ছবিঃ আমার তোলা।
অনেক মাজারে দেখা যায়-
লাল বা সবুজ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ প্রার্থনা করছে। নামাজ পড়ছে। দান বাক্সে টাকা ফেলছে। অনেক রকমের ফকির দেখা যায় মাজার ঘিরে।। এই মাজারে যে শুয়ে আছে তার কোনো উপকার করার ক্ষমতা নেই। তবু মানুষ কেন তার কাছে যায়? মৃত ব্যাক্তিদের কোনো কিছু দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ঢাকা শহরের এসি মসজিদ গুলো দেখলে আমার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়। যেখানে দরিদ্র লোকেরা ফুটপাতে ঘুমাচ্ছে। ঢাকা শহরের মসজিদ গুলোতে বিলাসিতার চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই মসজিদ মানুষকে সঠিক পথে আনার ক্ষমতা রাখে না। মসজিদের বাইরে ভিক্ষুকেরা হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে।
সারারাত ওয়াজ করা এটা আমার খুবই অপছন্দ।
মাইক লাগিয়ে রাখে আশেপাশে চৌদ্দ মাইল পর্যন্ত। আরেহ এটা কেমন অত্যাচার? ওয়াজ শুনে দেশ বা সমাজের কোনো উপকার হয় না। উপকার হয় ওয়াজকারীর আর মাইকওলাদের। সাধানত মানুষকে বিরক্ত করার জন্য এদের শাস্তি হওয়া দরকার। মহরমের সময় পুরান ঢাকায় দেখা যায়- অনেকে মিছিল করছে। নিজের গায়ে নিজে আঘাত করছে। রক্ত বের করছে। একটা ঘোড়াকে সাজায়। তারপর অনেকে দেখা যায় সেই ঘোড়াকে ভক্তি শ্রদ্ধা করছে। আরেহ ভাই এসব কি রকম পাগলামি? কোরআন হাদীস কি এসব করতে বলেছে? সরকারের উচিৎ আইন করে এসব পাগলামো বন্ধ করা।
হুজুররা এতিমখানা, মাদ্রাসা নিয়ে ব্যবসা করছে।
রাস্তায় মাইক লাগিয়ে এতিমখানা এবং মসজিদ নির্মানের জন্য লোকজনের কাছে টাকা চাইছে। ঢাকা শহরে আর একটা মসজিদেরও দরকার নাই। একসাথে ৫/৭ টা মসজিদ আযান শুরু করে। কানে লাগে। মসজিদ নির্মানের জন্য আর চাদা তুলো না ভাই। হুজুরদের ফুটপাত থেকে ইনকাম কম হয়, তাই এরা এখন বাসে বাসে টাকা সংগ্রহ করছে। হিজড়া সম্প্রদায়ও সিগনাল পড়লেই এসে টাকা চায়। নাম দিয়েছে এতিমখানা। এখন তাঁরা এতিমদের খাওয়াতে পারে না, তাই মানুষজনের কাছে হাত পাতছে। তাহলে তাঁরা এতিমদের দায়িত্ব নিতে যায় কেন? কোনো এতিমখানায় ইংরেজি শিখানো হয় না। ইংরেজি শিখানো কি পাপ? এক শ্রেনীর লোক আছে ইসলাম মানবে এবং ভন্ডামিও করবে। এই শ্রেনীকে আমার দুচক্ষে দেখতে ইচ্ছা করে না।
একটা শিশু জন্ম নিলে পশু জবাই করতে হয়।
ছেলে হলে দুটা ছাগল। মেয়ে হলে একটা ছাগল। কি আজিব নিয়ম। এই পশু জবো করলে শিশুর কি উপকার হবে? অথবা ধর্মের কি উপকারে আসবে? আমাদের পাশের বাসায় একলোকের ছেলে হয়েছে। সে বিরাট ধনী লোক। তার বহু বছর পর পুত্র হয়েছে। এই খুশিতে সে পাঁচ টা ছাগল জবাই করেছে। আমাদের বাসায় খানা পাঠিয়েছে। রান্না ভালো হয় নাই। আবার কেউ মারা গেলে চল্লিশ দিন পর লোকজন ডেকে এনে খাওয়াতে হবে। এটা কেমন নিয়ম? এমনিতে কি মানুষকে ডেকে এনে খাওয়ানো যায় না? ইদানিং তো কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে চল্লিশা হয়। আমার নিজের চোখে দেখা একটা চল্লিশার কথা বলি।
একলোক সীমাহীন টাকার মালিক।
এক মন্ত্রীর মাধ্যমে সে হাজার হাজার কোটি টাকা দূর্নীতি করেছে। এই লোক সম্ভবত এবার এমপি নির্বাচন করবে। যাইহোক, লোকটার বাবা মারা গেলো। বাবা ভূমি মন্ত্রনালয়ের অফিসের কেরানী ছিলো। শুনেছি তিনি সৎ লোক ছিলেন। এখন চল্লিশা করা হবে। সাতদিন আগে থেকে মাইকে করে আশে পাশের সাত গ্রামে ঘোষনা করা হলো। সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো। স্কুল মাঠে অনুষ্ঠান। বিশাল মাঠ। পুরো মাঠ সাজানো হলো। ঢাকা শহর থেকে ২৫ জন বাবুর্চি নেওয়া হলো। বাবুর্চির সহকারী ৬০ জন। নানান রকম আইটেম রান্না করা হলো। সাদা ভাত, ডাল, গরুর মাংস, খিচুড়ি, কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাউ। শেষে দই মিষ্টি পান। রাস্তাসহ পুরো মাঠ জুড়ে ২৭ টা সিসি ক্যামেরা লাগানো হলো। মনিটর ১২টা। থানা থেকে পুলিশ আসছে ২৫ জন। আশেপাশের সব গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ এলো। সকাল দশটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খাওয়া চললো। মাঠের চারপাশে অস্থায়ী পান সিগারেটের দোকান বসেছে।
এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে পুলিশ কমিশনার গেলো।
মন্ত্রী, এমপি এবং সরকারী আমলারা। তাদের কে আনার জন্য তিনটা হেলিকাপ্টার সারাদিন ব্যস্ত থাকলো। ঘটনা চক্রে এই চল্লিশায় আমার দাওয়াত ছিলো। সব কিছু নিজের চোখে দেখলাম। একটার পর একটা গরু জবাই হচ্ছে। ছাগল জবাই হচ্ছে। বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি সাংবাদিকদের দেখলাম। তাঁরা ভরপেট খেয়েছে। এখন হাত কচলাচ্ছে। তাদের কে নগদ অর্থ দিয়ে হাত কচলানো বন্ধ করা হলো। এবং তাঁরা চলে যাবার আগে কথা দিলো- এই চল্লিশা নিয়ে একটা নিউজ অবশ্যই করবে। সম্মানিত ব্যাক্তিরা খেয়ে, কিছুক্ষন গল্প করলো। তাদের আবার হেলিকাপ্টারে করে ঢাকা পৌঁছে দেওয়া হলো।