
ডিম ভরতা খেতে ইচ্ছা করছে অনেকদিন ধরে।
ডিম ভরতার সাথে গরম গরম সাদা ভাত। বাসায় মাংস রান্না করছে, মাছ রান্না করেছে। গরুর মাংস খেতে খতে আমি বিরক্ত। সুরভিদের বাসা থেকে ১৩ কেজি মাংস পাঠিয়েছে। সেই কোরবানীর ঈদের দিন থেকে শুধু মাংস আর মাংস। গরু না হলে মূরগী। প্রায় প্রতিদিনই মাংস রান্না হচ্ছে। কোনো না কোনো গেস্ট প্রতিদিনই আসছে। গতকাল রাতে খেতে বসে দেখি, গরুর মাংস। আর ইলিশ মাছ রান্না করেছে। অথচ আমার খেতে ইচ্ছা করছে ডিম ভরতা। সুরভিকে বললাম- মাছ, মাংস আমি খাবো না। দয়া করে আমাকে ডিম ভর্তা করে দাও। সুরভি খুব সুন্দর করে ডিম ভরতা করে দিলো। প্রথমে একটা পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাটলো। একটা শুকনা মরিচ পুড়লো। তারপর সরিষার তেল, পোড়া মরিচ, লবন আর ডিম দিয়ে ভরতা তৈরি করা হলো।
এক আমেরিকান এসেছে আমাদের বাসায়।
আমার ভাগ্নী আমেরিকা গিয়েছিলো লেখাপড়া করতে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলল। ছেলেটার নাম জন। জন বাংলাদেশে ৬ মাস থাকবে। আগামী মাসে ভাগ্নীর গায়ে হলুদ, বিয়ে হবে খুব ধূমধাম করে। শপিং চলছে পুরোদমে। জন প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় আসে। হাসি খুশি একটা ছেলে। বয়স ২৫ এর বেশি হবে না। তার লেখাপড়া এখনো শেষ হয়নি। তার ইচ্ছা সে আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগে চাকরী করবে। জন এর বাবা মা মেক্সিকোতে থাকে। তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একদিন জনের সাথে কথা বলেন। জন গরম একেবারে সহ্য করতে পারে না। লোডশেডিং হলো- দেখি জন গরমে ছটফট করছে। তার গায়ে রেশ উঠে যায়। তখন ভাগ্নী জনের গায়ে পাউডার দিয়ে দেয়। আমার ভাগ্নী আমাকে ছোটবেলা থেকেই 'পি মামা' বলে ডাকে। পি হচ্ছে প্রিয়। জনও আমাকে পি মামা বলে ডাকে।
সেদিন আকাশ মেঘলা ছিলো।
যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে এমন অবস্থা। গরম কিছুটা কম। আমি জনকে নিয়ে বাইরে গেলাম। আমার ইচ্ছা হলো- ঢাকা শহরটা ঘুরে জনকে দেখাবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখালাম। শহীদ মিনার দেখালাম। নিউ মার্কেট দেখালাম। হাইকোর্ট দেখালাম। রাজারবাগ পুলিশ লাইস দেখালাম। জন প্রচুর প্রশ্ন করে। এত দ্রুত কথা বলে, তার কথা বুঝতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়। এলিফেন্ট রোডে আমাদের গাড়ি সিগনালে পড়েছে। এমন সময় ভিক্ষুক এলো। আমি বললাম, যাও যাও। এখন না। জন বিষয়টা খুব খেয়াল করলো। এরপর থেকে ভিক্ষুক দেখলেই জন বলে - 'যাও' 'যাও'। আমাদের বাসার সবাই জনকে খুব পছন্দ করেছে। জনও আমাদের সকলে খুব পছন্দ করেছে। আমার মা জন কে খুব পছন্দ করেছে। ঈদের দিন জন মাকে সালাম করেছে। মা জনকে তিন হাজার টাকা সালামি দিয়েছে।
গতকাল বিকেলে জন বাসায় এলো।
তখন বাসায় কেউ ছিলো না। সুরভি গিয়েছে নিউ মার্কেট। প্রতিমাসে দুইবার সে নিউ মার্কেট যাবেই। হাবিজাবি জিনিস কিনবে। যাইহোক, জনকে বললাম তুমি চা খাবে না কফি? জন বলল ছা। জন চা বলতে পারে না। বলে ছা। চা আর নুডুলস তৈরি করে জনকে দিলাম। সে খুব আরাম করে খেলো। এরপর শশা কুচি কুচি করে লবন দিয়ে মেখে দিলাম একবাটি। খুব আয়েশ করে খেলো। আমি বললাম, চলো- রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসি। রাস্তার প্রচুর মানুষ দেখে সে বিরক্ত। ফুটপাত দিয়েও আরাম করে হাঁটা যায় না। জন বলল- বাসায় চলো। আমি বললাম, বাসায় যাওয়ার আগে আসো দুজনে মিলে চা খাই। জন মাথা নাড়ল। বলল- ইয়েসস ইয়েস। এক আমেরিকান ঢাকার নোংরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে!
প্রতিদিন এক ঘন্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।
বিদ্যুৎ না থাকলে আমি বেলকনিতে বসে থাকি। আমার ব্যলকনি থেকে অনেকখানি রাস্তা দেখা যায়। অনেক গুলো বাড়ি দেখা যায়। মসজিদের মিনার দেখা যায়। প্রচুর বাতাস আসে। জোছনা রাতে হু হু করে ঘরে চাঁদের আলো ঢুকে যায়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে জোছনা উপভোগ করা যায়। কিন্তু এখন আলো আসে না। বাতাস আসে না। চাঁদের আলো তো দূরের কথা। কিচ্ছু দেখা যায় না। ব্যলকনি ঘেষে বিশাল এক বাড়ি উঠেছে। সারাক্ষণ মিস্ত্রিরা খুটখাট শব্দে কাজ করে যাচ্ছে। আমার ব্যলকনিতে যাওয়া বন্ধ। লোডশেডিং হলে ঘরে গজব নেমে আসে। কোনো আলো নেই, বাতাস নেই। ব্যলকনিতে দাড়ালেই আমার মাথায় নানান রকম লেখা আসতো। এখন আমার কি হবে! এখন আমি কিভাবে লিখব!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




