
ছবিঃ গুগল।
প্রথমে বলি আমি বই পড়া কিভাবে শিখলাম।
আমার অনেক গুলো খালাতো ভাইবোন। আমাদের পাশাপাশি বাসা। তাদের বাসায় অনেক বই। খালাতো ভাইবোনদের দেখি তাঁরা সারাদিন বই পড়ছে। তাদের আলমারি ভরা বই। আমার খালাতো ভাইয়ের সাথে আমার খুব ভাব। ভাইকে দেখি, খাওয়ার সময় বই পড়ছে, এমন কি ওয়াশ রুমে গেলেও বই পড়ে। বই পড়ে আর হাসে। আমি ভীষন অবাক হই। লেখাপড়া আমার ভালো লাগে না। আর আমার খালাতো ভাইবোন সারাদিন বই পড়ে। আমি ক্লাস এইট- নাইনে থাকার সময় গল্প উপন্যাস পড়তে চেষ্টা করলাম। একদম ভালো লাগে না। মজা পাই না। আরাম পাই না। আনন্দ পাই না।
মেট্রিক পরীক্ষা দিলাম।
হাতে অনেক সময়। আমাদের সময় রেজাল্ট দিতে অনেক সময় নিতো। কি করি? এত সময়! খালাতো ভাইয়ের বাসায় বসে আছি। আলমারি থেকে একটা বই বের করলাম। হুমায়ূন আহমেদের 'নবনী' বইটা। প্রেমের উপন্যাস। পড়তে শুরু করলাম। একটানা পড়ে বইটা শেষ করলাম। এরপর আরেকটা বই নিলাম 'ছায়াসঙ্গী'। সেটাও পড়ে ফেললাম। এভাবে হুমায়ূন আহমেদ পুরো পড়ে ফেললাম। হিমু পড়ে তো কেমন পাগল পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। যত পড়ি, তত ভালো লাগে। মিসির আলি, শুভ্র। আমার নেশা লেগে গেলো। এরপর মুহম্মদ জাফর ইকবাল পড়া শুরু করলাম। জাফর স্যারের প্রথম যে বইটা পড়েছি সেটার নাম 'ছেলেমানুষী'। ভয়াবহ এক বই। অদ্ভুত একটা বই। বেশ ভয় লেগেছিলো। এরপর পড়লাম 'প্রেত'।
এইভাবে আমার পড়া শুরু হলো।
কেমন নেশা লেগে গেলো। এরপর ধরলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কি সুন্দর সহজ সরল করে লিখেন সুনীল! 'একা এবং কয়েকজন', 'ছবির দেশে কবিতার দেশে', সোনালী দুঃখ। এরপর শীর্ষেন্দু পড়া শুরু করলাম। 'দূরবীন', চক্র, পার্থিব, মানব জমিন। দারুন লাগে পড়তে। গ্রেট লেখক। সমানে পড়ে চলেছি। একদিন শুরু করলাম সমরেশ মজুমদার। কালবেলা, কালপুরুষ, উত্তারাধিকার। গর্ভধারিনী। বই পড়ে পড়ে দারুন আনন্দময় সময় পার করতে থাকলাম। বাংলা সাহিত্য মোটামোটি পড়লাম। এরপর ইচ্ছা করলো বিশ্বসাহিত্য পড়তে। শুরু করলাম বিদেশী লেখকদের বই। অন্য একটা ভুবন। অন্য রকম স্বাদ। বই পড়তে পড়তে একদিন অনুভব করলাম- বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু মানুষের আর হতে পারে না।
সেই থেকে বই পড়তে শুরু করলাম।
সেই অভ্যাস আজও বদলায় নি। কোনোদিন বদলাবেও না। বই পড়ার আনন্দ যে পেয়েছে সে জানে। বইয়ের ভুবন আনন্দময়। জটিলতা্ কুটিলতা মুক্ত। আমি মৃত্যুর আগ পর্যযন্ত বই পড়ে যাবো। সারাদিন যতই ব্যস্ত থাকি, প্রতিদিন আমি কিছু না কিছু পড়ি। না পড়লে ভালো লাগে না। ঘুম আসে না। দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আমার একটা অভ্যাস, ভালো না মন্দ অভ্যাস সেটা জানি না। আমি প্রতিটা বই ২/৩ বার করে পড়ি। এজন্য আমি বইয়ের কাহিনী গুলো সহজে ভুলি না। কলকাতার লেখকরা সাধারণত অনেক মোটা বই লিখেন। সেসব মোটা বই গুলোও আমি তিনবার করে পড়ি। আমি মনে করি ভালো বই গুলো ২/৩ বার করেই পড়া উচিৎ। মানুষ একা হতে পারে কিন্তু একটা বই হাতে থাকা মানে শব্দমূখর।
হুমায়ূন আহমেদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল আপন দুই ভাই।
দুজনের বই'ই ভালো লাগে। হুমায়ূন আহমেদের সমস্ত বই আমার পড়া। প্রতিটা বই ২/৩ বার করে পড়া। জাফর স্যারের সাইন্স ফিকশন বই গুলো ছাড়া তার সব বই আমার পড়া। জাফর স্যারের 'কাচ সমুদ্র' বইটা আমার ভীষন পছন্দ। আর বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে এমন একজন লেখক হচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ। যার তুলনা হয় না। যারা হুমায়ূন আহমেদকে মন্দ কথা বলে, তাঁরা অদক্ষ ও অযোগ্য। হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখক বাংলাদেশে আর একজন নেই। যেদিন শুনলাম হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন। আমার ভীষন কষ্ট হয়েছে। মনের দুঃখে আমি টানা ৪৮ ঘন্টা না খেয়ে ছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




