আমার পছন্দের লেখকদের মধ্যে একজন- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার জনপ্রিয় একটি উপন্যাস পথের পাঁচালী। এটি বড়দের জন্য লেখা। বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে ছোটদের জন্য উপন্যাসটি কিশোর সংস্করণ বের করা হয়। যার নাম- আম আঁটির ভেঁপু। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলো- অপু। অপুর বোনের নাম দূর্গা। দুই ভাই বোনের গ্রামেই বসবাস। পিঠাপিঠি দুই ভাইবোন। মায়ের শাসন উপেক্ষা করে দুই ভাই বোন ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে যায়। এবং পথ হারিয়ে ফেলে। এক বৃদ্ধার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দুই ভাইবোনের ধারনা এই বৃদ্ধা নিশ্চিত ডাইনী।
বইটি পড়লে আপনি অটোমেটিক শৈশবে চলে যাবেন।
দুই ভাইবোন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা নেই। ক্ষুধা ভুলে থাকার জন্য দুই ভাই বোন সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। দুই ভাই বোনের একটাই চাওয়া- পেট ভরে ভাত খাওয়া। অভাবের কারনে দূর্গার চুরীর অভ্যাস আছে। লেখক বিভূতি গ্রামের এমন সুন্দর করে বর্ননা দিয়েছেন, আপানার ইচ্ছা করবে গ্রামে চলে যেতে। যাইহোক, অপু দূর্গার মা একজন মমতাময়ী মা। দুই ভাই বোনের ভালোবাসা আপনার চোখে পানি এনে দিবে।বিভূতিভূষণের লেখা মানেই গ্রাম। গ্রামের জীবনযাপনের গল্প। এযুগের ছেলেমেয়েরা এরকম গল্প উপন্যাস পড়ে না। সে যাজ গে, লেখক বিভূতি অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে দুই ভাইবোনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
লেখক বনফুলের 'নিমগাছ' গল্পটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।
এরপর তার গল্প সমগ্র পড়ে ফেললাম। এক কথায় দারুন। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে বনফুলের লেখার মিল পাই। সে যাই হোক, বনফুল অনেক কবিতা লিখেছেন। সেই কবিতা গুলোও দূর্দান্ত। এই লেখক পেশায় ছিলেন ডাক্তার। প্যাথলজিস্ট হিসাবে ৪০ বৎসর কাজ করেছেন। সবাই জানেন বনফুল তার ছদ্মনাম। আসল নাম- বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। একবার বনফুল খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে ভরতি হবে। অপারেশন করাতে হবে। সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী তার স্বামীকে নিয়ে দেখতে গেলেন বনফুলকে। তাঁরা দেখলেন বনফুল বই পড়ছেন মন দিয়ে। আশাপূর্না দেবী জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আজ হাসপাতালে ভরতি হবেন। আর এখন বই পড়ছেন? বনফুল বললেন, হাসপাতাল থেকে যদি আর না ফিরি। তাই বইটা পড়ে নিচ্চি। নানান রকমের ব্যাঙ নিয়ে বই।
বনফুল ভালো রান্না করতে জানতেন।
মাংস এবং মাছ তার খুব পছন্দ। ঝাল ঝাল করা মাংস। খাওয়া শেষে খেতেন মিষ্টি। কিন্তু তার ডায়বেটিকস ছিলো। বনফুল প্রতিদিন লিখতেন। বনফুল কখনও ভাবেন নি লেখালেখি করে টাকা উপার্জন করা যায়। বেশ নামডাক হয়ে যায়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় সমসাময়িক লেখক, দুজনে ছদ্মনামে লেখা শুরু করেছিলেন। অল্প দু'চারটি গল্প লেখার পর তারাশঙ্কর স্বনামে আত্মপ্রকাশ করলেও বলাইচাঁদ সারাজীবন 'বনফুল' ছদ্মনামেই থেকে গেলেন। বনফুল এক হাজারের বেশি কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার রচনাবলী সমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে ।