সমুদ্র এবং পাহাড় আমার ভালো লাগে।
আমার জীবনে আমি প্রথম কক্সবাজার যাই, যখন আমার বয়স ৭ বছর। এরপর অসংখ্য বার গিয়েছি। আরো অনেক বার যাবো। একটা ঘটনা বলি, তখন আমি জগা বাবুতে অনার্স করছি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। হরতাল অবরোধের কারনে ক্লাশ হচ্ছে না। সারাদিন বাসায় থাকি। বই পড়ি, ঘুমাই, খাই। একদম অলস সময় পার করছি। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও বেড়াতে যাই। শীতকাল চলছে। শীতকাল তো ভ্রমনের জন্য আদর্শ সময়। কই যাই? কার সাথে যাই? একা একা ভ্রমণে আনন্দ নাই।
একটা মেয়ের সাথে আমার সহজ সরল সুন্দর সম্পর্ক আছে।
মেয়েটা বাংলাদেশ মেডিকেলে পড়ে। মেয়েটার সাথে আমার সম্পর্ক কি? জানি না কি সম্পর্ক। তবে স্বচ্ছ পবিত্র সম্পর্ক। জটিলতা কুটিলতা ও কলুষতা মুক্ত। মেয়েটার নাম নোভা। দেখতে সুন্দর। মাথা ভরতি চুল। স্বাস্থ্য ভালো। হাসিটা দারুন মায়াময়। কন্ঠ অতি মনোরম। লেখাপড়ায় দারুণ ভালো। স্মার্ট। নোভার বাবা মা দুবাই থাকেন। নোভাও ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দুবাই চলে যাবে। নোভা ভালো গান গায়। ভালো গিটার বাজায়। আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে, গানটা দুর্দান্ত গায়। এত সুন্দর করে এই গান গায়িকা কনিকা বন্ধ্যোপাধ্যায়ও গাইতে পারবেন না।
একদিন নোভা বিকেলে আমাকে ফোন দিলো।
তার গলাটা বিষন্ন শোনাচ্ছিল। নোভা বলল, একটু আসতে পারবে? আমি বলি, অবশ্যই আসতে পারবো। সাথে সাথে চলে গেলাম মোহাম্মদপুর, তাজমহল রোড। ভর সন্ধ্যায় গিয়ে পৌছালাম নোভার বাসায়। নোভা বলল, তোমার উপরে আসতে হবে না, আমিই নিচে নামছি। নোভা নামলো। নোভা কখন অন্য মেয়েদের মতো খুব সাজে না। বিকট মেকাপ করে না। তার সাজ বলতে শুধু চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। আর কপালে একটা ছোট টিপ। নোভা এমন একটা মেয়ে তাকে দেখলে মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। শুধু মন না, চারপাশ কেমন আলোকিত হয়ে যায়।
নোভা আর আমি পুরো মোহাম্মদপুর হেটে বেড়ালাম।
জেনেভা ক্যাম্প থেকে লুচি আর কাবাব খেলাম। কিছুক্ষণ রিকশা করে ঘুরে বেড়ালাম। নোভাকে তার বাসায় নামিয়ে দিলাম। হঠাৎ নোভা আমার হাত ধরে বলল, আমাকে নিয়ে সমুদ্রে যাবে রাজীব? আমি কখনো সমুদ্র দেখিনি। আর কিছুদিন পর তো আমি দুবাই চলে যাবো। আর দেশে ফিরবো কিনা জানি না। আমি বললাম, হ্যা নিয়ে যাবো। আগামী মাসে। নোভা বলল, আগামী মাসে নয়, আমি আজ রাতেই যেতে চাই। আমার মনে হলো এই দুখী মেয়েটার কথা মেনে নেওয়া উচিত। তাছাড়া নোভার সঙ্গ আমার ভালো লাগে। এটা অস্বীকার করা অন্যায় হবে।
রাজারবাগ গ্রীনলাইন বাস কাউন্টার থেকে রাত সাড়ে বারোটায় আমাদের বাস ছাড়লো।
নোভা আমার কাধে মাথা রেখে ঘুম। আমি মুগ্ধ হয়ে নোভার ঘুমন্ত মায়াময় মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। লোকজন আমাদের দেখলে ভাববে আমরা নতুন বিয়ে করেছি। হানিমুন করতে যাচ্ছি কক্সবাজার। বাসে আরামদায়ক শীতলতা। এসি চলছে। নোভার শরীর থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে। চুলে কি শ্যাম্পু দিয়েছে কে জানে! সুন্দর গন্ধ আসছে। কেমন একটা মাদকতা। কেমন এক হৃদয় আনচান করা পরিবেশ। আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। নোভা আমাকে ডেকে তুললো। তখন বাস কুমিল্লা এসে থেমেছে। নোভা বলল, ক্ষুধা পেয়েছে, চলো কিছু খেয়ে নিই।
নূরজাহান হোটেলে আমরা খেয়ে নিলাম।
খাবার বেশ স্বাদ ছিলো। কুমিল্লার রসমালাইও খেলাম। নিজের অজান্তেই মনে মনে বললাম, লাইফ ইজ বিউটিফুল। বাস আবার চলল। আমরা ঘুমিয়েই থাকলাম। ভোরবেলা বাস আমাদের কক্সবাজার নামিয়ে দিলো। তখনও আকাশ পুরোপুরি পরিস্কার হয়নি। এখন আমাদের রুম নিতে হবে। কিন্তু নোভা বলল, আগে আমি সমুদ্র দেখতে চাই। সকালের সমুদ্র নিশ্চয়ই দেখতে অন্যরকম! আমরা হেটে হেটে সমুদ্রের কাছে গেলাম। বিশাল সমুদ্র। বড় বড় ঢেউ। কি মারাত্মক গর্জন। নোভা মুগ্ধ! সে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, লাইফ ইজ বিউটিফুল। জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরলো। বড় শান্তি। বড় বেশি ভালো লাগা। নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হচ্ছে।
এরপর আরো অনেক ঘটনা। অনেক গল্প। অনেক স্মৃতি।
সেসব আপনারা জানতে চাইলে বলতে পারি। লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই এখানেই শেষ করলাম। তবে একটা কথা বলি, নোভা আত্মহত্যা করেছিল। পত্রিকাতে নিউজ হয়েছিলো। ভীষণ রকমের কষ্ট পেয়েছি আমি। এখন আমি প্রতিটা মুহুর্ত অনুভব করি, আমি নোভাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমৃত্যু ভালোবেসে যাবো। ওপারে নোভা ভালো থাকুক।