
বাংলাদেশ হলো নদীর দেশ।
নদী ছাড়াও আছে খাল, বিল, পুকুর। যেহেতু ঢাকা শহরে থাকি তাই টাটকা মাছ খুব একটা পাই না। ঢাকা শহরে শুধু চাষের মাছ পাওয়া যায়। চাষের মাছ খেতে খেতে বিরক্তি ধরে গেছে। বাজারে গেলেই দেখা যায়- রুই মাছ, শিং মাছ, পাবদা মাছ। পাঙ্গাস মাছ, তেলাপিয়া মাছ, টেংরা মাছ। সব চাষের মাছ। এ মাছ গুলো যদি নদীর হতো- তাহলে খেতে দারুন লাগতো। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ। দেশের মানুষজন আগ্রহ নিয়ে চাষের মাছ'ই খাচ্ছে। চাষের মাছ হলে কি হবে, অনেকে দাম।
তবে চাষের মাছ হলেও যদি ভালো করে রান্না করা যায়,
তাহলে খেতে ভালৈ লাগে। মাছ মজা নদীর এবং সমুদ্রের। গ্রামে গেলে মোটামোটি দেশী মাছ পাওয়া যায়। দাম অবশ্য খুব বেশি। বেশি হলেও ভালো, খেয়ে তৃপ্তি লাগে। মন ভরে। খানা খাদ্যে আমি খুব বাছাবাছি করি। হাতেকাছে যা পাই, খাই না। আমার প্রিয় মাছ হলো- ইলিশ। ইলিশ মাছের চেয়ে বেশি ভালো লাগে ইলিশ মাছের ডিম। আচ্ছা, দোজকে কি ইলিশ মাছের ডিম পাওয়া যাবে? আসলে নদীর যে কোনো মাছ'ই আমার প্রিয়। আর সমুদ্রের কাইকা মাছটা ভালো লাগে। নদীর কাইকাও মজা। সমুদ্রের মাছ খুব উপকারী।
পদ্মানদী এবং কীর্তন খোলা নদীর মাছের স্বাদ বেশি।
আবার কয়েকটা ছোট নদী আছে, যেমন বারাশিয়া এবং সন্ধ্যা। এই নদীর মাছ গুলো খুব বেশি স্বাদ। একবার বাগেরহাট গিয়েছিলাম, একদম অজপাড়া গা, সেখানে আমার চোখের সামনে লম্বা একটা খাল থেকে পাঁচ মিশালী মাছ ধরলো। সে মাছ গুলো আমাকে ভেজে দিলো। আহ সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। আরেকবার, ফরিদপুরের সালতা গ্রামে বিলের মাছ খেয়েছিলাম। একদম টাটকা। দারুন স্বাদ। আর আমাদের আড়ই বিলের মাছ তো বিখ্যাত। আড়'ই বিলের মাছ না খেলে জীবন বৃথা। বায়িং মাছটা আমি খাই না। সাপের মতো দেখতে। ওয়াক। ওয়াক।
তবে ৮০ বা ৯০ এঁর দশকে বাংলাদেশের মাছ গুলো খেয়ে আরাম ছিলো।
মজা ছিলো। এখন কেন জানি মাছ খেয়ে আরাম পাওয়া যায় না। কোনো স্বাদ নাই। এই আমি বাসার জন্য ৩/৪ কেজি ওজনের রুই মাছ কিনি। কিন্তু কোনো স্বাদ নেই। ইলিশ মাছ কিনি এক কেজি ওজনের, কোনো স্বাদ নেই। আজিব ব্যাপার। ছোটবেলায় মা ইলীশ রান্না করতো, আহা কি স্বাদ ছিলো। এখন ইলিশ মাছ খেয়ে আরাম পাই না। কোনো স্বাদ নাই। মানুষ যেমন মন্দ হয়ে গেছে, মাছও গুলো মন্দ হয়ে গেছে। দুঃখ লাগে। ফার্ম এঁর মূরগীও খেতেও আরাম লাগে না। দেশী মূরগী বেস্ট। দেশী মোরগের স্বাদের কাছে সোনালী বা কক কিছুই না।
শুনেছি, যারা চাষের মাছ চাষ করে, তাঁরা মাছ গুলোকে ভালো ফিড খাওয়ায় না।
কসাইয়ের দোকান থেকে গরুর তেল চর্বি হাবিজাবি নিয়ে যায়। মাছের ঘেরে ছেড়ে দেয়। মাছ সেগুলো খায়। এমন দুষ্ট মাছ ব্যবসায়ী লোকও আছে, মরা কুকুর, বিড়াল মাছকে খাওয়ায়। আমার ছোট ভাইয়ের বউ পাঙ্গাস মাছ খায় না। জিজ্ঞেস করলাম কেন খাও না? বলল, একবার তার বাবা বাজার থেকে বড় এক পাঙ্গাস মাছ এনেছিলো। সে পাঙ্গাস মাছ কাটার পর দেখা গেলো মাছের পেটে একটা বড় আস্তো ইদুর। এইসব শোনার পর কি চাষের মাছ খেতে ইচ্ছা করে। ওয়াক, ওয়াক।
একবার এক গ্রামে বেড়াতে গিয়েছি।
তাঁরা দুপুরে আমাকে দেশী শিং মাছ খাওয়ালো। দারুন মাছ। বড় বড়। পেটে ডিম ভরতি। খেয়ে বেশ আরাম পেলাম। মনে মনে ভাবলাম ঢাকায় তো এরকম দেশী শিং মাছ পাওয়া যায় না। যাই হোক, কথায় কথায় বললাম, এত সুন্দর শিং মাছ কোথায় পেলেন? বলল, এগুলো আমাদের বাড়ির মাছ। আমাদের টয়লেটের নীচে শিং মাছের অভাব নেই। মাছ গুলো প্রচুর খাবার পায়। খেয়ে খেয়ে মোটা হয়। দেখলাম, বাঁশ দিয়ে টয়লেট বানানো হয়েছে, নীচে পায়খানা গুলো জমে আছে। সেই পায়খানায় মোটা মোটা শিং মাছ কিলবিল করছে। বমি করলাম। করতেই থাকলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




