প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার মামা মামী গেছেন চেন্নাই চিকিৎসার জন্য। টানা বিশ দিন তুমি আর তোমার মা তোমার নানা বাড়ি বেড়ালে। এদিকে বাসায় আমি একা। একা থাকতে আমার ভালো লাগে না। রাতে ভয় ভয় লাগে। সুরভি গত আট বছরে অনেকবার তোমার নানা বাড়ি গিয়েছে। কিন্তু এতদিন কখনও থাকেনি। থেকেছে সর্বোচ্চ ৩/৪ দিন। আমি এর মধ্যে দু'দিন গিয়ে তোমাদের সাথে থেকে এসেছি। তোমাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম একদিন। চিরিয়াখানায় গিয়ে তুমি খুব খুশি। জিরাফ দেখে তুমি ভীষন অবাক। ঢাকা চিড়িয়াখানার কোনো উন্নতি হয়নি। দশ-বিশ বছর আগে যেমন ছিলো, এখন তার চেয়েও খারাপ অবস্থা। পশু গুলো রুগ্ন। এমন অবস্থা উঠে দাঁড়াবে সেই শক্তি পর্যন্ত নেই। দেখলে মায়া হয়।
প্রিয় কন্যা আমার-
আর একদিন পর তুমি একুশ মাসে পা দিবে। অবশ্য এখন তোমাকে দেখলে এবং তোমার কথা শুনলে মনে হয় তোমার সাড়ে তিন বছর। স্কুলে ভরতি করিয়ে দিতে হবে। টুকটাক অনেক কথাই বলতে তুমি পারো। তোমাকে যখন মাল্টা জুস করে দেই। তুমি বলো টক। যখন তোমার আপেল খেতে ইচ্ছা করে- তুমি স্পষ্ট করে বলো আপা, আপা। আপেল তুমি বলতে পারো না। বলো আপা। তোমার বাইরে যেতে ইচ্ছে হলেই বলো- বাইরে। বাইরে। গতকাল রাত ১১ টায় বললে- বাইরে যাবে। আমি তোমাকে নিয়ে গেলাম। বাইরে। অনেকক্ষন তোমাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরলাম। ইদানিং তুমি রাস্তায় বের হলে হাঁটতে চাও না। আমি যতদিন বেঁচে আছি, তোমার কোনো সমস্যা নাই। তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
তোমাকে তোমার দাদার কথা বলি- তোমার জন্মের কয়েকদিন আগে তোমার দাদা মারা যায়। আমাদের বংশে সবার'ই লম্বা হায়াত। অথচ তোমার দাদা হুট করে মরে গেলো! তোমার দাদা নরম মনের মানুষ ছিলেন। আমাকে খুবই ভালোবাসতো। আমাকে সাহস দিতো, ভরসা দিতো। বিপদেআপদে তোমার দাদা এসে আমার পাশে দাড়াতো। একদিনের ঘটনা বলি। আমি রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছি। কারন, আমি পোলাউ খেতে চেয়েছিলাম। অথচ বাসায় সেদিন পোলাউ রান্না করে নাই। আব্বা রাতে বাসায় ফিরে শুনে আমি না খেয়ে ঘুমিয়েছি। আব্বা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে গেলো রেস্টুরেন্টে। আমি পোলাউ খেলাম। তারপর রাত বারোটায় বাসায় ফিরলাম। আমি একজন ভালো বাবা পেয়েছিলাম। প্রিয় কন্যা তুমিও একজন ভালো 'বাবা' পেয়েছো।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
তোমার নানার কথা বলি। সে একজন ঝামেলাবিহীন মানুষ। দীর্ঘদিন সরকারী চাকরী করেছেন। শ্রমিক উনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন। চাকরী থেকে অবসর নিয়ে তিনি এখন ওকালতি করছেন। খুব ভোরে বাসা থেকে বের হন। কোর্টে যান। দুপুরে বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে আবার বিকেলে চেম্বারে বসেন- রাত দশটা পর্যন্ত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আমি তার সাথে অনেক গল্প করেছি। উনার অনেক অভিজ্ঞতা। অনেক বিষয়ে জানেন। সৎ মানুষ তিনি। মিথ্যা কথা বলেন না। তার মধ্যে কোনো ভান বা ভনিতা নেই। প্রতি শুক্রবার সকালে তিনি বাজার করেন। তোমার নানু মারা গেছেন বহু বছর আগে। ক্যান্সার হয়েছিলো তার। টানা এক বছর তার চিকিৎসা চলছিলো হাসপাতালে। আমি তাকে দেখিনি। শুনেছি তিনি নরম মনের মানুষ ছিলেন।
প্রিয় কন্যা ফাইহা,
আমি সামু ব্লগে লিখি। ইদানিং সামু ব্লগে লিখে আরাম পাচ্ছি না। চাঁদগাজী নামে একজন ব্লগার আছেন। খুব ভালো ব্লগার। ভালো লিখেন। উনি দেশের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে লিখেন। অথচ এই ব্লগারকে ব্যান করে রাখা হয়েছে। বুঝো দেশের অবস্থা! বুঝো দেশের মানুষের অবস্থা! সামু ব্লগে মডারেটর সাহেব আমাকে যে পরিমান কটু কথা বলেছন, অপমান করেছে তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে। অথচ তিনি আইনত আমাকে কটু কথা বলতে পারেন না। কারন একজন মডারেটর কে হতে হয় সম্পূর্ন নিরপেক্ষ মানুষ। ঠিক সেভাবে ব্লগার চাঁদগাজীকে তছনছ করে দিয়েছে। তার কিছু লেখা আমি তোমার জন্য সংগ্রহ করে রেখেছি। তুমি পড়লেই বুঝতে পারবে- তিনি কেমন মানুষ। দোয়া করি তাদের বোধ জাগ্রত হোক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:২২