
প্রিয় কন্যা আমার,
আর দুই মাস পর তুমি তিন বছরে পা রাখবে। এখন তুমি অনেক কথা বলতে পারো। তোমাকে নিয়ে আমি নিয়মিত বাইরে বেড়াতে যাই। বাইরে গেলে তুমি হাঁটতে চাও না। কোল থেকে নামতেই চাও না। কারনটা হচ্ছে তুমি ভয় পাও। রাস্তায় এত এত গাড়ি টাড়ি দেখে এবং এগুলোর বিকট হর্ন শুনে তুমি ভয় পাও। আমি তোমাকে অনেক বুঝাই গাড়ি চলছে ফুটপাত দিয়ে। আর তুমি হাঁটবে ফুটপাত দিয়ে। গাড়ি ফুটপাতে উঠে আসবে না। তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি আমার কথা বুঝ না। তোমার এই ভয়টা কাটাই কি করে? হয়তো তুমি আর একটু বড় হলে এই ভয়টা কেটে যাবে।
গত একমাস সারাদিনে প্রায় ৬/৭ বার করে লোডশেডিং হয়েছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক ঘন্টার আগে আসে না। এমনও হয়েছে ভোর চার টায় বিদ্যুৎ চলে গেছে। এদিকে প্রচুর গরম। মশাও আছে। আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তোমাকে পাখা দিয়ে বাতাস শুরু করি। টানা একঘন্টা বাতাস করি। তোমাকে বুঝতে দেই যে বিদ্যুৎ চলে গেছে। তুমি ঘুমাও। আরাম করে। গত একমাস এভাবেই পার করেছি। দরিদ্র একটা দেশে থাকি। এই দেশে সমস্যার শেষ নেই। সবচেয়ে বড় কথা মানুষ গুলো ভালো নয়। ধর্মগুরুরা মূলত সমাজের কোনো উপকার করে না। এক মনিষী বলেছিলেন, দারিদ্রতা দূর হয়ে যাবে যেদিন ধর্ম প্রচারক দূর হবে।
ফারাজা, এখন তুমি আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। এখন আর অন্য কাউকে সময় দেই না আমি। তোমাকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াই। সাথে তোমার মাকেও নিই না। ক্ষুধা পেলে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে বসি। রুটি, কাবাব অর্ডার করি। তুমি তো আর এসব খেতে পারো না। আমিই খাই। তবে তুমি শশা খাও। এই যে তুমি আমি প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যাচ্ছি, আমি যেমন আনন্দ পাচ্ছি, তুমিও আমার চেয়ে বেশি আনন্দ পাচ্ছো। আমি তোমার হাসিমুখ দেখে স্পষ্ট তা বুঝতে পারি। আজও তোমাকে নিয়ে বাইরে যাবো। তোমার মা গিয়েছে মোহনাদের বাসায়। সাথে ভাবীও গেছেন।
প্রিয় কন্যা ফারাজা আমার, আমি বিশ্বাস করি- সুখ হলো মনের একটা অনুভূতি। কোন কিছু থাকা বা না থাকার সাথে সুখের কোন সম্পর্ক নেই। সুখ আসলে কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুখ অর্জন করে নিতে হয়। অর্থ্যাত তোমার সুখ তোমাকেই অর্জন করে নিতে হবে। ফারাজা, পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের পিছনে দুটো করে বটগাছ থাকে। অতি স্নেহের সাথে এই বটগাছ দুটো তোমাকে লালন পালন করে- আদর আর ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু একদিন তোমার মাথার উপরে কোনো বটগাছ থাকবে না। তখন তোমাকে একা চলতে হবে, টিকে থাকতে হবে, বেঁচে থাকতে হবে। আমার বাবা বেঁচে নেই। অর্থ্যাত আমার মাথার উপর বটগাছ নেই।
আমি বিশ্বাস করি, জীবনে সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকলে, যত ঝড়ই আসুক জীবন সব সময়ই সুন্দর হয়। জীবনযুদ্ধে ধাক্কা খেলে ভড়কে যাওয়া যাবে না। খেয়াল করে দেখো- প্রতিটি ধাক্কায় আমাদের জন্য নতুন জ্ঞানের দ্বার খুলে দেয়। যাইহোক, প্রতিদিন যে সারা বিশ্বে কত কিছু ঘটে যাচ্ছে! ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হলেন ৪২ বছরের ঋষি সুনাক। ২০১৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ঋষি। সে বছর রিচমন্ড থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। অসম্ভব বলে আসলে দুনিয়াতে কিছু নেই। আজ লেখা এখানেই শেষ করছি। আমি এখন এক কাপ চা খাবো।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




