
প্রিয় কন্যা আমার-
একমাস পর আজ তোমাকে নিয়ে লিখতে বসেছি। আমি লিখতে ভালোবাসি। ঘন্টার পর ঘন্টা লিখে যেতে আমার ক্লান্তি লাগে না। সে যাক গে- ইদানিং রাত তিনটায় তোমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর তুমি গল্প শুনতে চাও। এদিকে আমার চোখে ঘুম। ঘুম চোখ নিয়েই তোমাকে গল্প বলি। গল্প বলতে বলতে আমি ঘুমিয়ে যাই। তখন তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে জাগাও। আবার আমি গল্প বলতে থাকি। ঘুম চোখ নিয়ে তোমাকে কি গল্প বলি আমি জানি না। ফযরের আযান দিয়ে দেয়ে। তুমি ঘুমাও না। তখন আমি তোমার মাকে ডেকে তুলি। তোমার মা তোমাকে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করে। তুমি ঘুমাও না। কিন্তু আমি ঘুমিয়ে যাই। ইদানিং তুমি দুপুরবেলাও খুব অল্প সময় ঘুমাও। অথচ ঘুম সব মানুষের জন্য প্রয়জোন।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
আফগানিস্তান নামে একটা দেশ আছে। মুসলিম দেশ। সেই দেশে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিষিদ্ধ করেছে তালেবানরা। ক্ষমতায় আছে তালেবানরা, তাদের কথা শুনতেই হবে। নইলে গুলি খেয়ে মরতে হবে। আমেরিকার উচিৎ ওদের ধ্বংস করে দেওয়া। যাইহোক, আমাদের দেশ আফগানিস্তানের মতো নয়। তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। ভাল রেজাল্ট করবে। কোনো রকমে গোঁজামিল দিয়ে পাশ করে গেলে হবে। পাঁচ বছর বয়েসে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হবে আর সেই পড়া শেষ হবে মাস্টার্সের পর। মোটামুটি সতের আটারো বছর লেখাপড়া করে যেতে হবে। মাটার্স শেষ করতে করতে তোমার তেইশ বা চব্বিশ বছর হয়ে যাবে। এরপর একটা সরকারী অথবা বেসরকারী চাকরি বা বিজনেস। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করা। নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সবই সম্ভব যদি তুমি নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারো।
প্রিয় কন্যা আমার-
যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। যা বেশির ভাগ মানুষ পারে না। কিন্তু আমি পারি। তোমাকে পারতে হবে। হায় হায় করলে হবে না। তোমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। মনে রাখবে আবেগ দিয়ে কবিতা লেখা যায় কিন্তু জীবন চলে না। উপমহাদেশ ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীন হলেও দুঃখজনক ভাবে নারীর মুক্তি মেলে নি। নারীরা উন্মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় দিগন্তে বিচরন করবে এবং সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার এটা সুনিশ্চিত করবে সেদিন নারীর প্রকৃত মুক্তি ঘটবে। কিন্তু ধার্মিকেরা এটা হতে দিতে চায় না। যাইহোক, এইসব বিষয় নিয়ে তোমার সাথে পরে কথা বলব। ভূত, প্রেত বা জ্বিন নামক কিছু পৃথিবীতে নেই। এইসব বিষয়ে তুমি কোনো ভয় পাবে না। মাথা খাটাবে। মিথ্যা বলবে না, জীবনে সৎ থাকবে। বিবেক জাগ্রত রাখবে এবং লকিজহীন হয়ে যাবে না কখনও। মনে রাখবে কারন ছাড়া দুনিয়াতে কিছুই ঘটে না। প্রিয় কন্যা- একদিন আমি থাকবো না, কিন্তু আমার এই লেখা গুলো থেকে যাবে। আপাতত দৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হলেও, একদিন আমার এই সব তুচ্ছ লেখা গুলোই তোমাকে সাহস দেবে, ভরসা দেবে অনুপ্রেরনা দিবে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
গতকালের কথা। ফযরের আযান শেষ। দেখি তুমি কান্না করছো। তোমার মা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে- তোমার ক্ষুধা পেয়েছে কিনা? তোমার মা বলল- আপেল খাবে? তুমি না বলো। তোমার মা বলে মুড়ি খাবে? তুমি মানা করো। তোমার মা বলে পাস্তা খাবে? তুমি হ্যাঁ বলেছো। ভোর পাচটায় তোমার মা তোমার জন্য পাস্তা রান্না করেছে। কোনো ক্লান্তি নেই। কোনো বিরক্তি নেই। তুমি পাস্তা খেয়ে তারপর ঘুমিয়েছো। এখন তোমার মা প্রতিদিন নানান রকম খাবার রেডি করে ঘুমাতে যায়। যদি তোমার ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন তুমি খাবে। মিষ্টি আলু সিদ্ধ, ঘরে বানানো দুই রকমের কেক, রুটি, আপেল। প্রতিদিন তোমার মা তোমার জন্য আদালা খাবার রান্না করে। ঝাল ছাড়া খাবার। এখন আমি তোমার জন্য আলাদা বাজার করি। তবে তুমি আমার মতো হয়েছো। মাংস খেতে পছন্দ করো। আগামী শুক্রবার একটা বিয়ের দাওয়াত আছে। শুধু তুমি আর আমি যাবো।
প্রিয় কন্যা আমার-
ইদানিং তুমি খুব দুষ্ট হয়েছো। হুটহাঁট তুমি আমাকে বলো- বাবা তুমি টাক্কু। বাবা তুমি টাক্কু। তারপর হাসতে থাকো। আমি বেশ অবাক হই! আমার মাথা ভরতি চুল। তখন আমি তোমাকে বলি- বাবা কেউ টাক্কু বলে? তখন তুমি হাসতে হাসতে বলো- তুমি বিড়াল। তুমি বিড়াল। আমি করুণ গলায় তোমাকে বলি- বাবাকে কেউ বিড়াল বলে? তুমি হাসতে থাকো। তোমার হাসি ভালোবাসি। দুঃখজনক কথা হলো- এই বয়সেই তুমি মোবাইল ব্যবহার করতে শিখে গেছো। নিজে নিজেই ইউটিউব বের করে নাও। খুঁজে খুঁজে তোমার পছন্দের কার্টুন দেখো। এমনকি তুমি টিকটক দেখো। লাইক দাও। তোমার মা একেবারেই চায় না তুমি মোবাইল হাতে নাও। তুমি মোবাইল ধরলে তোমার মা আমার উপর রাগ করে। অথচ আমি তোমার হাতে মোবাইল দেইনি। তুমি নিজেই মোবাইল খুঁজে নিয়েছো।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




