somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রিয় কন্যা আমার- ৬৮

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হ্যালো ফারাজা,
এখন তোমার তিন বছর দুই মাস। আদর ভালোবাসায় তোমার দিন যাচ্ছে। তুমি বড় হচ্ছো। খুব পাকনা হয়ে গেছো তুমি। আজ আমাকে ফোন করে খুব সিরিয়াস ভাবে বললে, বাবা আমার শরীরটা ভালো নেই। আমার জন্য নাপা নিয়ে এসো। নাপা ওষুধটা তুমি খুব ভালো চিনো। সেদিন বিকেলে তুমি ঘুমিয়েছো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তোমার মা তোমাকে ঘুম থেকে ডাক দিলো। তুমি বললে, মা আমাকে ঘুমাতে দাও। আমার শরীর ভালো না। যেন তুমি একটা তরুনী মেয়ে। অথচ তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে। সেদিন তুমি আইসক্রীম খাচ্ছো। আমি বললাম, ফারাজা আমাকে একটু দাও। তুমি বললে, বাবা তোমার আইসক্রীম খাওয়ার দরকার নেই। ঠান্ডা লেগে যাবে। সারাদিন তোমার পাকনা পাকনা কথা শুনে আমি আর তোমার মা হাসি। বড় ভালো লাগে। বড় মায়া হয়। তুমি আমাদের জীবনটা আনন্দময় করে তুলেছো।

মাঝে মাঝে রাতে বাসায় ফিরতে আমার দেরী হয়।
তুমি তোমার মায়ের মতো আমার জন্য জেগে বসে থাকো। আমাকে দেখেই তুমি 'বাবা' 'বাবা' বলে চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে জড়িয়ে ধরো। তারপর সারাদিনের সমস্ত ঘটনা আমাকে বলতে শুরু করো। রোহা তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে। আরিশ তোমাকে খেলনা দেয়নি। কিয়ান অথবা মোহাম্মদের সাথে দেখা হয়নি। ইত্যাদি অনেক অনেক কথা। তারপর শুরু হয় তোমার কি কি লাগবে তার তালিকা। পুতুল লাগবে। পার্পেল কালারের জামা লাগবে, জুতো লাগবে। আপেল লাগবে, আইসক্রীম লাগবে। রাতে আমি খেতে বসি, তখন তুমি বলো- বাবা আমাকে খাইয়ে দাও। মা খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু আমার পেট ভরেনি। এরপর বলো- বাবা একটা ডিম সিদ্ধ দাও। সিদ্ধ ডিম খেতে ইচ্ছা করছে। প্রতিদিন একই ঘটনা। এভাবে প্রায় রাত দেড়টা দুটো বেজে যায়।

প্রিয় কন্যা আমার-
মানুষের অসুখ বিসুখ হয়। তখন মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়। নানান রকম টেস্ট করে এবং অনেক গুলো ওষুধ খায়। আমার মা, তোমার দিদা গত ত্রিশ বছর ধরে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন, নানান রকম টেস্ট করছে আর অনেক ওষুধ খাচ্ছে। এদিকে আমি ডাক্তারের কাছে যাই না। কোনো ওষুধ খাই না। তাই আমার কোনো টেস্ট ফেস্ট করতে হয় না। আমার ফার্মেসীর অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, লোকজন হাজার হাজার টাকার ওষুধ কেনে। সামান্য সমস্যা হলেই ওষুধ খায়। তুমি পারতপক্ষে ওষুধ খাবে না। প্রথমে চেষ্টা করবে ওষুধ না খেয়ে সুস্থ হতে। ধরো, তোমার পায়ে ব্যথা। তুমি সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে না। ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা করো। বিশ্রাম নাও। পায়ে ব্যথা কেন হলো, সেটা খুজে বের করো। ধরো, তোমার মুখে ব্রন হলো। সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নাই। প্রচুর পানি খাও। পর্যাপ্ত ঘুম দাও। ভাজাপোড়া কম খাও। ফল ও সবজি বেশি খাও আপনাতেই তোমার ব্রন ভালো হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা এখন গুগল আছে। গুগল মানে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হাতে।

ফারাজা, প্রিয় কন্যা আমার-
জীবনে লোভ করা যাবে না। হিংসা করা যাবে না। লোভ এবং হিংসা মানুষের ক্ষতি করে। সেই সাথে মিথ্যা বলা যাবে না। মিথ্যা মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। সহজ সরল জীবনযাপন করতে হবে। তাহলেই তুমি আনন্দ নিয়ে বেচে থাকতে পারবে। তোমার চলার পথে বাঁধা আসবে। সেইসব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে তোমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি যতদিন বেচে আছি, তোমার কোনো সমস্যা নেই, ভয় নেই। আমি মরে যাওয়ার পর যেন তোমাকে বেগ পেতে না হয়, তাই তোমাকে বুদ্ধি করে চলতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ গুলো ভালো না। বলা যায় একদম ইতর প্রকৃতির। চারিদিকে ইতর নিয়েই তোমাকে বসবাস করতে হবে। পুরো বাংলাদেশ ভরা ইতর শ্রেনীর লোক দিয়ে। কাজেই একটু চালাক, একটুই চতুর হতেই হবে তোমাকে। প্রিয় কন্যা জীবনে কৃপণতা করবে না। প্রচুর ইনকাম করবে, প্রচুর খরচ করবে। তাই বলে অপচয় করবে না। সেটা খাবার হোক, বিদ্যুৎ হোক বা পানি হোক।

ফারাজা তাবাসসুম খান-
আমি যদি বাসায় ফেরার পথে তোমার মায়ের জন্য দশ টাকার বাদ কিনে নিয়ে যাই, তোমার মা অনেক খুশি হয়। তোমার মধ্যেও এই স্বভাবটা আছে। তোমার জন্য কিছু কিনে নিয়ে গেলে তুমি অনেক খুশি হও। ধরো, তোমার জন্য আইসক্রীম বা আপেল কিনে আনলাম। তুমি আমার কাছে এসে বলো- বাবা বাবা আইসক্রীম আমার খুব পছন্দ। আপেল খেতে খেতে বলো- বাবা আপেল আমার খুব পছন্দ। ইউটিউবে তুমি 'ডায়না এন্ড রোমা' দেখে বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ শিখেছো। তোমার মুখে ইংরেজি শব্দ শুনে আমি আর তোমার মা অনেক মজা পাই। একদম ইংরেজদের মতো ইংরেজি উচ্চারণে বলো। এই সেদিন তোমার জন্ম হলো! দেখতে দেখতে এখন হাঁটো, দৌড়াও, গান গাও, আবদার করো, রাগ করো, মন খারাপ করো, কিছু না পেলে কান্না করো, মোবাইল দেখো, কত রকম কথা বলো! বড় ভালো লাগে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×