
হঠাৎ বাতাস বইতে শুরু করলো। খুব ধুলো উড়ছে।
আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আমার কলাবাগান যাওয়া দরকার। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। আমি রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলাম। চা দিতে বললাম।
একলোক আমার পাশে বসে আছে। চোখের নিচে কালো দাগ, পোড়া পোড়া মুখ। মনে হচ্ছে এক বছর চুল কাটেনি। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'জীবনের শিক্ষা নিজেকেই নিতে হয়। বাঙালী ছেলেরা আইনস্টাইন, নিউটন হতে পারবে না। তারা একটা চাকরি পেলেই খুশি।
আমি লোকটাকে বললাম, আমাকে এসব বলছেন কেন?
লোকটা বলল, এই তোমার মেয়ে বন্ধু আছে? মেয়েদের সাথে মিশবে, বন্ধুত্ব করবে কিন্তু কখনো তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না। তারা যেন দুঃখ না পায়। মেয়েদের সাথে যারা রুক্ষ ব্যবহার করে, তারা জীবনে সুখী হয় না।
সমানে মেঘ গর্জন করছে। বাতাসে ধুলো উড়ছে।
দেখতে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। লোকটা বলল, দেশ বলতে তুমি কি বুঝ? আমি লোকটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি! লোকটা বলল, সুকান্তের 'ছাড়পত্র' কবিতাটা পড়েছো? তারপর নিজেই আবৃত্তি করলো-
'এখানে মৃত্যু হানা দেয় বারবার
লোকচক্ষুর আড়ালে এখানে জমেছে অন্ধকার।
এই যে আকাশ, দিগন্ত, মাঠ, স্বপ্নে সবুজ মাটি
নিরবে মৃত্যু মেলেছে এখানে ঘাটি'।
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, লোকটা আমাকে থামিয়ে বলল, তুমি জানো আমার বাবাকে খুন করা হয়েছিলো! আমাকে কমলাপুর রেলস্টেশনে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতে হয়েছিল। অথচ আমি এমএ পাশ!
লোকটা একটা সস্তা সিগারেট ধরালো।
বলল, তুমি সিগারেট খেলে খেতে পারো। আমি তোমাকে অনুমতি দিলাম। বয়সের ব্যবধান দিয়ে আমি মানুষ মাপি না। হ্যা এবার বলো 'তুমি দেশ বলতে কি বুঝ'?
আমি বললাম, বাংলাদেশটাই আমার দেশ।
আমি এই দেশে জন্মেছি। এই দেশে বড় হয়েছি। নীল আকাশ, সবুজ ধানক্ষেত, নদীর ধারে কাশফুল! এই দেশের সবখানে আমার পায়ের ছাপ আছে। সমুদ্র, পাহাড় আর...
লোকটা বলল, তুমি আমার প্রশ্নটা বুঝতে পারোনি। দেশ বলতে আমি কোনো জিওগ্রাফিক্যাল বাউন্ডারির কথা বলছি না। এই পৃথিবীটাই সব মানুষের দেশ। পৃথিবীতে দুটা মাত্র জাতি আছে। শাসক আর শোষিত। নিজেকে হিন্দু বা মুসলমান ভেবো না। তুমি মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




