somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক

কিছু ইংরেজ খুব বেশি অত্যাচার করেছে।
জোর করে কৃষকদের দিয়ে নীল চাষ করিয়েছে। অথচ তাদের সঠিক পারিশ্রমিক দেয়নি। কত কৃষক যে ইংরেজদের চাবুকের আঘাত খেয়েছে তার হিসাব নেই। অনেক কৃষকের স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে ধর্ষণ করছে নীলকর সাহেবেরা। সাধারন কৃষক কার কাছে বিচার চাইবে? বছরের পর বছর একই ঘটনা। কোনো জমিদার তখন এগিয়ে আসেনি কৃষকদের পাশে। বরং তারাও বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলো। কৃষকরা তাদের সহ্য সীমা অতিক্রম করেছে। তাঁরা এখন জীবন দিয়ে হলেও ইংরেজদের অত্যাচার বন্ধ করতে চায়। প্রয়োজনে লাঠি দিয়ে যুদ্ধ করবে। দুই একজন সাহসী যুবক এগিয়ে এলো কৃষকদের সাহায্য করতে। তাঁরা লড়াই করবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। তাঁরা আর নীল চাষ করবে না। তাঁরা ধান চাষ করবে নিজের জমিতে। আচমকা কৃষকরা আক্রমণ করতে শুরু করলো ইংরেজদের কুঠিতে।

মহাকবি মাইকেল অনেক রকম 'রচনা' লিখলেন।
বেশ খ্যাতি পেলেন। কিন্তু ইংরেজদের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেন না। যেন তিনি জানেনই না ইংরেজদের অত্যাচারের কাহিনী। তিনি ব্যস্ত থাকলেন মদ ও তার লেখা নিয়ে। তিনি শুধু বিখ্যাত হতে চাইলেন নাটক আর কবিতা লিখে। একজন লেখকের যে দায়িত্ব আছে সমাজের উপর, সে দায়িত্ব তিনি পালন করলেন না। জিদ করে, তেজ দেখিয়ে লিখে চললেন নাটক আর কবিতা। সেই নাটক, কবিতায় অসহায় কৃষকদের কথা লেখা নেই। নাটক অনুবাদ করে কিছু টাকা পাওয়া যেতো। সেই টাকা দিয়ে এক সপ্তাহ মদ খাওয়া যেতো। নিজের মেয়ে 'শমির্ষ্ঠা'র বিয়ে দিলেন ধারধেনা করে। এক হাজার মানুষ দাওয়াত দিলেন। মাইকেল তার বন্ধু গৌরদাস কে বারবার বলেছেন, আমি বিখ্যাত হবো। তুমি আমার আত্মজীবনী লিখবে। ধনীর সন্তান হয়েও সারা জীবন অভাবে অভাবে পার করলেন মাইকেল।

দীনবন্ধু নামে এক যুবক মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাথে দেখা করতে এলেন।
দীনবন্ধু ঢাকায় পোষ্ট অফিসে চাকরী করেন। এর আগে তিনি ছিলেন নদীয়া জেলায়। তিনি কলকাতায় এসেছেন নদী পথে মাইকেলের সাথে দেখা করতে। দীনবন্ধুর অনেক লেখাপড়া করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে খুব একটা লেখাপড়া করতে পারেননি। সম্পূর্ন নিজের যোগ্যতায় অল্প কিছু লেখাপড়া করেছেন। পোষ্ট মাস্টারের চাকরী করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় তিনি গেছেন। নিজের চোখে সাধারন মানুষের উপর দুষ্ট ইংরেজদের অত্যাচার দেখেছেন। যা তার মোটেও ভালো লাগেনি। এখন দীনবন্ধু চান মাইকেল নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে লিখুক। অন্তত একটা নাটক লিখুক। মাইকেল স্পষ্ট মানা করে দিলেন। তিনি বললেন, এসব লেখার সময় আমার নাই। আমি কবিতা লিখব। আমার জন্ম হয়েছে কবিতা লেখার জন্য। দয়া করে ফালতু কথা বলে আমাকে বিরক্ত করবেন না।

মাইকেলের ব্যবহারে দীনবন্ধু খুব আশাহত হলেন।
রেগেমেগে তিনি নিজেই নাটক লিখতে শুরু করলেন বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। একসময় লেখাটি শেষ হলো। লেখাটির নাম- 'নীলদর্পন'। নীলদর্পন সারা দেশে হইচই ফেলে দিলো। ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। নীলদর্পন নাটকের মূল কথা হলো- 'নীল চাষের জন্য সাধারণ কৃষকদের উপর ইংরেজ শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়ন'। এ নাটকে সংঘাত হয়েছে, তা মানুষে মানুষে। দুটি অসম শক্তি এ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। একদিকে নীলকর, অন্যদিকে কৃষক, এক কথায় নীলচাষীরা। নীলদর্পণ নাটকে তিনটি চিঠির কথা আছে। প্রথমটি বিন্দুমাধব লেখেন সরলতাকে, দ্বিতীয়টি শ্রী ঘনশ্যাম মুখোপাধ্যায় লেখেন নবীন মাধব কে, তৃতীয়টি শ্রী গোকুলকৃষ্ণ পালিত লেখেন নবীন মাধব কে। এই নাটকটি যখন মঞ্চে উস্থাপন করা হয়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দেখতে গিয়েছিলেন। এবং তিনি নীলকর সাহেবদের ঘৃণা ভরে নিজের জুতো উঁচু করে ছুড়ে মেরেছিলেন। লেখক দীনবন্ধু মিত্র 'রায়বাহাদুর' উপাধি পেয়েছিলেন।

দীনবন্ধু মিত্রের এই 'নীলদর্পন'' নাটকটি খুব প্রশংসা কুড়ালো।
সকলেই বললেন, এই নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা প্রয়োজন। খুব বেশি প্রয়োজন। কিন্তু কে করবে অনুবাদ? তখন দীনবন্ধু মিত্র বললেন, অনুবাদ একজনই করতে পারবেন, তিনি হচ্ছেন মাইকেল মধু সূদন দত্ত। তার মতো সুন্দর করে এই নাটক আর কেউ ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারবেন না। অনেক আশা নিয়ে দীনবন্ধু মাইকেলের কাছে গেলেন। মাইকেল বললেন, আপনার দর্পন নাটকটি অসাধারণ হয়েছে। আমি পড়ে তা মুগ্ধ হয়েছি। ব্যস্ততার কারনে নাটকটি থিয়েটারে গিয়ে দেখা হয়নি। এই নাটকটি আমি অবশ্যই অনুবাদ করে দিবো। আজ রাতেই আমি এক বসাতেই অনুবাদ করবো, আপনাকে কথা দিলাম। কিন্তু তার আগে আমাকে এক ডজন বিয়ার কিনে দিয়ে যান। বিয়ার পেটে না পড়লে আমার মাথা কাজ করে না। মাইকেল কথা রাখলেন। এক রাতেই তিনি নীলদর্পন নাটকটি অনুবাদ করলেন। এবং বারো বোতল বিয়ার শেষ করলেন।

(ইচ্ছা ছিলো ৩য় পর্বে লেখাটি শেষ করবো। কিন্তু শেষ করতে পারলাম না। আমাকে আরো এক পর্ব লিখতে হবে। সাথেই থাকুন।)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×