somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- ৬৩

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার নাম শাহেদ। শাহেদ জামাল।
আপনারা আমাকে ভালো করেই চিনেন, জানেন। এমনকি আমার প্রেমিকা নীলাকেও চিনেন। এও জানেন নীলার বিয়ে হয়ে গেছে। সে এখন আমেরিকা আছে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলের বয়স ৬ আর মেয়ের বয়স ৮। ছেলের নাম ইহান আর মেয়েটার নাম নিহান। নীলা একদিন বলেছিলো আমাদের বিয়ে হলে- ছেলেমেয়ের নাম রাখবে টাপুর টুপুর। এই জন্যই সুনীল বলেছিলেন- 'কেউ কথা রাখে না'। নীলার সাথে এখন আমার কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি নীলার সমস্ত খবর জানি। ভালোবাসার মানুষের দূর থেকে খোজ খবর রাখা অন্যায় নয়। প্রতিনিয়তি প্রার্থনা করি নীলা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। ভালো থাকুক নীলার স্বামী মজিবর আর তাদের দুই ছেলেমেয়ে। এদিকে আমার দুর্বিষহ অবস্থা। পরম করুনাময় আমাকে করুনা করেন নাই। আমি জন্মের পরই যেন ঈশ্বর আমার সাথে বন্ধুত্ব নয়, শত্রুতা করে চলেছেন। আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো।

এই মুহুর্তে আমি রমনা পার্কে বসে আছি।
এই রমনা পার্কের প্রতিটা গাছ আমাকে চিনে। প্রতিটা হকার আমাকে চিনে। প্রতিটা সিকিউরিটি গার্ড আমাকে চিনে। প্রতিটা ভিক্ষুক আমাকে চিনে। প্রতিটা ফুল বিক্রি করা মেয়ে আমাকে চিনে। সত্য কথা বলতে কি- তাদের প্রত্যেকের সাথে আমার বেশ ভালো খাতির। এমনকি এই পার্কে যারা নিয়মিত হাঁটতে আসেন তারাও আমাকে চিনেন। এদের মাঝে একজন আছেন নুরুল হুদা সাহেব। উনি পেট্রো বাংলায় চাকরি করেন। উনি আমার বন্ধু হয়ে গেছেন। অথচ উনার বয়স আমার বাবার থেকে বেশি। ঘটনাচক্রে আজ দুপুরে হেবি খানাদানা হয়েছে। ঘটনাটা খুলেই বলি। আমি পান্থপথ দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। স্কয়ার হাসপাতাল পার হতেই সামনে দেখি, অনেক লোকজন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে চুপচাপ। তাদের পেছনে একটা বড় ব্যানার। ব্যানারে লেখা অবস্থান কর্মসূচী। ব্যানারে ঢাকার মেয়রের বড় করে ছবি আছে। বুঝতে পারলে আজ অবরোধ। বিএনপি যেন অরাজকতা করতে না পারে সেজন্য আওয়ামীলীগের লোকজন সর্তক অবস্থানে আছে। শুধু পুলিশের উপর ভরসা করলে চলবে না। প্রতিটা আওয়ামীলীগারদের একটা দায়িত্ব আছে।

