
ছবিঃ দৈনিক যুগান্তর।
ঘুর্নিঝড় 'সিত্রাং' তার খেলা শুরুর দুদিন আগে থেকেই ঢাকায় কড়া রোদ উঠেছিলো। তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ ডিগ্রী। তখনই আমি বুঝেছিলাম একটা ঝড় হবে। গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি, একটা বড় ঝড় হওয়ার আগে কঠিন রোদ উঠে। অবশ্য পত্রিকা এবং টিভি দেখে জানতে পেরেছি 'ঝড়' আসছে। ঝড়ের নাম 'সিত্রাং'। এই নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড। সিত্রাং অর্থ ফুল গাছ। ঝড়ের নাম গুলো আমাদের কাছে অদ্ভুত লাগে। ২০০৭ সালে ঘূর্নিঝড় সিডোর হানা দিয়েছিলো। খুবই কঠিন ঝড়। বাংলাদেশের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিলো। সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলো।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো 'সিত্রাং' এর সঠিক নিউজ দিতে পারেনি। মূলত আমাদের দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো টিভির খবর শুনে নিউজ তৈরি করে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো তাদের ভিউ বাড়ানোর জন্য অনেক আজগুবি নিউজ তৈরি করে। কাজেই ওদের কাছ থেকে দূরে থাকাই ভালো। এজন্য আমি টিভিতে নিউজ শুনেছি। সিত্রাং এর অবস্থান জেনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি জানতে পারিনি- মোট কতজন মানুষ মারা গেছে সিত্রাং ঝড়ে। কোনো নিউজে বলছে, ৯ জন, কেউ বলছে ২২ জন্য আবার কেউ কেউ বলেছে ৩৫ জন মারা গেছে।
সিত্রাং এর তান্ডবে সারা বাংলাদেশে অসংখ্য গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। ঢাকা শহরেও বহু গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। একটা নিউজ চ্যানেল বলল, গাছ চাপা পড়ে ৯ জন মারা গেছে সারা দেশে। 'সিত্রাং' খুব শক্তিশালী ঝড় নয়। এরকম ছোট ঝড় মোকাবেলা করার যোগ্যতা বাংলাদেশের আছে। সরকারী হিসেবে প্রায় ৭ লাখ মানুষকে সরকার নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। টানা বৃষ্টির কারনে নদীর পানি বেড়ে গেছে। অনেক অঞ্চলের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বেশ কিছু পাখি মারা গেছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে এই ঝড়ের কারনে এবার আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি।
যেদিন 'সিত্রাং শুরু হলো- ভোর থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশ মেঘলা। সমানে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। মনে ভাবলাম আজ খিচুড়ি খাবো না। কারন সিত্রাং ঝড়। এই ঝড়ে বহু মানুষ বিপদে পড়বে। তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। গবাদি পশু ক্ষতি গ্রস্ত হবে। ঘরের ভিতর পানি ঢুকে যাবে। আর আমি ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঢাকায় নিজ বাসায় বসে আরাম করে খিচুরী ও গরুর মাংস খাবো! কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস। আমার ইথিক্স বলে, অন্যদের বিপদের দিনে নিজে খাবার নিয়ে বিলাসিতা করা ঠিক না।
সকাল দশটা। আমি ছাতা নিয়ে বাইরে গেলাম। রাস্তা ঘাটে গাড়ি, বাস, রিকশা খুবই কম। মানুষের ভিড় নেই। বড় রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই। প্রচুর বাতাস। আমার ছাড়া উড়ে যাবে এমন অবস্থা। আমি তাড়াতারি করে এক দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে নিলুম। তারপর বাসায় ফিরলাম। দুপুরে খেতে গিয়ে দেখি, সুরভি তেহারী রান্না করেছে। আমি বললাম, আজ তেহারী কেন? সুরভি বলল, গতকালই ঠিক করে রেখেছি আজ তেহারী রান্না করবো। অবশ্য যদি জানতাম আজ বৃষ্টি হবে, তাহলে অবশ্যই খুচিরী রান্না করতাম। আমি বললাম, আমি তেহারী খাবো না। আমাকে ভাত দাও ডিম ভেজে।
সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হলাম। সিত্রাং এর সঠিক অবস্থা অনুভব করার জন্য। বৃষ্টির বেগ অনেক বেশি। বাতাস যেন রেগে গেছে। সব কিছু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। রেস্টুরেন্ট গুলোতে লোকজন পাগলের মতো খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছে বাসায়। রাত আট টার মধ্যে অনেক রেস্টুরেন্টের সব খাবার শেষ। তবে মাছের বাজার খালি। মাছ বিক্রেতারা হতাশ মুখে বসে আছে। সব অলিতে গলিতে পানি জমে গেছে। আমি এক ঘন্টা পানি মাড়িয়ে ঘুরে বেড়ালাম। ছাতা থাকা অবস্থায়ও আমি ভিজে গেছি।
রাতে খেতে বসে দেখি সুরভি খিচুরী আর গরুর মাংস রান্না করেছে। আমি বললাম, খিচুরী কেন? সুরভি বলল, তুমি না দুপুরে খিচুরী খেতে চাইলে? আমি বললাম, সারা দেশে ঝড় হচ্ছে। কত মানুষ বিপদে পড়েছে। গাছ ভেঙ্গে পড়ছে, নদীর পানি বেড়ে গেছে, ঘর বাড়ি পানিতে ঢুবে গেছে। গবাদি পশু পানিতে ভেসে গেছে। মানুষ মরছে। আর তুমি খাবার নিয়ে বিলাসিতা শুরু করছো? সুরভি বলল, অনেকে তো সিত্রাং ঝড় উপভোগ করার জন্য কক্সবাজার গিয়েছে। আমরা না হয় খিচুরী খেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




