somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আজকের ডায়েরী- ১২৭

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকের দিনটা সুন্দর।
চারিদিকে স্বচ্ছ ঝরঝরে রোদ। আজ শুক্রবার। আমি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছি। সকালে হোটেলে নাস্তা করেছি। রুটি আর কলিজা ভূনা। রান্না ভালো ছিলো। সবার শেষে এক কাপ চা। পেট ভরা থাকলে আমার মেজাজ ভালো থাকে। আমি মিরপুর চলে এলাম। উদ্দ্যেশ্য এখানে জুম্মার নামাজ পড়বো। যে মসজিদে নামাজ পড়বো সেই মসজিদে খুতবা/বয়ান করেন- জনাব ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী। জিহাদী সাহেবের বেশ নাম ডাক শুনেছি। গত সপ্তাহে এখানে নামাজ পড়তে এসেছিলাম। কিন্তু জিহাদী সাহেবকে পাইনি। সম্ভবত উনি ক্ষেপে গিয়েছিলেন। হয়তো কোথাও উনার মাহফিল ছিলো। এজন্য এ সপ্তাহে আবার এসেছি। আজ তার বয়ান শুনেই যাবো। উনার ঘটনা কি? উনি কি বলতে চান? কেন বলতে চান? অবশ্যই আমাকে জানতে হবে। খুৎবা বা বয়ান শোনার জন্য আমি প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে ঘুর ঘুর করি। এটা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। একটা বিষয় আমার ভালো লাগে, বেশির ভাগ মসজিদ চলমান সমস্যা গুলো নিয়ে খুৎবায় আলোচনা করেন। যদিও সেই আলোচনায় হুজুরদের কোনো লজিক থাকে না। হুজুররা ভুলভাল বকেন।

বারোটার দিকে আমি মিরপুর দশ নম্বর বেনারসি পল্লীর দিকে ছিলাম।
রাব্বানী হোটেলে থেকে চা খাচ্ছিলাম। দাম বেশি হলেও ওদের চা ভালো। চা শেষ করেই আমি নামাজে যাবো। নইলে জিহাদী হুজুরের বয়ান মিস হয়ে যাবে। রাব্বানী হোটেলে দেখা হয়ে গেলো মীরা আপুর সাথে। মীরা আপু আগে আমাদের এলাকায় থাকতেন। আমার সাথে তার খুবই সুসম্পর্ক। বহুদিন পর দেখা আজ। মীরা আপুর সাথে গল্প করতে করতে আমার দেরী হয়ে গেলো। দৌড়ে গেলাম মসজিদে। তখন ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী হুজুরের বয়ান শেষের দিকে। হুজুর গলা ফাটাচ্ছেন। মসজিদে প্রচণ্ড ভিড়। আমি ঠেলেঠুলে একদম হুজুরের সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। পাঁচজন ইউটিবার জিহাদী হুজুরের খুৎবা ভিডিও করছেন। জিহাদী হুজুর আজ প্রচুর ক্ষেপে গেছেন। উনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। নামাজিরা জিহাদী হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছেন। নামাজিদের চোখে মুখে বিস্ময়। রাগ, কষ্ট। তারা পারলে এখনই ইজরাইলকে তছনছ করে দিতো।

শেষের পাচ মিনিট আমি হুজুরের বয়ান শুনতে পেলাম।
ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী বললেন, ইহুদিরা বেজন্মা। বদমাশ। কুলাঙ্গার। আমাদের নবীজি ইহুদীদের পছন্দ করতেন না। আল্লাহ ইহুদীদের পছন্দ করেন না। ইহুদীরা পৃথিবীটাকে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জিহাদী হুজুর ফিলিস্তিন বলে একটাব লম্বা টান দিলেন। হুজুর কান্না করছেন। পর মুহুর্তেই কান্না মুছে গেলো হুজুরের। হুজুর ইজরাইলের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দিলেন। শেষে একটা স্পেশাল দোয়া করা হলো ফিলিস্তিন মা, বাবা, ভাইবোনদের জন্য। দোয়ায় হুজুর অনেক কান্না করলেন। আল্লাহকে বললেন ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে এবং ইজরাইলকে ধ্বংস করে দিতে। ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী হুজুর কাঁদতে কাঁদতে লম্বা টান দিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব আহাজারি করলেন। অনেক নামাজি জিহাদী হুজুরের সাথে কান্না করলেন।

