
শাহেদ তার পুরনো ডায়েরী হাতে নিয়েছে।
এক পৃষ্ঠাতে লেখা- ছোটবেলায় একবার পদ্মানদীতে ডুবে গেলাম। হারিয়ে গেলাম। মরে গেলাম। ভাসতে ভাসতে দূরে কোথাও চলে গেলাম। নদী থেকে মৃত আমাকে তোলা হলো। লোকজন ভিড় করে আমাকে দেখতে থাকলো। তখন একজন সাধুবাবা এলেন। চুলে জট। হাতে লাঠি। আঙুলে অনেক গুলো আংটি। তিনি আমার বুকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আমি উঠে বসেছিলাম। কিন্তু এরকম ঘটনা তার জীবনে ঘটেছে বলে তার মনে পড়ছে না। যদি এই ঘটনা তার জীবনে না ঘটেই থাকে তাহলে শাহেদ তার ডায়েরীতে এটা লিখেছে কেন? সে কি মিথ্যা লিখেছে। কিন্তু মানুষ তো ডায়েরীতে সাধারণত মিথ্যা কথা লেখে না।
শাহেদ পরের পাতায় গেলো।
সেখানে লেখা নীলা নামে একটি মেয়ের কথা। হ্যাঁ নীলাকে তার মনে আছে। দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। বড় বড় চোখ। ঠোঁটে সারাক্ষণ হাসি লেগেই থাকতো। ভরাট বক্ষ। মেদহীন কোমর। মাথা ভরতি চুল। একবার নীলা আর শাহেদ সারারাত একসাথে ছিলো। নীলা শাহেদকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলো। তখন শাহেদের বয়স অল্প। আর নীলা অনেক বড়। কিন্তু শাহেদ কখনও নীলাকে আন্টি বলে ডাকেনি। নাম ধরে ডাকতো- নীলা। এই নীলা! নীলা বলতো, হ্যাঁ আমাকে নাম ধরেই ডাকো। শুনতে ভালো লাগে। সেই সময় শাহেদের কচি বয়স। আর নীলা একদম যুবতী। শাহেদ তখন সবে মাত্র স্কুলে পড়ে। শাহেদ লুকিয়ে লুকিয়ে মুগ্ধ চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে থাকতো। কচি বয়সের প্রেম তো এরকমই হয়।
নীলা শাহেদকে যখন তখন ঝাপটে ধরতো।
শাহেদের কান গরম হয়ে যেতো। কিন্তু বড় ভাল লাগতো। নীলার শরীরে কি সুন্দর গন্ধ! শাহেদ জানতো না নীলার অতীত ইতিহাস। কে তার স্বামী। কে তার বাবা মা। অথবা কে তার প্রেমিক। অবশ্য তখন শাহেদের তেরো বয়র বয়স। এই বয়সে জ্ঞান বুদ্ধি পরিপক্কতা পায় না। অন্যদিকে নীলার বয়স ছিলো শাহেদের ডবল। শাহেদ মনে মনে নীলাকে নিজের প্রেমিকা মনে করতো। রাতে গভীর গোপনে সে নীলাকে মনে মনে আদর করতো। নীলার বুকে মাথা রাখত। নিজের মুখ ঘসতো। এই রকম ভাবনা চিন্তা সেই অল্প বয়সে অন্যরকম বোধ জাগাতো শরীরে-মনে। ডায়েরী লেখার কারনেই নীলা আজও মনোমুগ্ধকর সৃতি হয়ে রয়েছে।
একবার নীলা কি যেন একটা বিপদে পড়েছিলো।
তাই কিছু দিন শাহেদদের বাসায় থাকতে এসেছিলো। একদিন বিকেলে নীলা শাহেদকে নিয়ে পার্কে যায়। সেখানে এক যুবক নীলার সাথে দেখা করতে এলো। যুবককে দেখেই শাহেদের মেজাজ খারাপ হলে গেলো। যুবক ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। চুল এলোমেলো। দেখতে ভাল নয়। শার্টের বোতাম খোলা। নীলা বলল, শাহেদ তুমি যাও খেলা করো। আমি সুমনের সাথে কিছুক্ষন কথা বলি। এই সামান্য কথাতে শাহেদ দারুন অপমান বোধ করে। তার চোখে প্রায় পানি এসে গেলো। শাহেদ নীলাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষ যদি চোখের সামনে অন্য লোকের সাথে কথা কয়, তখন কেমন লাগে! শাহেদের বুক মুচড়ে মুচড়ে গেলো।
একদিন বাবা মা দুজনেই বেড়াতে গেলো।
তাঁরা শাহেদকে সাথে করে নিয়ে গেলো না। নীলাকে বলে গেলো- যেন শাহেদকে যথাসময়ে খাবার দেওয়া হয়। পড়তে বসার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। বাসায় কেউ নেই! শুধু শাহেদ আর নীলা। শাহেদের মনে হচ্ছে আজ অন্যরকম কিছু একটা হবে। অন্য রকম কিছু একটা ঘটবে। কারন আজ সকালে শাহেদ দুটা শালিক পাখি দেখছে। দুপুর থেকেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছিলো। বিকেলে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। কঠিন বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে ভিজে সেই যুবক বাসায় এলো। যে যুবক সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শার্টের বোতাম খোলা। চুল এলোমেলো। নীলা যুবককে ঘরের মধ্যে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। সেদিন শাহেদ খুব কষ্ট পেয়েছিলো। তার ইচ্ছা করছিলো দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




