একজন ব্লগার আমার সাথে দেখা করতে চান।
তার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। এরপর তিন বছর পার হয়ে গেছে! সেই ব্লগার খুবই রাগ করেছেন। বলেছেন, মন্ত্রীর সাথে দেখা করাও এত কঠিন নয়। ব্লগার রাগ করে আমার সাথেই কথাই বলেন না। কারন, তাকে কমপক্ষে ৫ বার দেখা করার কথা বলে, তার সাথে দেখা করতে পারিনি। আমি ভুলোমনা এবং আমার ব্যস্ততা। এই জন্যই মূলত তাকে সময় দিতে পারিনি। যাইহোক, গতকাল শুক্রবার আমি সেই ব্লগারের সাথে দেখা করি। তার বাসায় যাই। আমাকে দেখে তিনি খুশিতে জড়িয়ে ধরেন। তার চোখে মুখে আমি আনন্দ দেখলাম। বিস্ময় দেখলাম। আমাকে দেখে তিনি এত খুশি হবেন ভাবতে পারি নাই। আমার জন্য তিনি অনেক সেজেছেন। শাড়ি পরেছেন। চোখে কাজলও দিয়েছেন। দুই হাত ভরতি চুড়ি পরেছেন।
জুম্মার নামাজ পরে ব্লগারের বাসায় গেলাম।
সুন্দর বাসা। সাজানো গোছানো। টিপটপ। তিনি অনেক রকম খাবারের আয়োজন করেছেন। সব খাবার তিনি নিজের হাতে রান্না করেছেন। আমার বেশ ক্ষুধা লেগেছিলো। আমি কোনো কথা না বলে টেবিলে বসে গেলাম। কারন, সকালে আমি নাস্তা খাইনি। সুরভি গেছে তার বাবার বাড়ি। এক সপ্তাহ থাকবে। ফারাজাও সাথে গেছে। যাইহোক, পোলাউ একসময় আমার খুব পছন্দ ছিলো। এখন কেন জানি সাদা ভাত সবচেয়ে ভাল লাগে। ঝরঝরে সাদা ভাত। ব্লগার বললেন, যেহেতু পোলাউ রান্না করেছি, এক চামচ হলেও খেতে হবে। আমি এক চামচ পোলাউ নিলাম। সাথে ইলিশ মাছের ডিম ভাজা। ইলিশ মাছের ডিম আমার খুবই পছন্দ। ডিম থাকলে আমার মাছও লাগে না। ইলিশ মাছের সামনে অন্য সব খাবার দাঁড়াতেই পারবে না।
তবুও ইলিশ মাছ নিলাম এক পিছ।
দারুন স্বাদ। টেবিল ভরতি খাবার! কোনটা রেখে কোনটা খাই! ব্লগার বললেন, সব গুলো খাবারই একটু করে হলেও খেতে হবে। এরপর আমি সাদা ভাত নিলাম। আর গরুর মাংস। গরুর মাংসটা দূর্দান্ত হয়েছে। আমি দশে দশ দিলাম। ব্লগার খুশি। দেশী মূরগীর রোস্ট করেছেন। সামান্য একটু ভেঙ্গে খেলাম। খাওয়া শেষে আমার হাঁসফাঁস লাগছে। কিন্তু ব্লগার আমাকে পায়েস খাওয়াবেন। খেতেই হবে। বাধ্য হয়ে দু চামচ মুখে দিলাম। দারুন স্বাদ। ইচ্ছা করছে দুই বাটি পায়েস খেয়ে ফেলি। কিন্তু পেটে একটুও জায়গা নেই। আমাদের নবীজি বলেছিলেন, পুরো পেট ভরে খাবে না। একটু জায়গা খালি রাখবে। আমি নবীজির কথা রাখি নাই। সামনে এত মজার খাবার থাকলে না খেয়ে উপায় আছে? আমার কন্যা ফারাজাকে নিয়ে আসা উচিত ছিলো। সে ইলিশ মাছের ডিম পছন্দ করে।
ব্লগারের সাথে অনেক গল্প করলাম।
ছবি তুললাম। এবং কথা দিলাম আবার যাবো তার বাসায়। এই ব্লগার স্পষ্ট বলেছেন, সামুতে আমি আপনাকে এবং চাঁদগাজীকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। আপনাদের দুজনের তুলনা হয় না। আমি বললাম, আমি তো সুন্দর করে লিখতে পারি না। ব্লগার বললেন, থাক থাক আর বিনয় দেখাতে হবে না। তার কাছ থেকে জানলাম সামুতে কারা ক্যচাল করেন। কারা কালপিট। কারা ক্রিমিনাল। কারা বদমাশ। ব্লগার বললেন, রাজীব ভাই চাঁদগাজী/সোনাগাজী যাকে অপব্লগার বলেন, ডোডো বলেন, ক্রিমিনাল বলেন- তারা আসলেই অপব্লগার এবং ক্রিমিনাল। এমনকি উনি যার লেখাকে গার্বেজ বা গরুর রচনা বলেন, একদম সঠিক বলেন। উনি (সোনাগাজী) সত্য বলেন। তার চিন্তাভাবনা সঠিক। তার ধারনা সঠিক। মডারেটরের উচিত তার কথা শোনা। যারা সোনাগাজীর কথা শুনবে না, মানবে না তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিশ্চিত। তিনি সামু ব্লগের জন্য আর্শীবাদ স্বরুপ।
সামুর কোনো ব্লগার এই প্রথম আমাকে দাওয়াত করলেন।
যথেষ্ঠ সম্মান ও ভালোবাসা দেখালেন। তার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ! তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন ফারাজাকে সাথে করে নিয়ে যাই। কিন্তু ফারাজা তো তার নানা বাড়ি গেছে। ব্লগার বিকেলের নাস্তা আনলেন। সব নিজের হাতে তৈরি করা। বিশাল আয়োজন। আমি শুধু চা নিলাম। চমৎকার চা। ব্লগার বললেন, সুরভির চা বেশি ভালো না আমার টা? আমি হেসে ফেললাম। সন্ধ্যায় ব্লগারের বাসা থেকে বের হলাম। ব্লগার একদম আমাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। আমি বললাম, আপনার আসতে হবে না। তবু উনি আমাকে বড় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। কিছু মানুষ অযথাই অনেক ভালো। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভালো। ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। তাদের মঙ্গল হোক। তাদের জীবনযাপন আনন্দময় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:১৮