আমি অনেকক্ষন ধরে হাঁটছিলাম।
বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। তাই আমি একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। রাস্তা দিয়ে সমানে গাড়ি, বাস, বাইক যাচ্ছে আসছে। একটা গাছের নীচে বসে আছি আমরা। কয়েকজন মহিলাও বসে আছেন। আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করছে না। এক সময় এক ছোকরা এসে আমার হাতে একটা কোক ও দুটা সিঙ্গারা ধরিয়ে দিলো। শুধু আমি না বসে থাকা সবাইকেই দিলো। সকালে নাস্তা খাইনি। অনেক ক্ষুধা পেয়েছিলো। আমার পকেটে একটা টাকা নেই। আজ দুদিন ধরে শূন্য পকেটে ঢাকার পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যাইহোক, অবস্থান কর্মসূচী দলের পক্ষ থেকে দেওয়া খাবার- আরাম করে কোক আর সিঙ্গারা খেলাম। সিঙ্গারাটা ভালো ছিলো। মনে মনে চায়ের কথা ভাবছি। আল্লাহর কি রহমত একজন ওয়ানটাইম কাপে চা দিয়ে গেলো। সবচেয়ে বড় কথা চা-টা ভালো হয়েছে! আসলেই রিজিকের মালিক আল্লাহপাক। একবার ইচ্ছা করলো আরেক কাপ চা চেয়ে খাই। কিন্তু চাইলাম না। বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। বাড়াবাড়ি করা আল্লাহপাক পছন্দ করেন না। বাড়াবাড়ি করবে ক্ষমতাবানরা। এবং তাদের ছত্রছায়ায় থাকা লোকজনরা।

বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
নেতা কর্মীরা ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি, বাইক ইচ্ছা মতো পার্কিং করে রেখেছে। ফলাফল রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম। যাইহোক, আমার কি? আমি হাটা শুরু করলাম। উদ্দেশ্যবিহীন হাটা। কলাবাগান আসতেই দেখি অনেক গুলো পিকাপ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। পিকাপ এ চ্যাংড়া পোলাপান নৌকা নৌকা করে চিল্লাচ্ছে। আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ওদের ঘটনা বুঝতে চেষ্টা করলাম। সম্ভবত কেউ এই এলাকা থেকে এমপি হওয়ার নমিনেশন পেয়েছে। তাই পিকাপআপে করে আনন্দ মিছিল হচ্ছে। আমিও লাভ দিয়ে পিকাপে উঠে গেলাম। চ্যাংড়া পোলাপানদের সাথে আমি 'নৌকা' 'নৌকা' বলে চিল্লাছি। বেশ মজা পাচ্ছি। অনেকে মোবাইল বের করে আমাদের ছবি তুলছে। সিগনালে বাস থেমেছে। একজনকে দেখলাম বাসের জানালা দিয়ে শরীরের অর্ধেক বের করে মোবাইল দিয়ে আমার ছবি তুলছে। নাচানাচিরত অবস্থায় আমি হাত পা খিচিয়ে পঙ্গু মানুষের মতো কিছু অদ্ভুত পোজ দিলাম। শাহবাগ মোড়ে এসে পিকাপ থামলো। আমাদের হাতে একটা করে বিরানীর প্যাকেট ধরিয়ে দেওয়া হলো। সাথে একটা হাফ লিটারের পানির বোতলও আছে। আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নিলাম।

রমনা পার্কে বসে বিরানী খেলাম।
রান্না বেশ ভালো হয়েছে। প্যাকেটের গায়ে লেখা 'পুতান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী' নান্নু বিরানী। অবশ্য আজকাল সব বিরানীর দোকানে লেখা থাকে 'পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী'। যাইহোক, খাওয়া শেষ। এখন একটু বিরানীঘুম দিবো। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমালে সেটাকে বলে ভাত ঘুম। কিন্তু আমি তো ভাত খাইনি। খেয়েছি বিরানী। তাই বিরানীঘুম। আমি যে বেঞ্চে বসে আছি। তার পেছনে একটা বিশাল অশ্বথ গাছ আছে। রোদ আছে। রোদের তেজ নেই। আমি বেঞ্চে শুয়ে আছি। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে স্বচ্ছ নীলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। মুনা নামের একটা মেয়ের কথা মনে পড়ছে। মুনার বাড়ি হালদা নদীর কাছে। আমার মনে হচ্ছে এটা রমনা পার্ক নয়। এটা নদী। হালদা নদী। আমি শুয়ে আছি নৌকার পাটাতনে। আমার মাথা মুনার কোলে। মুনা আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার ঘুম এসে যাচ্ছে। মুনা মেয়েটার হাতে মায়া আছে। এদিকে ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। অথচ আমি ঘুমাতে চাই না। আমি মুনার সাথে গল্প করতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×