
প্রিয় কন্যা আমার-
বাইরে গেলেই তুমি ভীষন খুশি হও। আমার মতোই চারপাশ খুব মন দিয়ে দেখো। গতকাল তোমাকে টিকা দিতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিলেন, পনের মাস যেদিন শেষ হবে সেদিন এই টিকা দিতে হবে। নার্স খুব সুন্দর ভাবে টিকা দিয়েছেন। তুমি ব্যথা পাওনি। সবচেয়ে বড় কথা আমি সামনে ছিলাম। আমাকে দেখলে তুমি ভরসা পাও। সাহস পাও। এরকমটা আমার সাথেও হতো। আমার বাবা সাথে থাকলে আমিও ভরসা পেতাম, সাহস পেতাম। শক্তি পেতাম। আমার বাবা আজ বেঁচে নেই। এখন আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। তোমার জন্মের দুই সপ্তাহ আগে আব্বা হঠাত মারা গেলো। অথচ ডাক্তার বলেছিলেন, সকালে আব্বাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সকালেই খবর এলো আব্বা মারা গেছে!
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
গতকাল রাতের কথা বলি- তুমি ঘুমিয়েছিলো ঠিক রাত বারোটায়। রাত দুটায় তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। এরপর আর তোমার ঘুম আসে না। দেখতে দেখতে রাত তিনটা বেজে গেলো। আমিও সজাগ, তোমার মা-ও সজাগ। তুমি এ ঘর থেকে ওই ঘরে যাচ্ছো, ঐ ঘর থেকে এ ঘর আসছো। এদিকে তোমার মা চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। আমি বললাম, সুরভি তুমি ঘুমিয়ে যাও। আমি আছি। যাই হোক, তোমাকে আপেল খেতে দিলাম। তুমি আপেল কে বলো আপা। সেই আপা তুমি প্রায় অর্ধেকটা খেয়ে ফেললে। তারপর রাত সাড়ে তিনটায় তোমাকে একটা ডিম সিদ্ধ করে দিলাম। সেই ডিম অর্ধেকটা খেলে। ভোর পাঁচ টায় তুমি ঘুমালে। আমিও ঘুমালাম। তুমি ষোল মাসে পা দিয়েছো। এই ষোল মাস তুমি রাজকীয় জীবনযাপন করেছো। কোনো অভাব তোমাকে সস্পর্শ করেনি। কোনো কিছুর অভাব তোমার হয়নি। তোমার খাবার দিয়ে সব সময় ফ্রিজ ভরা ছিলো। প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই ছিলো।
প্রিয় কন্যা ফাইহা,
তুমি আমাকে কিছুক্ষন না দেখলেই বাবা বাবা বলে ডাকতেই থাকো। আমি যখন বাইরে থাকি তোমার মা আমাকে ফোন দেয়। বলে, তাড়াতাড়ি আসো। মেয়ে বাবা বাবা সমানে ডেকেই যাচ্ছে। এমন কি তুমি ঘুমের মধ্যেও বাবা বাবা বলে ডাকো। তোমার মা সারাদিন তোমাকে রাখে। খাওয়ায়, গোছল করায়। ঘুম পাড়ায়। যত্ন নেয়। অথচ তুমি সারাদিন বাবা বাবা করো! আমাদের এলাকায় একটা মেয়ে আছে, মেয়েটা খুব সুন্দরী। একদিন এই মেয়েটা তার বাবাকে ডালের চামচ দিয়ে কপালে মেরেছে। বাবার কপাল ফুলে আলু হয়ে গেছে। ঘটনাটা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে। একজন কন্যা তার বাবার গায়ে কিভাবে হাত তোলে? সেই বাবার অন্যায় ছিলো- মেয়েটা বাইরে যেতে চেয়েছিলো। বাবা যেতে দেয়নি। কারন মেয়েটা বাইরে একটা দুষ্ট ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায়।
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
তোমার নামটা কেউ সঠিক ভাবে বলে না। ফারাজা কে বলে, ফারহানা, ফারিহা বা ফারজানা। ফাইহা কে বলে ফারিয়া। আজিব ব্যাপার। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লেখার সময় ফারাজা বললে সেও লিখে ফারহানা বা ফারজানা। ফাইহা বললে লেখে ফারিয়া। অথচ তোমার নামটা কি সুন্দর। ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)। এই নাম রেখেছেন তোমার বড় চাচা। আবার কেউ যদি জিজ্ঞেস করে বাচ্চার নাম কি? আমি বলি- ফারাজা। লোকে বলে ছেলে? আজিব মানুষের চিন্তা ভাবনা। আমি আল্লাহকে বলেছি, আমার একটা কন্যা চাই। আল্লাহ আমাকে একটা কন্যা দান করেছেন। আমি বলেছি, হে প্রভু পরীর মতো একটা মেয়ে চাই। আল্লাহ আমাকে তাই দিয়েছেন। এবং আমি সীমাহীন খুশি। এখন আমি আল্লাহর কাছে আর কিচ্ছু চাই না। কিচ্ছু না। ছেলে বাচ্চা আমার পছন্দ না। ছেলে গুলো বড় হয়ে বদ হয়। মেয়ে সন্তান মানেই আনন্দ। পুরো ঘর আলো। আলোকিত।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
আজ রমজান মাসের প্রথম দিন। প্রথম রোজা। গত বছর তুমি ইফতারের সময় কিছু খেতে পারো নি। তোমার দাঁত উঠেনি। তোমাকে শুইয়ে রেখেছিলাম। বসতেও পারতে না। এ বছর তুমি আমাদের সাথে টেবিলে বসে খাবে। আজ আমরা বাপ বেটি মিলে একসাথে ইফতারী করবো। কথাটা ভুল বললাম, বাপ বেটি না পরিবারের সবাই মিলেই ইফতারী করবো। আইরিন নামের একটা মেয়ে আমাদের বাসায় থাকতে এসেছে। দরিদ্র পরিবারের একটা মেয়ে। মেয়েটার বয়স ১৬/১৭ হবে। মেয়েটা ভালো। সব কাজ জানে। মাছ কাটতে পারে। রান্নাও করতে পারে। মেয়েটার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। মেয়েটা তার নানীর সাথে ভৈরব থাকে। আবার মেয়েটারা বাবা মা থাকে হবিগঞ্জ। যাই হোক, আইরিন কে বলেছি, তুমি নিজের বাড়ির মতো থাকো। যা মন চায় নিজে নিয়ে খাবে। যখন টিভি দেখতে মন চাইবে দেখবে। কোনো কিছুতেই কোনো বাঁধা নিষেধ নেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




