গত কয়েকদিন ধরে আব্বার কথা খুব মনে পড়ছে।
আব্বা মারা গেছে ২১ মাস হয়ে গেছে। আব্বা যেদিন মারা যায়, আব্বাকে গ্রামের বাড়িতে কবর দিয়ে এসে রাতে বাসায় ফিরি। তখন একজন ফোন দিলেন আমাকে। তাকে বললাম, আমার মাথার উপর থেকে বটগাছ নাই হয়ে গেছে। তিনি বললেন, 'এখন তোমাকেই বটগাছ হতে হবে। তোমার কন্যা আছে'। আব্বা ছিলেন দারুন স্মার্ট মানুষ। বুদ্ধিমান কিন্তু সহজ সরল। কোনো কিছুতেই আব্বাকে কখনও ঘাবড়ে যেতে দেখিনি। সব কিছুই সহজ ভাবে নিতেন।
একদিন দুপুরবেলা আব্বার সাথে রাস্তায় দেখা।
তখন আব্বা দাদীর সাথে থাকতেন। দাদী অনেক অসুস্থ তাই। দুপুরবেলা আমি কাটাবন দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় যাবো তাই ভাবছি। এমন সময় দেখি রাস্তার ওপারে আব্বা দাঁড়িয়ে আছে। আব্বা অনেক শুকিয়ে গেছে। ডায়বেটিকস। অথচ আব্বা কোনো নিয়মই মানে না। চিনি দিয়ে চা খাবে। ভাবলাম আব্বার সাথে দেখা করবো না। সরে পড়বো। কিন্তু কি মনে করে রাস্তা পার হয়ে আব্বার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। আব্বা বলল, কি রে তুই এখানে? আমি বললাম, তুমি এখানে কেন? আব্বা বলল, একটা কাজ ছিলো।
কড়া রোদ ছিলো সেদিন।
আব্বা বলল, চল কোথাও বসে দুপুরের খানা খাই। আব্বা একটা রিকশা নিলো। স্টার রেস্টুরেন্ট। রিকশায় বসে আব্বা বলল, এই রোদ থাকবে না। আজ বৃষ্টি হবে। আমি বললাম, কড়া রোদ। মনে হয় না আজ বৃষ্টি হবে। আব্বা একটু হাসলো। বলল, সেভ করিস না কেন? আমি দুদিন পর পর সেভ করি। আমি বললাম, আমি সপ্তাহে একদিন দাঁড়ি সেভ করি। আমরা রেস্টুরেন্টে বসলাম। আব্বা বলল, তোর যা খুশি খা। আমি ভাত খাবো। আমি কাচ্চি নিলাম। আব্বা ভাত মাছ নিলো। আব্বা বলল, কোক নে। তুই তো কোক পছন্দ করিস।
রেস্টুরেন্ট থেকে বাইরে এসে আমি অবাক!
আকাশ কালো হতে শুরু করেছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে! আমি অবাক হয়ে আব্বার দিকে তাকালাম। আব্বা একটা সিগারেট ধরালো। বলল, তোর কোনো মেয়ে বন্ধু নাই? আমার সুরভির কথা মনে পড়লো। তখন সুরভির সাথে আমার তুমুল প্রেম। আব্বা বলল, মেয়েদের সম্মান করবি। অবহেলা করবি না। তাদের মনে কখনও কষ্ট দিবি না। আব্বা কথা শেষ করার আগেই ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নেমে গেলো। আমরা আবার রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে বসলাম। টানা এক ঘন্টা বৃষ্টি হলো।
বৃষ্টি কমে এলে আব্বা বলল, তুই বাসায় চলে যা।
আমি সিএনজি করে দিচ্ছি। আমি বললাম, আমি সিএনজি নিয়ে যেতে পারবো। তোমার সিএনজি ঠিক করে দিতে হবে না। আব্বা বলল, আয় আরেক কাপ চা খাই। রাস্তার পাশে এক দোকান থেকে আমি আর আব্বা চা খেলাম। তারপর আব্বা আমার পকেটে কিছু টাকা গুজে দিলো। এই কাজটা আব্বা সব সময়ই করে। সিএনজি ঠিক করে দিলো আব্বা। সিএনজি চালককে বলে দিলো কোন রাস্তা দিয়ে গেলে জ্যাম কম হবে। কেন যেন আব্বার জন্য খুব মায়া হলো। খুব কষ্ট লাগলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:১৩