হ্যালো ফারাজা,
এখন তোমার তিন বছর দুই মাস। আদর ভালোবাসায় তোমার দিন যাচ্ছে। তুমি বড় হচ্ছো। খুব পাকনা হয়ে গেছো তুমি। আজ আমাকে ফোন করে খুব সিরিয়াস ভাবে বললে, বাবা আমার শরীরটা ভালো নেই। আমার জন্য নাপা নিয়ে এসো। নাপা ওষুধটা তুমি খুব ভালো চিনো। সেদিন বিকেলে তুমি ঘুমিয়েছো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তোমার মা তোমাকে ঘুম থেকে ডাক দিলো। তুমি বললে, মা আমাকে ঘুমাতে দাও। আমার শরীর ভালো না। যেন তুমি একটা তরুনী মেয়ে। অথচ তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে। সেদিন তুমি আইসক্রীম খাচ্ছো। আমি বললাম, ফারাজা আমাকে একটু দাও। তুমি বললে, বাবা তোমার আইসক্রীম খাওয়ার দরকার নেই। ঠান্ডা লেগে যাবে। সারাদিন তোমার পাকনা পাকনা কথা শুনে আমি আর তোমার মা হাসি। বড় ভালো লাগে। বড় মায়া হয়। তুমি আমাদের জীবনটা আনন্দময় করে তুলেছো।
মাঝে মাঝে রাতে বাসায় ফিরতে আমার দেরী হয়।
তুমি তোমার মায়ের মতো আমার জন্য জেগে বসে থাকো। আমাকে দেখেই তুমি 'বাবা' 'বাবা' বলে চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে জড়িয়ে ধরো। তারপর সারাদিনের সমস্ত ঘটনা আমাকে বলতে শুরু করো। রোহা তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে। আরিশ তোমাকে খেলনা দেয়নি। কিয়ান অথবা মোহাম্মদের সাথে দেখা হয়নি। ইত্যাদি অনেক অনেক কথা। তারপর শুরু হয় তোমার কি কি লাগবে তার তালিকা। পুতুল লাগবে। পার্পেল কালারের জামা লাগবে, জুতো লাগবে। আপেল লাগবে, আইসক্রীম লাগবে। রাতে আমি খেতে বসি, তখন তুমি বলো- বাবা আমাকে খাইয়ে দাও। মা খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু আমার পেট ভরেনি। এরপর বলো- বাবা একটা ডিম সিদ্ধ দাও। সিদ্ধ ডিম খেতে ইচ্ছা করছে। প্রতিদিন একই ঘটনা। এভাবে প্রায় রাত দেড়টা দুটো বেজে যায়।
প্রিয় কন্যা আমার-
মানুষের অসুখ বিসুখ হয়। তখন মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়। নানান রকম টেস্ট করে এবং অনেক গুলো ওষুধ খায়। আমার মা, তোমার দিদা গত ত্রিশ বছর ধরে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন, নানান রকম টেস্ট করছে আর অনেক ওষুধ খাচ্ছে। এদিকে আমি ডাক্তারের কাছে যাই না। কোনো ওষুধ খাই না। তাই আমার কোনো টেস্ট ফেস্ট করতে হয় না। আমার ফার্মেসীর অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, লোকজন হাজার হাজার টাকার ওষুধ কেনে। সামান্য সমস্যা হলেই ওষুধ খায়। তুমি পারতপক্ষে ওষুধ খাবে না। প্রথমে চেষ্টা করবে ওষুধ না খেয়ে সুস্থ হতে। ধরো, তোমার পায়ে ব্যথা। তুমি সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে না। ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা করো। বিশ্রাম নাও। পায়ে ব্যথা কেন হলো, সেটা খুজে বের করো। ধরো, তোমার মুখে ব্রন হলো। সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নাই। প্রচুর পানি খাও। পর্যাপ্ত ঘুম দাও। ভাজাপোড়া কম খাও। ফল ও সবজি বেশি খাও আপনাতেই তোমার ব্রন ভালো হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা এখন গুগল আছে। গুগল মানে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হাতে।
ফারাজা, প্রিয় কন্যা আমার-
জীবনে লোভ করা যাবে না। হিংসা করা যাবে না। লোভ এবং হিংসা মানুষের ক্ষতি করে। সেই সাথে মিথ্যা বলা যাবে না। মিথ্যা মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। সহজ সরল জীবনযাপন করতে হবে। তাহলেই তুমি আনন্দ নিয়ে বেচে থাকতে পারবে। তোমার চলার পথে বাঁধা আসবে। সেইসব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে তোমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি যতদিন বেচে আছি, তোমার কোনো সমস্যা নেই, ভয় নেই। আমি মরে যাওয়ার পর যেন তোমাকে বেগ পেতে না হয়, তাই তোমাকে বুদ্ধি করে চলতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ গুলো ভালো না। বলা যায় একদম ইতর প্রকৃতির। চারিদিকে ইতর নিয়েই তোমাকে বসবাস করতে হবে। পুরো বাংলাদেশ ভরা ইতর শ্রেনীর লোক দিয়ে। কাজেই একটু চালাক, একটুই চতুর হতেই হবে তোমাকে। প্রিয় কন্যা জীবনে কৃপণতা করবে না। প্রচুর ইনকাম করবে, প্রচুর খরচ করবে। তাই বলে অপচয় করবে না। সেটা খাবার হোক, বিদ্যুৎ হোক বা পানি হোক।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
আমি যদি বাসায় ফেরার পথে তোমার মায়ের জন্য দশ টাকার বাদ কিনে নিয়ে যাই, তোমার মা অনেক খুশি হয়। তোমার মধ্যেও এই স্বভাবটা আছে। তোমার জন্য কিছু কিনে নিয়ে গেলে তুমি অনেক খুশি হও। ধরো, তোমার জন্য আইসক্রীম বা আপেল কিনে আনলাম। তুমি আমার কাছে এসে বলো- বাবা বাবা আইসক্রীম আমার খুব পছন্দ। আপেল খেতে খেতে বলো- বাবা আপেল আমার খুব পছন্দ। ইউটিউবে তুমি 'ডায়না এন্ড রোমা' দেখে বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ শিখেছো। তোমার মুখে ইংরেজি শব্দ শুনে আমি আর তোমার মা অনেক মজা পাই। একদম ইংরেজদের মতো ইংরেজি উচ্চারণে বলো। এই সেদিন তোমার জন্ম হলো! দেখতে দেখতে এখন হাঁটো, দৌড়াও, গান গাও, আবদার করো, রাগ করো, মন খারাপ করো, কিছু না পেলে কান্না করো, মোবাইল দেখো, কত রকম কথা বলো! বড় ভালো লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২১