
ইফতারীর পর আমি হাঁটতে বের হই।
খাবো না, খাবো না করেও খুব বেশি ইফতারী খেয়ে ফেলি আমি। তারপর হাঁসফাঁস লাগে। টানা এক দেড় ঘন্টা হাঁটি আমি। হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন এলাকায় চলে যাই। সিপাইবাগ যাই, মেরিদিয়া বাজার যাই। তালতলা মার্কেটে যাই। শান্তিনগর যাই। কমলাপুর যাই। ভালো'ই লাগে। অনেক কিছু দেখি। অনেক কিছু ভাবি। কিছু কিছু এলাকা গুলোর গলির বড় অদ্ভুত নাম হয়। যেমন- হাড় ভাঙ্গা মোড়, নয়া পাড়া, বউ বাজার, নিরব গলি, জোড়া খাম্বা, তিন খাম্বা, জিনজিরা ইত্যাদি। এই নাম গুলো কাগজ কলমে নাই। মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। এবং এই গলি গুলো ব্যাপক জনপ্রিয়।
একদিন খিলগা'র দিকে হাঁটতে গেলাম।
দেখি এক চিপা গলির মধ্যে এক বুড়ো লোক পুরান বই আর পত্রপত্রিকা বিক্রি করছে। মনে হয় না কেউ এখান থেকে বই বা পত্রপত্রিকা কিনে। আমার চোখে একটা বই ধরা পড়লো। বইটার নাম 'প্রথম ভালোবাসা ভুলা যায় না'। লেখক নূরজাহান শীলা। অতি সাধারণ প্রচ্ছদ। দুই ফর্মার বই। বইয়ের দাম বেশি না। মাত্র দশ টাকা। যেহেতু পুরান বই। একটা সিগারেটের দাম পনের টাকা। সেই তুলনায় একটা বই মাত্র দশ টাকা! আমি বিশ টাকা দিয়ে বইটা কিনব। বুড়ো বিক্রেতা আমাকে বোকা ভাবলো। যাই হোক, পকেটে হাত দিয়ে দেখি টাকা নাই। বুড়ো কে বুললাম, আজ না আগামীকাল এসে বইটা নিয়ে যাবো। পকেটে টাকা না থাকলেও পরিচিত চায়ের দোকান থেকে চা সিগারেট খাওয়া যায়। বই কেনা যায় না।
পরের দিন আবার গেলাম।
'প্রথম ভালবাসা ভুলা যায় না' সেই আগের জায়গায় সাজানো। আমি বিশ টাকা দিয়ে বইটা কিনলাম। আমি জানি অতি সস্তা একটা বই। এই বই পড়া মানে সময়ের অপচয় করা। ফালতু লেখা, যা এক পাতা পড়ার পর মেজাজ খারাপ হবে। রাতের খাবার খেয়ে, বইটা হাতে নিলাম। দেখি, নূরজাহান শীলা কি লিখেছেন। আমি বইটা না পড়েই বুঝতে পেরেছি, এই বইয়ের লেখক নূরহাজার শীলা না। যাই হোক, প্রথম পাতা উলটাতেই- ছোট কন্যা এসে কোলে বসে থাকলো। বইটা পড়া আর হলো না। সেহেরি খেয়ে বইটা হাতে নিলাম। আমি রোজা না রাখলে সেহেরি খাই। সেহেরি এবং ইফতার সময় মতো করলেও সোয়াব আছে। সোয়াবেরর দরকার আছে। একটু একটু করে সোয়াব জমতে জমতে পাহাড় সমান হবে। পাপ কাটা যাবে। বেহেশত যাওয়ার পথ কিছুটা সহজ হবে।
বইটা পরে শেষ করলাম।
ছোট বই। মনে হলো এই বইটা আমি আগে পড়েছি। হ্যাঁ পড়েছি। তখন বইটার নাম ছিলো 'বোরকা পড়া সেই মেয়েটি'। একই কাহিনী। তাহলে বইটার দুই নাম কেন? বইয়ের কাহিনী এই রকমঃ এই বইয়ের নায়ক, নায়িকা একই গ্রামে থাকে। একই স্কুলে পড়ে। নায়করা হত দরিদ্র। নায়কের বাবা কৃষক। তাও অন্যের জমিতে চাষ করে। নায়িকারা ধনী। বিরাট ধনী। কিন্তু ধনী আর গরীবের মাঝে ভালোবাসা হয়ে যায়। এবং তা পুরো গ্রাম জানাজানি হয়ে যায়া। নায়িকার বাবা নায়ককে মারে। খুব মারে। মেরে লাথথি দিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। তারপর নায়িকাকে শহরে পাঠিয়ে দেয়। শেষমেশ নায়ক অনেক কষ্ট করে বড় হয়। লেখাপড়া শেষ করে। তার জীবনে নতুন প্রেম ভালোবাসা হয়। কিন্তু সে তার প্রথম প্রেম ভালোবাসার কথা ভুলতে পারে না। বারবার মনে পড়ে। নায়ক কাঁদে।
সেহেরি খেয়ে যখন বইটা পড়ছি-
তখন হঠাত সুরভি এলো। বলল, ছিঃ তোমারা এত অধপতন হয়েছে! এরকম বই পড়ছো! তোমার রুচি এত নীচে নামলো কেন? তুমি তো এরকম ছিলে না। আমি কিছু বললাম, না। চুপ করে থাকলাম। কি বলব? কি বলার আছে আমার? আমি বলাম, নামাজ শেষ করে এক কাপ চা দিয়ে যাও। তারপর তুমি আরাম করে ঘুমাও। সুরভি যায় না। চোখ বড় করে আমার দিকে আছে। বললাম, বইটা তুমি পড়েছো? না পড়ে বুঝলে কি করে এটা ভালো বই না। যে লিখেছে, তার কি কষ্ট হয়নি লিখতে? তোমার কাছে হয়তো এই বইয়ের দাম নেই। কিন্তু যে লিখেছে ভালোবেসেই লিখেছে। সুরভি বলল, বক বক বন্ধ করো। বেহুদা প্যাঁচাল বেশি করো তুমি। আমি বই পড়ায় মন দিলাম। স্ত্রী লোকের সব কথা কানে নিতে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




