
আমার ইচ্ছা ছিলো আজ রাজনীতি নিয়ে লিখব।
এক লাইন লিখলামও। ''এদেশে কোটি কোটি গরীবের কী করে চলে সে রহস্য ভেদ করা সম্ভব না। ধনীরা সুখসুবিধা ও প্রতিষ্ঠার মধ্যে গুটি পাকিয়ে থাকেন।'' এরপর আর লিখতে ইচ্ছা করলো না। আগামীকাল ঈদ। কাজেই রাজনীতির মতো রসকসহীন বিষয় নিয়ে আজ লিখব না। তখন ইচ্ছা করলো বাঘ নিয়ে লিখি। বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা আমার আছে। কোনো পশু পাখিই হিংস্র না। সাপকে যদি আপনি বিরক্ত না করেন, যদি ভয় না দেখান তাহলে সাপ আপনাকে কামড়াবে না। এই পৃথিবী তো শুধু আমাদের (মানুষ) নয়। পশু পাখি সবার সমান অধিকার। যাইহোক, আবার বাঘ দেখার অভিজ্ঞতাটা বলি।
একবার সুন্দরবন গিয়েছিলাম। জায়গাটার নাম ছিল কটকা।
সেখানে আমি বাঘ দেখেছিলাম। সেই গল্প আমি অনেকের কাছে করেছি। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি। বিশ্বাস না করুক, আমি আমার কথা গুলো বলেই যাবো। কক্সবাজারের চেয়ে আমি সুন্দরবন বেশি বার গিয়েছি। বন জঙ্গল আমার ভালো লাগে। প্রকৃতির চেয়ে সুন্দর তো আর কিছু নেই। প্রকৃতি মানুষকে বদলে দেয়। সকল রাগ অভিমান ভুলিয়ে দেয়। ভালোবাসতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, মানবিক ও হৃদয়বান করে তোলে। তাই সময় পেলেই সকলের প্রকৃতির কাছে যাওয়া উচিৎ।
মূল গল্পে ফিরে যাই।
মাছরাঙ্গা লঞ্চে করে আমরা সুন্দরবন যাই। আমরা মোট ১৩০ জন। দলে ছেলেবুড়ো সবাই আছে। আমি আমার দলের লোকদের চোখ এড়িয়ে একাই বনের গভীরে চলে যাই। তখনও সন্ধ্যা হয়নি। চারিদিকে বড় নির্জন। নানা রকম পাখির ডাক। এক খন্ড উচু টিলার উপর দাড়িয়ে গেলাম। আর দেখতে পেলাম বাঘ! ইয়েস রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তার চোখে উত্তেজনা। পায়ের নিচে সদ্য শিকার করা একটা হরিণ। জীবন্ত। হরিণটা ছটফট করছিলো। বাঘটা হরিণের বুকের উপর পা দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো জমিদারের মতো।
বাঘটা আমার দিকে তাকালো।
একদম চোখে চোখ। আমি মুগ্ধ হয়ে বাঘের দিকে চেয়ে রইলাম। সুন্দরবনে যারা আসে, তারা অনেক কিছুই দেখে কিন্তু বাঘ দেখতে পায় না। খুব বেশি হলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে। আমি বাঘ দেখে দৌড়ে পালিয়ে গেলাম না। লুকানোর চেস্টাও করলাম না। বনের রাজাকে মন ভরে দেখছিলাম শেষ বেলার আলোতে। বাঘ আমাকে দেখে বুঝতে পেরেছিলো তার ভয়ের কোনো কারন নেই। তাই বাঘ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি। এবং আমিও জানি, বাঘ আমার ক্ষতি করবে না। আমরা দুজনই দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম- আমরা কেউ কারো জন্য ক্ষতিকর না।
আমি বললাম, তুমি খাও। আমি তোমায় বিরক্ত করবো না। আমাকে বন্ধু ভাবতে পারো। বাঘটা মনে হয় আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আমি মানুষ তো। আমি ফিরে এলাম। এই গল্প আমি যাকেই বলেছি, সে হেসেছে। বাঘ দেখেছি এটা কোনো বীরত্ব নয়। বাঘ মারা বীরদের অনেক গল্প আছে। বাঘ গুলো বড় অসহায়। ঢাকা চিড়িয়াখানায় দুটো বাঘ আছে। রোগা, রুগ্ন এবং অসুস্থ। মানুষের বুদ্ধি আছে, বন্দুক আছে। বাঘের চেয়ে মানুষের নিষ্ঠুরতা অনেক বেশি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




