somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

নোভা কখনও সমুদ্র দেখেনি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সমুদ্র এবং পাহাড় আমার ভালো লাগে।
আমার জীবনে আমি প্রথম কক্সবাজার যাই, যখন আমার বয়স ৭ বছর। এরপর অসংখ্য বার গিয়েছি। আরো অনেক বার যাবো। একটা ঘটনা বলি, তখন আমি জগা বাবুতে অনার্স করছি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। হরতাল অবরোধের কারনে ক্লাশ হচ্ছে না। সারাদিন বাসায় থাকি। বই পড়ি, ঘুমাই, খাই। একদম অলস সময় পার করছি। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও বেড়াতে যাই। শীতকাল চলছে। শীতকাল তো ভ্রমনের জন্য আদর্শ সময়। কই যাই? কার সাথে যাই? একা একা ভ্রমণে আনন্দ নাই।

একটা মেয়ের সাথে আমার সহজ সরল সুন্দর সম্পর্ক আছে।
মেয়েটা বাংলাদেশ মেডিকেলে পড়ে। মেয়েটার সাথে আমার সম্পর্ক কি? জানি না কি সম্পর্ক। তবে স্বচ্ছ পবিত্র সম্পর্ক। জটিলতা কুটিলতা ও কলুষতা মুক্ত। মেয়েটার নাম নোভা। দেখতে সুন্দর। মাথা ভরতি চুল। স্বাস্থ্য ভালো। হাসিটা দারুন মায়াময়। কন্ঠ অতি মনোরম। লেখাপড়ায় দারুণ ভালো। স্মার্ট। নোভার বাবা মা দুবাই থাকেন। নোভাও ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দুবাই চলে যাবে। নোভা ভালো গান গায়। ভালো গিটার বাজায়। আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, গানটা দুর্দান্ত গায়। এত সুন্দর করে এই গান গায়িকা কনিকা বন্ধ্যোপাধ্যায়ও গাইতে পারবেন না।

একদিন নোভা বিকেলে আমাকে ফোন দিলো।
তার গলাটা বিষন্ন শোনাচ্ছিল। নোভা বলল, একটু আসতে পারবে? আমি বলি, অবশ্যই আসতে পারবো। সাথে সাথে চলে গেলাম মোহাম্মদপুর, তাজমহল রোড। ভর সন্ধ্যায় গিয়ে পৌছালাম নোভার বাসায়। নোভা বলল, তোমার উপরে আসতে হবে না, আমিই নিচে নামছি। নোভা নামলো। নোভা কখন অন্য মেয়েদের মতো খুব সাজে না। বিকট মেকাপ করে না। তার সাজ বলতে শুধু চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। আর কপালে একটা ছোট টিপ। নোভা এমন একটা মেয়ে তাকে দেখলে মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। শুধু মন না, চারপাশ কেমন আলোকিত হয়ে যায়।

নোভা আর আমি পুরো মোহাম্মদপুর হেটে বেড়ালাম।
জেনেভা ক্যাম্প থেকে লুচি আর কাবাব খেলাম। কিছুক্ষণ রিকশা করে ঘুরে বেড়ালাম। নোভাকে তার বাসায় নামিয়ে দিলাম। হঠাৎ নোভা আমার হাত ধরে বলল, আমাকে নিয়ে সমুদ্রে যাবে রাজীব? আমি কখনো সমুদ্র দেখিনি। আর কিছুদিন পর তো আমি দুবাই চলে যাবো। আর দেশে ফিরবো কিনা জানি না। আমি বললাম, হ্যা নিয়ে যাবো। আগামী মাসে। নোভা বলল, আগামী মাসে নয়, আমি আজ রাতেই যেতে চাই। আমার মনে হলো এই দুখী মেয়েটার কথা মেনে নেওয়া উচিত। তাছাড়া নোভার সঙ্গ আমার ভালো লাগে। এটা অস্বীকার করা অন্যায় হবে।

রাজারবাগ গ্রীনলাইন বাস কাউন্টার থেকে রাত সাড়ে বারোটায় আমাদের বাস ছাড়লো।
নোভা আমার কাধে মাথা রেখে ঘুম। আমি মুগ্ধ হয়ে নোভার ঘুমন্ত মায়াময় মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। লোকজন আমাদের দেখলে ভাববে আমরা নতুন বিয়ে করেছি। হানিমুন করতে যাচ্ছি কক্সবাজার। বাসে আরামদায়ক শীতলতা। এসি চলছে। নোভার শরীর থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে। চুলে কি শ্যাম্পু দিয়েছে কে জানে! সুন্দর গন্ধ আসছে। কেমন একটা মাদকতা। কেমন এক হৃদয় আনচান করা পরিবেশ। আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। নোভা আমাকে ডেকে তুললো। তখন বাস কুমিল্লা এসে থেমেছে। নোভা বলল, ক্ষুধা পেয়েছে, চলো কিছু খেয়ে নিই।

নূরজাহান হোটেলে আমরা খেয়ে নিলাম।
খাবার বেশ স্বাদ ছিলো। কুমিল্লার রসমালাইও খেলাম। নিজের অজান্তেই মনে মনে বললাম, লাইফ ইজ বিউটিফুল। বাস আবার চলল। আমরা ঘুমিয়েই থাকলাম। ভোরবেলা বাস আমাদের কক্সবাজার নামিয়ে দিলো। তখনও আকাশ পুরোপুরি পরিস্কার হয়নি। এখন আমাদের রুম নিতে হবে। কিন্তু নোভা বলল, আগে আমি সমুদ্র দেখতে চাই। সকালের সমুদ্র নিশ্চয়ই দেখতে অন্যরকম! আমরা হেটে হেটে সমুদ্রের কাছে গেলাম। বিশাল সমুদ্র। বড় বড় ঢেউ। কি মারাত্মক গর্জন। নোভা মুগ্ধ! সে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, লাইফ ইজ বিউটিফুল। জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরলো। বড় শান্তি। বড় বেশি ভালো লাগা। নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হচ্ছে।

এরপর আরো অনেক ঘটনা। অনেক গল্প। অনেক স্মৃতি।
সেসব আপনারা জানতে চাইলে বলতে পারি। লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই এখানেই শেষ করলাম। তবে একটা কথা বলি, নোভা আত্মহত্যা করেছিল। পত্রিকাতে নিউজ হয়েছিলো। ভীষণ রকমের কষ্ট পেয়েছি আমি। এখন আমি প্রতিটা মুহুর্ত অনুভব করি, আমি নোভাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমৃত্যু ভালোবেসে যাবো। ওপারে নোভা ভালো থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:১৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×