somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

এই সমাজ- ৫৩

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের জীবনে রসিকতার দরকার আছে।
আনন্দ, বিনোদনের দরকার আছে। নইলে জীবন রসহীন হয়ে যাবে। আনন্দ বিনোদন নিতে হবে- বই থেকে, মুভি দেখে এবং হাদীস থেকে। আমাদের নবীজিও রসিকতা করতেন। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। একবার এক বৃদ্ধা মহিলা, নবীজিকে জিজ্ঞাসা করেছিল- 'আমি বুড়ী হয়ে গেছি। আমি কি জান্নাতে যেতে পারবো'? প্রশ্ন শুনে নবীজি উত্তর দিলেন- 'না, কোন বৃদ্ধ জান্নাতে যাবে না'। এই কথাটা শুনে, সেই বৃদ্ধা দুঃখ নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। সেটা দেখে আল্লাহর রাসুল তাকে ডাক দিয়ে বললেন- 'শোন, জান্নাতে কেউ বুড়ো থাকবে না। জান্নাতে সবাই চীর-যৌবন প্রাপ্ত হবে। কেউই বুড়ো হবে না। এমন কথা শুনে, বুড়ী খুশি হয়ে চলে গেল। নবীজির রসিকতাটা ধরতে পেরেছেন? কি সুন্দর রসিকতা দেখলেন!

আমি একজন রসিক মানুষ। আমি প্রচুর রসিকতা করি।
আমাদের চাঁদগাজীও দারুন রসিক মানুষ। যাইহোক, আমাদের এলাকায় এক ভাবী আছেন। একসময় ভাবীরা দারুন গরীব ছিলেন। যার সাথে বিয়ে হলো সেই বেচারাও গরীব। এমনকি ভাবী গরীব ঘরের মেয়ে। ভাবির স্বামী বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে গেলেন। এবং নিজ চেষ্টায় একটা ভাল চাকরী পেয়ে গেলেন। সেই চাকরীতে প্রমোশন পেয়ে পেয়ে এখন তাঁরা বিরাট ধনী। এখন ভাবীর হাতে অনেক টাকা। ভাবী দুই হাতে টাকা খরচ করেন। প্রতিদিন সে শপিং এ যায়। এলোমেলো হাবিজাবি অনেক কিছু কিনে আনেন। তার স্বামী কিছু বলেন না। কারন একসময় তাঁরা অনেক দরিদ্র ছিলো। এখন অবস্থা ফিরেছে। ভাবী স্বামীর ক্রেডিট কার্ড নিয়ে শপিং এ যান। ইচ্ছা মতো কেনাকাটা করতেই থাকেন। ভাবী গরুর মাংস রান্না করলেই আমাকে ফোন দেন।

কয়েক বছর ধরে ভাবী ধার্মিক হয়ে গেছেন।
হিজাব ধরেছেন। বোরকা ধরেছেন। এখন ভাবীর কাছে কেউ টাকা চাইলে- ভাবী তাকে টাকা দিয়ে দেন। অনেকেই তার কাছ থেকে মিথ্যা বলে টাকা নেয়। অমুকের বাচ্চা হবে- টাকা লাগবে। ভাবী দিয়ে দেয়। ওমুক অসুস্থ চিকিৎসা করাবে কিন্তু টাকা নেই। ভাবী টাকা দিয়ে দেয়। একদিন আমি ভাবীকে বললাম, আপনি যে টাকা চাইলেই দিয়ে দিচ্ছেন। এরা তো মিথ্যা বলে আপনার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আপনাকে বোকা বানাচ্ছে। তখন ভাবী বলল, এটা আমার সমস্যা না। এটা ওদের সমস্যা। আমি যে নিয়তে দিয়েছি সেটা ঠিকই আল্লাহ কবুল করবেন। আর ওদের বিচার আল্লাহ করবেন। আমি বললাম, ভাবী আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিন। আমি যা খুশি তাই করবো। আল্লাহ আমার বিচার করবেন। ভাবী বললেন, রাজীব এই দুনিয়া কিছুই না। দুই দিনের দুনিয়া। পরকালটাই আসল। পরকালের কথা ভাবী।

আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা চলছে।
ধর্মের বিষয়ে মানুষ একদম কাঁত হয়ে যায়। মদের নেশার চেয়ে ধর্মের নেশা ডেঞ্জারাস। আমার নানীর কথা বলি- আমার নানী বিরাট ব্যবসায়ী ছিলেন। বিক্রমপুর এবং ভারতের আসামের গোহাটিতে নানীর ব্যবসা ছিলো। নানী পিতলের থালা বাসন হাড়ি পাতিল ইত্যাদি জিনিসপত্র তৈরি করতেন। টানা ত্রিশ বছর ব্যবসা করে নানী অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়ে গেলেন। খুব পরিশ্রম করতে পারতেন নানী। আসামে বাড়ি করেছেন, বিক্রমপুরে বাড়ি করেছেন, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ধুপখোলা মাঠের কাছে বাড়ি করেছেন। যাইহোক, একসময় আমার নানী এক সাধু বাবার খপ্পরে পড়লেন। এরপর পাঁচ বছরের মধ্যে নানীর ব্যবসা শেষ হলো। জমানো টাকা পয়সা সব শেষ হলো। ব্যবসা উঠে গেলো। নানী হয়ে গেলেন প্রায় পথের ফকির।

নানী ব্যবসা বাদ দিয়ে মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াতেন।
আজমী শরীফ গিয়ে মাসের পর মাস থাকতেন। চুল আচড়ানো বাদ দিয়েছেন। চুলে দেখা দিলো জট। দূরদূরান্ত থেকে নানান রকম পীর ফকির আসতেন বাসায়। নানীকে তজবি, জায়নামাজ, তাবিজ ইত্যাদি হাবিজাবি দিয়ে যেতেন, বিনিময়ে টাকা পয়সা নিয়ে যেতেন। ঘরে টাকা না থাকলে নানী গহনা দিয়ে দিতেন। একদিন নানী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু সে ডাক্তার দেখাবেন না। কারন তার পীর বাবা মানা করেছেন ডাক্তার দেখাতে। সেই পীর জ্বীনের মারফত নানীর চিকিৎসা করছেন। ফলাফল রোগে শোকে ভূগে নানীর মৃত্যু। এবং নানীর মৃত্যুর পর দেখা গেলো তার কোনো সম্পদ নেই। ধর্মের পেছনে ছুটে, ধনী থেকে আমার নানী দরিদ্র হয়ে মারা যান।

আমাদের দেশে কোনো কালেই পীর ফকিরের অভাব নেই।
এখন তো ঢাকা শহরের অনেক ফ্লাটে জিকির হয়। বছরে দুই তিনবার উৎসব হয়। বিরাট খানা দানা হয়। সমগ্র বাংলাদেশে কত শত বাবা যে আছে তার হিসাব নাই। আর এদের মুরিদের শেষ নেই। আমি নিজে এরকম কিছু বাবার বাসার অনুষ্টানে গিয়েছি। নিজের চোখে দেখে দেখেছি- তবলা, হারমোনিয়াম নিয়ে গান বাজনা হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ তালে তালে মাথা দোলাচ্ছে। পীর বাবা উঁচু আসনে বসে আছেন। পীর বাবার পেট বিশাল। গলায় মালা। মাথায় নেপালি টুপি। হাতে সব গুলো আঙ্গুলে পাথর বসানো আংটি। অনেকে এসে বাবার পায়ে চুমু দিচ্ছে। কেউ কেউ হাতে টাকা গুজে দিচ্ছে। পীর বাবা বই লিখেছেন। সেই বই ভক্তরা কিনে নিচ্ছে। তার দরবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ভিডিও করা হয়েছে। সেই ভিডিও করা অনুষ্ঠানের সিডি লোকজন আগ্রহ নিয়ে কিনছে।

ধর্ম বদলাতে বদলাতে একদম কোরআন হাদিসের বাইরে চলে গেছে।
আসল ধর্ম হারিয়ে গেছে। বলা হয় আল্লাহকে পেতে হলে আগে নবীকে পেতে হবে। নবীকে পাওয়া সহজ নয়। এই সমস্ত পীর বাবারা নবীকে পাইয়ে দিবেন। এজন্য পীরের মুরিদ হতে হবে। পীরের উপর সম্পূর্ন ভক্তি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। পীর বাবার কথায় উঠতে হবে, বসতে হবে। বড়ই কামিলদার পীর। তার অনেক ক্ষমতা। কারো বাচ্চা না হলে সমস্যা নাই। বাবায় পেটে হাত বুলিয়ে দিলেই বাচ্চা হয়ে যায়। ছেলেমেয়ে লেখাপড়ায় ভাল না। কোনো সমস্যা নাই। পীর বাবা ফু দিয়ে দিবেন। এখন চোখ বন্ধ করে ছেলেমেয়ে জিপিএ- ফাইভ পেয়ে যাচ্ছে। কেউ হারিয়ে গেলে পীর বাবা চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে। এরকম বহু গল্প দিয়ে ভরা প্রতিটা পীর বাবাদের জীবন। পীর বাবা মারা গেলে, সে তার পাওয়ার তার ছেলেকে দিয়ে যান। বংশ পরম্পরায় চলছে পীরালি ব্যবসা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×