
আচ্ছা, আপনি কি কখনও ডিম ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছেন?
আমি প্রায়'ই খাই। মাঝে মাঝে মাছ মাংস কিচ্ছু ভালো লাগে না। তখন মাকে বলি, মা আমাকে একটা ডিম ভর্তা করে দাও। গরম ভাতের সাথে ডিম ভর্তা দারুন লাগে। ডিম সিদ্ধ করে, পেঁয়াজ- একটা শুকনো মরিচ পুড়ে, সরিষার তেল আর একটু লবন। খেয়ে দেখবেন ভালো লাগবে। অনেক সময় দেখবেন দরিদ্র লোক রাস্তায় আপনাকে বলবে, অনেক ক্ষুধা লেগেছে। এই ধরনের লোককে ধরে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবেন। পেট ভরে খাইয়ে দিবেন। দেখবেন অনেক খশি হবে। এবং আপনারও অনেক খুশি ও আনন্দ লাগবে। হয়তো আপনার তাতে এক দুই শ' টাকা খরচ হবে। অন্যকে খুশি করার মধ্যেই আমাদের আনন্দ নিহিত রয়েছে। একজন রিকশা চালককে চল্লিশ টাকা ভাড়া বলে, পঞ্চাশ টাকা দিবেন। দেখবেন, রিকশাচালক কি সুন্দর একটা হাসি আপনাকে উপহার দেয়।
হিংসা জিনিসটা অনেক খারাপ।
একদম মানুষকে ভেঙ্গেচুড়ে শেষ করে দেয়। হিংসাকে মন থেকে একদম ডিলিট করে দিবেন সারা জীবনের জন্য। তাতেই আপনার মঙ্গল রয়ছে। আপনার বন্ধু গাড়ি কিনেছেন, আপনি কিনতে পারেননি। এজন্য বন্ধুকে কেন হিংসা করতে হবে? বরং বন্ধুর উন্নতিতে আপনি অনেক খুশি হবেন। হাত তালি দিবেন। বন্ধুকে উৎসাহ দেবেন, অভিনন্দন দেবেন। আপনি চেষ্টা করুণ, পরিশ্রম করুণ গাড়ি আপনিও কিনতে পারবেন। আপনার যেটা নেই, কিন্তু অন্যের আছে, সেটা নিয়ে কখনও মন খারাপ করবেন না। আমাদের নবীজি বলেছেন, আখিরাতে যার সম্পদ কম থাকবে, তার হিসাব কম হবে। যার সম্পদ বেশি তার জ্বালাও বেশি। এই সমাজে দূর্নীতিবাজদের টাকা ও সম্পদের অভাব নেই। অথচ রাতে তাদের ঘুম হয় না। কোনো খাবারে তাঁরা স্বাদ পায় না। এছাড়া আছে নানান রকম ভয়। অথচ একজন খেটে খাওয়া মানুষ বালিশে মাথা রাখা মাত্রই ঘুমিয়ে যান। শুকনা মরিচ সাথে রসুন দিয়ে ভরতা করে খায়। দারুন স্বাদ পায়।
হিংসা দূর করার উপায় হচ্ছে- গৌতম বুদ্ধকে জানা।
তার আদেশ ও নিষধ মেনে চলা। তারপর পীথাগোরাসকে জানুন। এরিস্টটলকে জানুন। দুনিয়ার সমস্ত মহৎ মানুষকে জানুন। তাদের ভালোবাসুন। সময় পেলেই বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকুন। দেখুন মহাকাশ কি বিশাল ও কত রহস্যময়। যত 'জ্ঞান' অর্জন করবেন, আপনার মধ্য থেকে তত হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। জ্ঞানের চেয়ে সুন্দর দুনিয়াতে আর কিচ্ছু নেই। জ্ঞান আপনাকে সুন্দর করবে, মহৎ ও মহান করবে। আপনার মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ক্ষুদ্রতা ও তুচ্ছতাকে হাওয়ায় মিলিয়ে দেবে। তখন কে গাড়ি কিনলো, কে ফ্লাট কিনলো, কে ইউরোপ ভ্রমনে গেলে তখন আপনার গায়ে লাগবে না। জীবনকে আনন্দময় করার জন্য আপনার দুটা জিনিস দরকার- এক, লোভহীন জীবনযাপন করা ও দুই, মন থেকে সমস্ত হিংসা বিদ্বেষ ধুয়ে ফেলা। তাহলেই পৃথিবীটা আপনার কাছে আনন্দময় হয়ে ধরা দেবে।
