
হ্যালো ফারাজা!
এই মুহুর্তে তুমি আমার পাশে বসে মোবাইলে কোকোমেলন কার্টুন দেখছো। অথচ তুমি জানো না আমি তোমাকে নিয়েই লিখছি। তুমি বড় হবে। তোমাকে নিয়ে লেখা গুলো পড়বে। অবাক হবে। বিস্মিত হবে। মন খারাপ হবে। আবার ভালোও লাগবে। যাইহোক, পুজো শুরু হয়ে গেছে। মন্দির গুলো অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। দেবী প্রতিমা গুলোকে জীবন্ত মনে হয়। ইচ্ছা ছিলো তোমাকে নিয়ে কোনো পূজা মন্ডপে যাবো। ঢাকঢোল বাজবে। রমনীরা শাখাসিদুর পরবে। সসবার চোখেমুখে আনন্দ! কিন্তু ব্যস্ততার কারনে মন্দিরে যেতে পারছি না। সকালে যখন বাসা থেকে বের হই, তুমি থাকো গভীর ঘুমে। আবার রাতে বাসায় ফিরে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছো। তোমার সাথে দেখা হচ্ছে না। তোমাকে নিয়ে বাইরে যেতে পারিছ না।
প্রিয় কন্যা আমার-
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন- Poverty is the worst form of violence! আমি তোমাকে বলতে চাই- আবেগ দিয়ে কবিতা লেখা যায় কিন্তু আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। যাদের আবেগ বেশি তাঁরা কষ্ট বেশি পায়। তাদের কাঁদতে হয় অনেক। তাই তোমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। সব সময় লজিকের মধ্যে থাকবে। বর্তমানে বিশ্বের অবস্থা ভালো না। একদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ করছে। অন্যদিকে ইজরায়েল আর ফিলিস্তিন। পরমাণু বোমা আছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার হাতে। ইসরাইলের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে অনেকে মনে করেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে বহুদিন ধরে শান্তি নেই। ইরান আর সৌদি বুদ্ধিমান দেশ হলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসতো অনেক আগেই। ভিয়েতনাম আর আমেরিকা একবার যুদ্ধ করেছিলো। পাকিস্তান ৭১ এ আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ছিলো। আমাদের নবীজি অনেকবার যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে যুদ্ধেই পৃথিবীটা একদিন শেষ হয়ে যাবে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
তোমাকে ইজরাইল আর ফিলিস্তিন সমস্যাটা বুঝিয়ে বলি। মূলত ফিলিস্তিনিরা হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিশ্বের কোনো দেশেই সংখ্যালঘুরা শান্তিতে থাকতে পারে না। যেমন আমাদের দেশে রোহিঙ্গারা ভালো নেই। তাছাড়া দরিদ্র দেশে তাঁরা আর কতটা ভালো থাকবে? এমনকি আমাদের দেশে প্রতিবছর নিয়ম করে পুজোর সময় হিন্দুদের প্রতিমা গুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। ভারতের মুসলমানরা কি খুব ভালো আছে? যাইহোক, ইজরাইলে ফিরে যাই। ইজরায়েলে সাংবিধানিকভাবে মুসলিম ও ইহুদিদের সমান অধিকার। ফিলিস্তিন বলে যেই অংশ আছে সেটা নিয়ন্ত্রন করে PLO নামের একটি সংগঠন। কিন্তু তারা বিদ্যুৎ, পানি ও খাদ্য এসবের জন্য ইজরায়েলের উপর নির্ভর করে। ঠিক অতীতের পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান যেন! ফিলিস্তিনিরা ইজরাইলকে অস্বীকার করতে চায়। এবং ইজরাইকে মাইনাস করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
ইজরাইলে সুন্দর ইতিহাস আছে।
সেই মধ্যযুগ থেকেই তাদের ইতিহাস শুরু। তখন অবশ্য ইহুদীরা মূর্তিপূজা করতো। সেই সময় বিশ্ব জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত ছিলো না। তখন ইহুদীদের শাসন করতো রোম শাসকেরা। এই শাসকেরা ইজরায়েলের নাম বদলে দেয়। নিজেদের পছন্দের নাম দেয়- 'প্যালেস্টাইন'। সেই সময় আরবেরা যুদ্ধবাজ ছিলো। যুদ্ধ না করলে তাদের পেটের ভাত হজম হতো না। এইসব যুদ্ধের কারন ধর্ম। ধর্ম পুরো বিশ্বের মানুষের শুধু ক্ষতিই করেছে। যাইহোক, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য, একসময় সিদ্ধান্ত হয়- ফিলিস্তিন অঞ্চলে দুটি দেশ হবে। একটা আরব দেশ ও অন্যটা ইহুদি দেশ। কিন্তু আরবেরা এই সিদ্ধান্ত মানতে চায় না। ফলাফল আবার যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে মুসলমানরা বারবার পরাজিত হয়। কিন্তু তাঁদের গোয়ার্তুমি থামে না। ধার্মিকদের লজিকের অভাব। ধর্ম তাদের মাথা খেয়ে ফেলেছে। একদম ভোঁতা করে দিয়েছে।
শেষমেষ জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে ইহুদিদের জন্য ইজরায়েল নামের রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।
কিন্তু এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ইজরাইল দখল করার জন্য 'হামাস' নামে জঙ্গী সংগঠন উঠেপরে লেগেছে। হামাস কোনো দিনই ইজরাইলের সাথে পারবে না। নো নেভার। ফলাফল সাধারন মানুষ মারা যাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা আহত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন আমেরিকা চাইলে ইজরাইল ফিলিস্তিনির সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমি এই বিশ্ব নিয়ে চিন্তিত। কারণ একদিন আমি মরে যাবো ফারাজা। তুমি থাকবে। বিশ্বে এরকম যুদ্ধ বিগ্রহ চলতে থাকলে তুমি কিভাবে থাকবে? তোমাকে কোথায় রেখে যাবো আমি? প্রয়োজন একটা সুন্দর পৃথিবী। আনন্দময় পৃথিবী। যে পৃথিবীতে যুদ্ধ হবে না। কোনো অস্ত্র থাকবে না। পারমানবিক বোমা থাকবে না। মানুষ আনন্দ নিয়ে জীবনযাপন করবে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




