওরা করে কি- একগাদা চিনি দিয়ে দেয়। ভালো চা মানে কি একগাদা চিনি দেওয়া? আজিব! চা এত মিষ্টি হয় যে টাঙ্গাইলের চমচমও এত মিষ্টি হয় না। এজন্য আজকাল ওদের আগেই বলে দেই- আমার চায়ে চিনি দিবে না। একটুও না।
একবার এক মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
সেই পোস্তগোলা ব্রীজের কাছে মেয়েটার বাসা। এর আগে মেয়েটার সাথে আমার কখনও দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। যাই হোক, মেয়েটার সাথে কথা শেষ করে আমি ফিরে যাচ্ছি। তখন মেয়েটা বলল, অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যাও। আমি চা খুব ভালো বানাই। আমার হাতের এক কাপ চা খেয়ে দেখো। সারা জীবন মনে রাখবে। আমি বসলাম। কিছুক্ষন পর মেয়েটা এক মগ রঙ চা নিয়ে এলো। রঙ চা দেখেই আমার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো। আমি কি রঙ চা খাই! অভদ্রতা তো আর করতে পারি না। আমি চায়ে চুমুক দিলাম, আশ্চর্য চা টা অসাধারন হয়েছে। এক চুমুক দিয়েই মুড ভালো হয়ে গেলো। সারা দিনের ক্লান্তি চলে গেলো। যেন চা নয়, ম্যাজিক। হ্যাঁ আমি স্বীকার করি- সেই মেয়েটার মতো বানানো চা আর কোথাও খাইনি। চায়ের জন্যই মেয়েটাকে আজও মনে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




