শিশুদের ছোটবেলায় ধর্মীয় বীজ মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া ভুল হবে।
শিশু বড় হোক, তারপর সে যদি মনে করে ধর্ম জানতে হবে, মানতে হবে- তাহলে সে জানুক, মানুক। কিন্তু সে যখন অবুঝ তাকে জোর করে ধর্ম শিক্ষা না দেওয়াই উত্তম। আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা অতি নিম্মমানের। অবশ্য অতি গরীবের সন্তানদের ভরসা মাদ্রাসা। বিনা বেতনে অথবা অল্প টাকায় ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাচ্ছে। ইদানিং কিছু চতুর হুজুর ইনকাম বাড়ানোর জন্য ফাজলামো শুরু করেছে। তারা তাদের মাদ্রাসার নাম দিয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ক্যাডেট মাদ্রাসা। হাস্যকর। যেই লাউ, সেই কদু। কোথাও আগুন লাগলে আজান দাও। লঞ্চ ডুবে গেলে আযান দাও। ভূমিকম্প হলে আযান দাও। আজিব!
দেশ তো ধর্মীয় নিয়মে চলে না রে ভাই।
দেশ চলে সংবিধান অনুযায়ী। তাই শিশুর আগে সংবিধানটা জানা জরুরী। ধর্মশিক্ষা দিয়ে ভালো চাকরী পাওয়া সম্ভব নয় এই আধুনিক যুগে। ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে সম্ভব হলো- বাড়ি বাড়ি গিয়ে কায়দা, আমপাড়া পড়ানো। আমার এক বন্ধু হুজুর। পুরো কোরআন তার মুখস্ত। হাদীস সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান। কিন্তু সে তার ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে ভালো একটা চাকরী যোগাড় করতে পারেনি। এখন কয়েকজন ছেলেমেয়েকে বাসায় গিয়ে আরবী শিক্ষা দেয় আর মসজিদে আযান দেয়। মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্ধু বলে, বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো আমি যেন আল্লাহর পথে থাকি। বাবা মা মারা গেছেন। আল্লাহর পথে থাকতে গিয়ে এখন আমি গরীব জীবনযাপন করছি। আসলে বাবা মায়ের ভুলের খেসারত দিতে হয় ছেলেমেয়েকে।
শিশুকে ধার্মিক নয়, মানবিক শিক্ষা দিতে হবে আগে।
ধর্মের চেয়ে যে মানবতা বড় সেই শিক্ষা শিশুকে দিতে হবে। ধর্ম নিয়ে হানাহানি হয়, মারামারি হয়, কাটাকাটি হয়, কিন্তু মানবতা নিয়ে হানাহানি, কাটাকাটি হয় না। স্কুল নয়, পরিবার থেকেই আগে শিশুর সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায় নীতির শিক্ষা। মনুষ্যত্বের শিক্ষা। মানবিক হওয়ার শিক্ষা। ধার্মিক নয়, ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা। একজন ভালো মানুষ হতে পারলেই জীবনে সফল হওয়া সম্ভব। অথচ বাপ মা চিন্তা করে, আমার ছেলে হাফেজ হোক, আল্লাহর পথে থাকুক, নবীর পথে থাকুক। কিন্তু এটা বুঝে না- পৃথিবীটা পরকাল নয়, ইহকাল। ইহকাল টা সুন্দর ভাবে পার করতে হবে। ইহকাল সুন্দর না হলে পরকাল সুন্দর হবে কি করে? কাজেই সকল ধার্মিকের উচিত ইহকালে মন দেওয়া। মানুষের সেবা করা। মাদার তেরেসা মারা গেছেন সেই কবে, কিন্তু আর কোনো মাদার তেরেসার জন্ম হয়নি। কিন্তু বছর বছর লাখ লাখ হুজুর বের হচ্ছে সল্প জ্ঞান নিয়ে। এরাই মূলত জাতির বোঝা। এমন কি তারা পরিবারেরও বোঝা।
নতুন জামা পড়লে কোন দোয়া পড়তে হবে,
বাথরুমে প্রবেশের দোয়া বা খাওয়ার দোয়া জানা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুন্দর ভাবে জীবন যাপন ও আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে জানতে হবে বিজ্ঞান। জানতে হবে টেকনোলজি। জানতে হবে অংক। শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে আধুনিক পৃথিবীতে মাথা উচু করে বাচা যাবে না। উন্নত বিশ্বে একটা স্কুল পাশ করা ছেলে যতটুকু জানে, একজন মাদ্রাসা পাশ করা ছেলে তার চার ভাগের এক ভাগও জানে না। স্কুল পাশ করা ছেলেটা কলেজে ভরতি হয়, আর মাদ্রাসা পাস ছেলেটা কেউ মারা গেলে কিছু টাকার বিনিময়ে কোরআন খতম দিতে যায়। ইহা দুঃখজনক। মানুষের আসল সম্পদ হলো- শিক্ষা। সঠিক শিক্ষা। ধর্মীয় শিক্ষা নয়। বিশেষ করে দরিদ্রদের কোনো সম্পদ থাকে না। তাই শিক্ষাই (জ্ঞান) তাদের সম্পদ। সরকারের উচিত তাদের সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে যদি সঠিক শিক্ষা দেওয়া না হয় তাহলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। দেশে শিক্ষার মান ভালো নয় বলেই, পদ্মাসেতু বা মেট্রোরেল করতে বিদেশ থেকে লোক আনতে হত।
অনেক বাবা মা স্বপ্ন দেখেন,
তার সন্তানকে কোরানে হাফেজ বানাবেন। নবীজির পথে পরিচালিত করবেন। সেই বাবা মায়ের কাছে প্রশ্ন, আপনারা কেন কোরানে হাফেজ হলেন না, নবীজির পথে চললেন না? আপনাদের কম জ্ঞান দিয়ে আপনারা আসলে ছেলেমেয়ের ক্ষতি করছেন। অর্থ্যাৎ বাবা মা সন্তানের ভবিষ্যত টা নষ্ট করে দিলেন। আপনারা তো দুদিন পর মরে যাবেন কিন্তু আপনার সন্তানকে বিপদের মধ্যে ফেলে গেলেন। কোরআনে হাফেজের দিন যাবে আরবী পড়িয়ে সল্প টাকা হাদিয়ায়। কিন্তু তাকে যদি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতেন, তাহলে সে নিজ যোগ্যতায় নিজের কর্ম বেছে নিতে পারতো। কাজেই ছেলে মেয়েকে আধুনিক শিক্ষা দিন। তাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করুন। দেশকে এগিয়ে নিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:৩৯