আমার নিজের কথা বলি- দুনিয়াতে আমার কোনো সম্পদ নেই।
আগামীকাল কি খাবো আমি জানি না। অথচ দেখুন, আগামীকাল আমার বন্ধুরা যাচ্ছে ঢাকার কাছে সাভারে এক রির্সোটে। সেখানে তাঁরা সকলে মিলে সকালে একসাথে নাস্তা করবে। বউ বাচ্চা নিয়ে সারাদিন সেই রির্সোটেই থাকবে। হইচই করবে, আনন্দ করবে। অনেক মজা করবে। ওদের দেখে আমার হিংসা লাগে না। বরং আমি আনন্দ পাই। মন থেকে ওদের জন্য প্রার্থনা করি। ফেসবুকে ওদের ছবিতে লাইক দেই। আমার আপন ভাই দুটা ফ্লাট কিনেছে। গাড়ি কিনেছে, প্রতি বছর লন্ডন, আমেরিকা, অস্টেলিয়া বেড়াতে যাচ্ছে। আর আমি সামান্য কক্সবাজার যেতে পারছি না। তবুও আমার মাঝে হিংসা আসে না। ভাই ভাবীকে এয়ারপোর্ট নামিয়ে দিয়ে আসি। আমি অন্যদের হাসি মাখা মুখ দেখে আনন্দ পাই। আমার নিজের নেই বলে, যার আছে, তাকে হিংসা করবো এমনটা আমি কোনদিন পারবো না। আমার মা প্রায়ই আফসোস করে বলেন, তোর সব ভাই বড় বড় অবস্থানে চলে গেলো আর তোর কোনো পরিবর্তন হলো না। আমি আসলে কোনো পরিবর্তন চাইনি। আমি চাইলে শালা সূর্যকে আমার ঘরে বন্ধী করে রাখতে পারতাম।
আমি বই পড়ি, লিখি এতে আমি অনেক আনন্দ পাই।
আমি পৃথিবীর সেরা মুভি গুলো দেখি। আমি প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা পড়ি। টিভিতে নিউজ দেখি। রাস্তায় বের হয়ে মানুষ দেখি। মানুষের গল্প শুনি। যে মানুষকে সমাজের সবাই ধনী ও সুখী বলে মনে করে, সেই মানুষকে আমি আড়ালে কাঁদতে দেখেছি। আমি কোনোদিন ইউরোপ যেতে পারবো না। তাই আমি ইউটিউবে বসে বসে পৃথিবীর সব দেশ দেখে নিয়েছি। আমার বাপ দাদার সম্পত্তির ভাগ আমি হাসি মুখে ছেড়ে দিয়েছি। মায়ের সম্পদ থেকে আমি কিচ্ছু নিই নি। একটা মানুষ আর কত দিন বাঁচে? কি করবো আমি টাকা দিয়ে? কি করবো আমি সম্পদ দিয়ে। সিলেটের শিল্পী হাসন রাজাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনার তো অর্থ ও সম্পদ অনেক আছে, তাহলে আপনার বাড়ি ঘরের এই রুগ্ন অবস্থা কেন? হাসন রাজা উত্তরে বলেছিলেন, অল্প কিছু দিন আমাদের আয়ু। কি দরকার দালান কোঠা রঙ্গিন করে সাজানোর? যদি আমি বহু বহু বছর বেঁচে থাকতাম, তাহলে দেখতেন বাড়ী ঘর কেমন করে সাজাতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৩ রাত ১০:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




