somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- ৬৫

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চেম্বার সাধারণত ডাক্তার এবং উকিলদের থাকে।
আমি ডাক্তার নই, উকিলও নই। আমি অতি সাধারণ এবং তুচ্ছ মানুষ। নাম আমার শাহেদ। শাহেদ জামাল। তবু আমার চেম্বার আছে। ঢাকায় আমার বেশ কয়েকটা চেম্বার আছে। প্রথম চেম্বার হচ্ছে রমনা পার্কে। রমনা পার্কে একটা বড় অশ্বত্থ গাছ আছে। অশ্বত্থ গাছের নিচে একটা বেঞ্চ আছে। এই বেঞ্চে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি। শুয়ে থাকি। রমনা পার্কের ভিক্ষুক, হকার এবং সিকিউরিটি গার্ড এরা সবাই আমাকে ভালো করেই চিনেন। এদের সাথে আমার বেশ সুসম্পর্ক। এক সপ্তাহ চেম্বারে না গেলেই তারা আমাকে ফোন করেন। খোজ খবর নেন। মানুষের ভালোবাসার কাছে আমার মাথা নত হয়ে আসে।

আমার দ্বিতীয় চেম্বার হচ্ছে বাড্ডা লিংক রোড। বাড্ডা থেকে গুলশান ১ যাওয়ার পথে একটা ফ্লাইওভার ব্রীজ আছে মানুষ পারাপারের জন্য। ঠিক ফ্লাইওভারের নিচে একটা চায়ের দোকান আছে। এই দোকানে আমি বসি। অর্থাৎ এটাই আমার দ্বিতীয় চেম্বার। সপ্তাহে তিন দিন সন্ধ্যার পর এই চেম্বারে বসি। চায়ের দোকানের মালিকের নাম শামসু। বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী। গ্রাম হচ্ছে বানা। শামসু খুবই দিল দরিয়া টাইপ মানুষ। শামসু আমার কাছ থেকে চা সিগারেট বাবদ ১৭ শ টাকা পায়। কিন্তু কখনও টাকা চায় না। সাত মাস হয়ে গেছে শামসুর টাকা শোধ করতে পারিনি। কবে পারবো জানি না।

আমার তৃতীয় চেম্বার হচ্ছে মগবাজার। রেলক্রসিং এর ডান পাশে। মোতালেব ভাইয়ের চায়ের দোকান। মোতালেব চা টা ভালো বানায়। এক কাপ চা খেলে মন ভরে না। এখানে আমি লম্বা সময় বসি। আমার এই চেম্বারটা বেশ জমজমাট। এখানে যারা নিয়মিত আসে তারা আমাকে খুব ভালো করেই চিনে। তারা চা খেতে খেতে আমার সাথে বিশ্ব সংসার নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, ইজরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ। হাসিনা খালেদা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। ধর্মীয় ইতিহাস সহ দেশের নানান সমস্যা নিয়ে আমি আলাপ করি। রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, সিএনজি চালক আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনে। মাথা নাড়ে। লোকজন আগ্রহ নিয়ে আমার বক বক শুনে, বিষয়টা আমার ভালো লাগে। এদের জন্য আমার অনেক মায়া হয়। অথচ ওদের জন্য কখনো কিছু করতে পারিনি।

আমার চতুর্থ চেম্বার হচ্ছে যাত্রাবাড়ী। বিবির বাগিচা গলিতে। উজ্জ্বল ভাই এবং তার স্ত্রী কোহিনূর একটা চায়ের দোকান চালান। কোহিনূর আপা আমাকে খুবই পছন্দ করেন। তার দোকানে গেলে আমার সব সময় দেরী হয়ে যায়। তিনি আমাকে না খাইয়ে ছাড়েন না। তিনি অনুরোধ করেছেন তার ছেলেটাকে যেন আমি পড়াই। আমি ব্যস্ত মানুষ। সময়ের বড় অভাব। আমার অনেক গুলো চেম্বার। সব গুলো চেম্বারেই আমার বসতে হয়। সবাইকে সময় দিতে হত। লোকজন আমার অপেক্ষায় থাকে। চেম্বারে না গেলেই তারা আমাকে ফোন দেন। মানুষের ভালোবাসা আমি উপেক্ষা করতে পারি না। এজন্য ঘুরে ফিরে প্রতিটি চেম্বারেই আমাকে যেতে হয়। যারা আমাকে ভালোবাসে, আমি তাদের কাছাকাছি থাকতে চাই। তারাই আমার আত্মার আত্মীয়। আপন মানুষ।

আমি বেকার মানুষ। হাতে অনেক সময়। বেকার বলে তো আর সারাদিন বাসায় বসে থাকতে পারি না। এজন্য শূন্য পকেটে এক চেম্বার থেকে আরেক চেম্বারে ছুটে যাই। চা খাই। সিগারেট খাই। পত্রিকা পড়ি। বিশ্ব সংসার নিয়ে জটিল সব আলাপ আলোচনা করি। আমি অসহায় ও দরিদ্র বলে, আমার ধনী আত্মীয় স্বজন আমাকে ত্যাগ করেছে। এমনকি আমার আপন ভাই বোনরাও আমাকে ত্যাগ করেছে। এজন্য আমি দুখী নই। আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। চেম্বারে চেম্বারে ঘুরে আমার সময় বেশ ভালো যাচ্ছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় চেম্বার হচ্ছে রমনা পার্ক। কারণ এখানে প্রচুর গাছপালা আছে। আমি মানুষ এবং গাছপালা অনেক ভালোবাসি। আমার ইচ্ছে আছে কোথাও এক একর জনি কিনে মন ভরে গাছপালা লাগাবো। গাছের যত্ন নিবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×