
সুরভি বলল 'চাল' নেই।
আমি খুবই অবাক হলাম! মেজাজও কিছুটা গরম হলো। আমি নিজে বাজারে গিয়ে চারদিন আগে এক বস্তা চাল কিনেছি। কাটারী ভোগ। আগে মিনিকেট খেতাম। এখন কাটারী ভোগ খাই। যাইহোক, সুরভিকে বললাম, এক বস্তা চাল এনেছি। একমাসের চাল এনেছি। হেসেখেলে একমাস হয়ে যাওয়ার কথা। তুমি বলছো চাল নেই! সুরভি বলল, এমাসে তুমি চাল আনো নাই। আমি বললাম, মাসের অন্যান্য বাজারের সাথে এক বস্তা চাল আমি কিনেছি। সুরভি বলল, তাহলে চাল কোথায়? আমি ভাবতে শুরু করলাম- চাল কোথায়? চাল গেলে কই? এক বস্তা চাল! বাজারে যার কাছ থেকে চাল কিনি তাকে ফোন দিলাম। সে বলল, আপনি চালের টাকা দিয়ে গেছেন কিন্তু চাল নেননি। মনে মনে বললাম, হায় কপাল!
পরীকে নিয়ে হাঁটে গেলাম।
প্রতি বছরই তাকে নিয়ে একবার হাঁটে যাই। বাসার কাছেই হাঁট বসে। হেঁটে যেতে ১০/১৫ মিনিট সময় লাগে। পুরো এলাকা গরু দিয়ে ভরে গেছে। বাজারের মাঠ, অলি-গলি কিচ্ছু বাদ নেই। হাঁটা যায়না এমন অবস্থা। প্রচুর গরু। তবে দাম অনেক। একটা সামান্য বাছুরের দাম চাচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা। ৩/৪ বছর আগেও একটা বাছুর ৩৫/৪০ হাজার টাকা দিয়ে পাওয়া যেত। গরু বিক্রেতাদের সাথে কথা বললাম। বেশির ভাগ গরু এসেছে জামালপুর, সিরাজগঞ্জ আর ঝিনাইদহ থেকে। একটা মাঝারি সাইজের গরুর দাম দেড় লাখ টাকা। এবার একা একটা গরু কোরবানী দিতে পারবো না। ভাগে দিতে হবে। অবস্থা বেগতিক। ভাগের জিনিস আমার কোনো কালেই পছন্দ না।
হাঁটের কারনে পুরো এলাকা জমজমাট হয়ে গেছে।
দিনরাত ২৪ ঘন্টা মাইক বেজেই চলেছে। এবার মনে হয় ইজারাদার মাইক গতবারের চেয়ে বেশী লাগিয়েছে। সারাক্ষণ মাইকে একটা গানই বাজতে থাকে- 'কোরবানী কোরবানী আল্লাহ কো পেয়ারী হে কোরবানী'। মাঝে মাঝে গান থামিয়ে একজন বিকট গলায় বলে, হাসলি ছাড়া যেন কোনো গরু বাইরে না যায়। ভালো করে তারিখ চেক করে দেখবেন। তারপর কাগজটি ছিড়ে দিবেন। এরপর কেউ একজন মাইকে বলে, 'পশু ডাক্তার রফিক। রফিক। রফিক ভাই আপনি ৩ নম্বর গেটের কাছে যান'। 'পল্টন থেকে আগত মন্টু। মন্টু তুমি যেখানেই থাকো না কেন ১ নং গেটের কাছে আসো। তোমার জন্য তোমার মামা অপেক্ষা করছে। মন্টু।
আমি কন্যাকে নিয়ে হাঁট ঘুরে ঘুরে দেখছি।
কন্যা শুধু বলছে- বাসায় চলো বাবা। বাসায় চলো। আমার পড়া আছে। সাথে ছোট ভাইয়ের ছেলে আরিশও আছে। সে খুব মজা পাচ্ছে। তার সাহস বেশি সে হাত দিয়ে গরু ধরে দেখছে। মাইকে এখন বলছে, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি শামসু দক্ষিন দিকে লাইট জ্বলছে না কেন? শামসু। শামসু। দক্ষিন দিকে যাও। দেখো কি হয়েছে। আমরা তিন জন আইসক্রিম খাচ্ছি। তিনজন না দুজন। পরী আইসক্রীম খাচ্ছে না। সে নাকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে, এই হাঁটে ভিড়ের মধ্যে আইসক্রীম খেতে পারবে না। মরে গেলেও পারবে না। অগত্যা আমরা হাঁট থেকে বের হলাম। হাঁটে প্রবেশ মুখে বিশাল গেট করছে। বিয়ের বাড়ির মতোন গেট। আবার লাইটিংও করেছে।
রাজশাহী থেকে ২৫ কেজি আম এনেছি।
হাড়িভাঙ্গা আম। আম গুলো ভালো হয়নি। খরচও বেশী পড়েছে। এরচেয়ে ঢাকাতে ভালো আম পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা- নিজের হাতে বেছে নেওয়া যায়। আমার পছন্দ হিমসাগর। লিচুর মতোন হিমসাগর আমটা খুবই অল্প সময় থাকে। সুরভি হাড়িভাঙ্গা আমটা পছন্দ করে। এদিকে আমার ছোট কন্যার পছন্দ আম্রপালি। আবার অর্ডার করলাম ২৫ কেজি। ২৫ কেজি থেকে ৩ কেজি আম প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। মনে হয় গরমে নষ্ট হয়েছে। ইদানিং আমি আম খাওয়ার একটা নতুন স্টাইল আবিস্কার করেছি। আম ফ্রিজে রাখি। অনেক ঠান্ডা হয়। তারপর সেই ঠান্ডা আম খাই। মনে হয় যেন আইসক্রিম খাচ্ছি। ফিলিং গুড।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