জুম্মার নামাজ শুরু হবার পাচ মিনিট আগে হুজুর বললেন-
ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে। ওদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য আপনাদের দান করতে হবে। প্রচুর দান করতে হবে। নবীজি দান করতে বলেছেন। আল্লাহপাক দান করতে বলেছেন। এই মসজিদের জন্য দান করলে সেই দানের দোয়া ফিলিস্তিনি ভাই বোনেরা পেয়ে যাবে। আপনার নিয়তটাই আসল। আজ সবার অনেক দান করতে হবে। হুজুর চিৎকার দিয়ে বললেন, দান করুন আজ ফিলিস্তিনি ভাইবোদের জন্য। জিহাদী হুজুর কান্না করছেন। বলছেন, কত ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আহত হচ্ছে। নিহত হচ্ছে।
বলেই হুজুর কাদতে কাদতে একটা লম্বা টান দিলেন 'আল্লাহ গো' বলে। পর মুহুর্তেই হুজুর কান্না থামিয়ে বললেন, কে দিবেন পাচ হাজার টাকা? কে? হাত তুলুন। এদিকে নামাজিরা অনেকেই ফিলিস্তিনিদের জন্য কান্না করছেন। দুইজন হাত তুললেন। তারা পাচ হাজার টাকা দিবে। এরপর হুজুর বললেন, কে কে দিবেন দুই হাজার টাকা। কেউই হাত তুলছে না। তখন ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী হুজুর কান্না করতে করতে বললেন, ছোট ছোট নিঃষ্পাপ শিশুরা মারা যাচ্ছে গো মাবুদ...। তখন ৫/৭ জন নামাজি হাত তুললেন। তারা দুই হাজার করে দিবে। জিহাদী হুজুর চিৎকার করে বললেন, আল্লাহ এই দানের উছিলায় তাদের তুমি জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিও গো মাবুদ।

ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী টাকা তোলা শেষে বললেন,
আমার মাদ্রাসার অবস্থা ভালো না। আমি আর একা কত চালাবো? বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে আমার মাদ্রাসা চালাচ্ছি। এখন আপনাদের সাহায্য দরকার। কৃপণতা করবেন না। মন খুলে আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। প্রচুর দান উঠছে। ব্যবসা জমে উঠেছে। এরপর উক্ত মসজিদের ইমাম বললেন, এক ভাই হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে। তাকে আপনারা সাহায্য করবেন। ইমাম বললেন, গতকাল একজন মারা গেছেন। আমি খবর পেয়ে তাকে বিকাশে তিন হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলাম। অথচ যিনি মারা গেছেন তার ছেলেমেয়েরা লন্ডন আমেরিকা থাকে। দেখুন আমি কত ভাগ্যবান।
মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখি একলোক বলছে- আমিই সেই লোক যে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি। হুজুর আমার কথাই মাইকে বলেছেন। আমার পরিবারের চারজন একসাথে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি। আমাকে দান করুন। সমস্ত নামাজিরা আগ্রহ নিয়ে দান করছেন। হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ায়- নামাজিরা খুব খুশি। সদ্য মুসলমান হওয়া ভাইটির ইনকাম চমৎকার। তার টাকার ব্যাগ ভরে গেছে। উপচে পড়ছে। বিভিন্ন মসজিদে এই ব্যবসা করলে ভাইটি অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ী বাড়ী করে ফেলতে পারবে।

আমি মসজিদ থেকে বের হলাম।
জুতা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কোথায় যে জুতো রেখেছিলাম ভুলে গিয়েছিলাম। যাইহোক, অনেক খোজাখুজির পর জুতো পেয়েছি। মসজিদের বাইরে এসে দেখি জমজমাট অবস্থা। মনে হয় গলির মধ্যে থাকা সমস্ত ভ্যানগাড়ীর সবজি বিক্রেতারা সব এসে মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছে। নামাজ শেষে লোকজন পাগলের মতো সবজি কিনছে। কেউ শশা কিনছে, কেউ আলু, কেউ গাজর। কেউ আপেল-আঙ্গুর। আমি অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে লোকজনের কেনাকটা দেখলাম। হুজুরের বয়ানের চেয়ে মসজিদের কেনাকাটা দেখে বেশি আনন্দ পেলাম। আমার লেখা শেষ। এখন আমি মিরপুর এক নম্বরে যাবো। আমার দাওয়াত আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×