অনেকদিন শাহেদ জামালকে নিয়ে কিছু লেখা হয় নাই।
শাহেদ জামাল আমার বন্ধু। ভেরি ক্লোজ ফ্রেন্ড। একদম ন্যাংটা কালের বন্ধু। আপনারা তো জানেন'ই শাহেদ জামাল নীলা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতো। সেই মেয়েটা অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে এখন স্বামী সন্তান নিয়ে আমেরিকাতে সুখেই আছে। অবশ্য নীলাকে দোষ দেওয়া যাবে না। দোষ শাহেদ জামালের। সে একটা চাকরি জোটাতে পারেনি। এদিকে নীলা আর কত অপেক্ষা করবে? কোনো বাপ তো একজন বেকারের সাথে নিজের মেয়ে দিবে না। শাহেদ জামালের সমস্যা হলো তার নাক উঁচু। মনের মতো চাকরি পায়নি বলে, সে চাকরি করলো না। অথচ কত বিলিয়ান্ট ছাত্র ছিলো শাহেদ। সবচেয়ে বড় কথা সে একজন সহজ সরল ভালো মানুষ। মানবিক এবং হৃদয়বান।
শাহেদ আর আমি একই স্কুল-কলেজে পড়েছি।
আমার মনে আছে কলেজে উঠেই আমরা দুজন দুটা নতুন হিরো সাইকেল কিনি। সে সাইকেল দিয়ে সারা ঢাকা শহর আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি। ঢাকা শহরের এমন কোনো অলি গলি বাদ নেই যেখানে আমরা যাইনি। পুরান ঢাকায় গিয়ে আমরা দুই বন্ধু মিলে বিরানী খেয়েছি, চা দিয়ে বাকরখানি খেয়েছি। ডাল পুরী, আলু পুরী খেয়েছি। আমি আর শাহেদ একবার তো সাইকেলে করে মুন্সিগঞ্জ চলে গেলাম। তখন আমাদের চ্যাংড়া বয়স। রক্ত গরম। এখন কিন্তু সাইকেল চালিয়ে মুন্সিগঞ্জ যেতে পারবো না। যাইহোক, নীলার বিয়ে হওয়ার পর সেই শাহেদ জামাল এখন কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছে। সারাদিন রমনা পার্কে বসে থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। একদিন রমনা পার্কে গেলাম। শাহেদের সাথে দেখা হলো।
শাহেদ জামাল একবার আমাকে এক পীর বাবার কাছে নিয়ে গেলো।
কেরানীগঞ্জে পীর বাবার আস্তানা। গেলাম সেখানে। পীর বাবার নাকি অনেক ক্ষমতা। দীর্ঘদিন ধরে অলৌকিক ক্ষমতা দেখার আমার খুব শখ। অলৌকিক ক্ষমতা, কোনো কৌশল নয়। পীর বাবা ধ্যানে বসেছেন। আমি আর শাহেদ পীর বাবার ধ্যান ভাঙ্গার অপেক্ষা করেছি। একসময় পীর বাবার ধ্যান ভাঙ্গল। আমাদের ডাক পড়লো। অতি সাধারন এক লোক। চোখে সুরমা দিয়েছে। মুখ ভরতি দাঁড়ি। ভগ্ন স্বাস্থ্য। চুলে জট। পীর বাবা গাঁজা খাচ্ছেন। গন্ধে আমার বমি পাচ্ছে। শাহেদ বলল, বাবা আজ আমার বন্ধুকে সাথে এনেছি। খুব ভালো ছেলে। পীর আমাকে হাতের ইশারায় তার সামনে বসতে বললেন। গাঁজার গন্ধে আমার বমি পাচ্ছে, চোখ জ্বলছে। পীর বলল, বাবাজ্বী খাজা খাবেন? গাঁজা খাওয়ার পর দুধ দিয়ে রুটি খেলে মজা পাবেন।
একদিন শাহেদ আমাকে কলতাবাজার নিয়ে গেলো।
চিপা গলির শেষ মাথায় এক বাড়িতে। পুরানা আমলের ছোট দোতলা বাড়ি। বসার ঘরে বসলাম। পুরো ঘরে দরিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট। শাহেদ আমাকে বসিয়ে রেখে উধাও হয়ে গেলো। কার বাড়ি, কার কাছে এলাম কিছুই জানি না। শাহেদ হঠাত কোথায় গেলো সেটাও জানি না। এক মেয়ে এলো। সুন্দর মেয়ে। চোখে মুখে চটক আছে। ভরাট বক্ষ। মেয়েটা একটা সাধারন সূতি শাড়ি পড়েছে। মেয়েটা বলল, আপনার কথা শাহেদের কাছে অনেক শুনেছি। আপনার কথা শুনে শুনে আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করলো। অনেকদিন বলার পর আজ শাহেদ আপনাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। আমার অবাধ্য চোখ বারবার মেয়েটার দিকে চলে যাচ্ছে। মেয়েটার শাড়ির আঁচল সরে গেছে। বারবার চোখ সেখানেই যাচ্ছে। মেয়েটাকে কি বলল, শাড়ির আচল ঠিক করুণ। প্লীজ।
যাইহোক, সেই পীর বাবার কথা বলি-
পীর বাবা বললেন, মনের দুঃখে পীর হয়ে গেছি। বিয়ে করেছিলাম কিন্তু বউ মাগী খেতে বসলে ভাত তরকারী সব দেয়। কিন্তু পানি দেয় না। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর- একই ঘটনা। পানি দেয় না। পানির কথা বললেই বলে, পানি নিজে নিয়া খান। একদিন এমন রাগ উঠলো, দিয়ে দিলাম বেটিরে তালাক। এরপর থেকে পীর হয়ে গেলাম। পীর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার ভাগ্যেও পানি জুটবে না। তোমার বউ তোমাকে সব দিবে। ভাত তরকারী সব কিন্তু পানি দিবে না। পানির কথা জিজ্ঞেস করলেই বলবে, পানি ফ্রিজ থেকে নিয়ে খাও। ইদানিং আমি লক্ষ্য করছি, খেতে বসলে সুরভি আমাকে পানি দেয় না। কিন্তু ভাত তরকারী সব দেয়। পানির কথা জিজ্ঞেস করলে বলে- পানির বোতলটা ফ্রিজ থেকে নিয়ে নিতে পারছো না!
কলতাবাজারের সেই মেয়েটার কথা বলে লেখাটা শেষ করি।
মেয়েটার নাম মুনা। আসল নাম কিনা জানি না। মুনা আমাকে চা দিলো। চমৎকার চা। সুন্দর এক সন্ধ্যা। সাথে সুন্দর চা। তার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে এক রহস্যময় নারী। মুনা বলল, আজ আর আপনার বন্ধু আসবে না। আজ রাতে আপনি আমার মেহমান। সারারাত আপনার সেবা-যত্ন করবো আমি। আমি বললাম, কি সেবা যত্ন? মুনা হাসলো। সহজ সরল সুন্দর হাসি। মুনা আমার পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো। মুনার শরীর থেকে সুন্দর পারফিউমের গন্ধ এলো। ভার্সেস পারফিউমের গন্ধ পুরুষকে মাতাল করে দেয়। মুনা বলল, আমি গান গাইতে পারি, নাচতে পারি। খুব সুন্দর করে আদরও করতে পারি। মেয়েটা একের পর এক টোপ ফেলছে। বোকা মেয়েটা জানে না- আমি অন্য ধাতুতে গড়া। আমাকে কোনো কিছু দিয়েই বেঁধে রাখা যাবে না।