কন্যার নাম নূরী। তিন বছর বয়স।
সে হাঁটতে শিখেছে। ঘরে থাকতে চায় না। সারা উঠান হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে হামাগুড়ি দেয়। তার মা তাকে কিছুতেই ধরে রাখতে পারে না। কোলে নিলেও জোর করে নেমে যায়। এক শীতের সকালে নূরী প্রতিদিনকার মতোন উঠানে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। আপন মনে খেলা করছিল। মা রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বাড়িতে আর কেউ নেই।
নূরী একাএকা খেলতে-খেলতে হঠাত পা পিছলে পুকুরে পরে যায়।
ছোট্র নুরী পুকুরে পড়ে গিয়ে পারে উঠে আসার জন্য দাপাদাপি করে। দাপাদাপি করতে করতে নূরী মাঝপুকুরে চলে যায়। রান্নাঘর থেকে নূরীর মা দেখতে পান উঠানে নুরী নেই। অথচ মাত্র’ই তো ছিলো। কই গেলো নূরী? রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসেন নূরীর মা। এসে দেখেন তার মেয়ে মাঝপুকুরে ভেসে আছেন। সাথে সাথে তিনি পুকুরে ঝাঁপ দেন। এবং নূরীকে বুকে টেনে নেন। মরতে মরতে অল্পের জন্য বেঁচে যায় নূরী। নুরীর জন্ম হয়েছিল পৃথিবীতে পিছিয়ে পড়া এবং আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগা নারীদের পথ দেখাতে। আসুন এই নূরী সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
দেশভাগের সময় সাপ্তাহিক 'বেগম পত্রিকা' প্রকাশিত হয়।
বেগম পত্রিকার হাত ধরেই এদেশে প্রথম ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হয়। ঈদ সংখ্যা ছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ হতো। 'বেগম' পত্রিকাটি বহু নারীকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে। নারীকে সবল ও সাহসী করার লক্ষ্যে বেগম ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। নূরজাহান বেগমের পিতা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, ছিলেন ‘বেগম’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র মেয়ে নূরজাহান বেগম। ডাক নাম নূরী।
১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুরের চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ‘বেগম’ পত্রিকার নূরজাহান বেগম।
নূরজাহান বেগমের শৈশব কাটে গ্রামের বাড়িতে মা, মামা, দাদী, নানীর সঙ্গে। বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই যখন নূরজাহান বেগম বিএ পড়তেন। ‘বেগম’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। বেগমের শুরু থেকে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। পিতা এবং কন্যা সমাজে নারীদের অগ্রগতি যেভাবে চিন্তা করতেন, ঠিক সে বিষয়গুলো বেগম পত্রিকায় প্রতিফলিত হতো। পাশাপাশি নারীদের গৃহকর্মের কথা, ছবি এবং তাদের নানা সমস্যার কথা প্রকাশিত হতো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের ছবি আঁকতে, লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন নূরজাহান বেগম।
বেগম পত্রিকা শুধু নারীদের উদ্দেশ্য করেই গোড়াপত্তন হলেও এর পাঠক শুধু নারীরাই ছিলেন না।
ধীরে ধীরে এই পত্রিকা পুরুষদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নূরজাহান বিয়ে করেন রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই) কে। প্রায় ৭৩ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকা। যদিও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল পত্রিকাটা নিয়ে কিন্তু বেগম-এর উদ্দেশ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নারী জাগরণ, নতুন নারী লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীকে উৎসাহী করাই ছিল মূল লক্ষ্য। বেগম-এর প্রথম দিকে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাঁরা লেখা, ছবি সংগ্রহ করেতেন। আজ নারীরা নিজেই লেখা পাঠিয়ে দেন।