
আমার বাসা বৈঠকখানা রোডে। কলকাতা।
অনেক পুরনো এলাকা।দেখবেন একটা পুরান লাল বিল্ডিং আছে। নীচ তলায় অনেক গুলো দোকানপাট। দোতলায় আমাদের বাসা। এটা আমার দাদার বাড়ি। দাদা নিউজ প্রিন্ট কাগজের ব্যবসা করতেন। এখন এই বাড়ির মালিক আমার বাবা। আমরা দুই ভাই, এক বোন। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বোন থাকে বারাসাত। আর আমার ছোট ভাই নর্থ ডাকোটায় লেখাপড়া করছে।
আমি আনন্দবাজার পত্রিকাতে কাজ করি।
সার্কুলেশন বিভাগে কাজ করি। আমার পদবী সার্কুলেশন ম্যানেজার। আনন্দবাজার পত্রিকা অফিস নিশ্চয়ই চিনেন? অফিসে আমার কাজ হচ্ছে পত্রিকা গুলো যথাসময়ে পাঠকের হাতে পৌছায় কিনা সেটা দেখভাল করা। সারাদিন আমাকে অফিসের বাইরেই থাকতে হয়। রোদ পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি। অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন আর খারাপ লাগে না। দুপুরে কোনো সস্তার রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিই। অফিস থেকে আমাকে বাইক দিয়েছে। এই বাইক নিয়েই কলকাতার রাস্তায় সারাদিন ঘুরে বেড়াই।
সপ্তাহে একদিন আমার ছুটি।
সেদিন আমি ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে যাই। আমার শখ ফোটোগ্রাফী। ইচ্ছা আছে খুব শ্রীঘই কলকাতা আর্ট সেন্টারে একটা এক্সজিবিশন করবো। যাইহোক, আমি দীঘা চলে যাই। সারাদিন সেখানেই থাকি। পাহাড় আর সমুদ্র আমার অনেক ভালো লাগে। আমার একটা প্রেমিকা ছিলো অঞ্জলি নাম। সহজ সরল সুন্দর একটা মেয়ে। দারুণ হাসিখুশি। চোখে মোটা করে কাজল দিলে অঞ্জলিকে দেবী প্রতিমার মতো লাগতো। আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতাম। অঞ্জলির বাড়ি ছিলো রানাঘাট। আর তখন আমি শিবচর থাকতাম একটা মেসে। যাইহোক, একদিন অঞ্জলির সাথে দেখা হয়ে গেল। প্রেম হয়ে গেলো। ভালোবাসা হয়ে গেলো। অঞ্জলি এখন আমেরিকা থাকে। শুনেছি তার এক ছেলে, এক মেয়ে। স্বামী সন্তান নিয়ে সে সুখেই আছে।
অঞ্জলির সাথে কিভাবে পরিচয় হয়- সেই গল্পটা বলা যেতে পারে।
তখন আমি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজে পড়ি। যাইহোক, সল্টলেক গিয়েছি খালার বাড়ি। ভরদুপুরে আমি খালার বাড়ি থেকে বের হয়েছি। উদ্দ্যেশ্য একটা সিগারেট খাবো। তখন দেখলাম এক মেয়ে একা একা দাড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। ফুটপাতে থাকা কয়েকটা ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে আগ্রহ নিয়ে আইসক্রিম কিনে দিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখতে ভালো লাগছে। অবাক ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটা রাস্তা পার হয়ে আমার সামনে এলো। মুখে তার সহজ সরল সুন্দর হাসি। তার দুই হাতে দুটো আইসক্রিম। মেয়েটা হেসে বলল, নিন আইসক্রিম খান। অনেকক্ষণ ধরে আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। দেখে ভীষণ মায়া হলো। আমি আইসক্রিম নিলাম। কসম খেয়ে বলতে পারি অঞ্জলির মতো এত সুন্দর করে আইসক্রিম খেতে পৃথিবীর আর কোনো মেয়ে পারবে না।
দুনিয়াতে দশটা ভালো মেয়ের লিস্ট তৈরি করলে-
সেখানে অবশ্যই অঞ্জলি নামটা থাকবে। আমাদের দীর্ঘ পাচ বছরের প্রেম। আমি লেখাপড়া শেষ করে বসে আছি, চাকরি পাচ্ছি না। এদিকে অঞ্জলির লেখাপড়া শেষ। সে চাকরি করছে। সেলারি ভালো। অঞ্জলির বাবা মা বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছে। তারপরও অঞ্জলি দুই বছর আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। আমি শালা একটা চাকরি জোগাড় করতে পারি নাই। তখন আমার করুন অবস্থা। মা মারা গেলেন। আব্বা অসুস্থ। একটা সিগারেট খাবো সেই টাকাও নেই। অঞ্জলি আমাকে সিগারেটের প্যাকেট কিনে দিত। জোর করে পকেটে টাকা গুজে দিত। দুপুরবেলা আমরা বস কেবিনে খেতে যেতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




