নীলা ভূত বিশ্বাস করে না।
কিন্তু ভূতের কথা কেউ বললে হি হি করে হেসে ওঠে। নীলা মনে করে ভূত মানেই ইলিউশন- চোখের ভুল। গভীর রাতে খুট খুট করে শব্দ হয়, চাঁদের আলোয় কারো ছায়া দেখা যায়, অস্পষ্ট ভাবে কাকে যেন দেখা যায়, কে যেন পেছন থেকে ডাক দিলো- এইসব ব্যাপার গুলো নাকি মানুষের চোখে এক ধরনের বিভ্রম সৃষ্টি করে। তখন মানুষ ভূত দেখে। কিন্তু গত বছর নাইক্ষংছড়িতে যে ব্যাপারটা ঘটেছিল, তারপর থেকে নীলার ভূতকে অবিশ্বাস করার আগে একটু ভাবতে হয়।
নাইক্ষংছড়িতে একটা ছোট পাহাড়ের পেছনে ভাঙ্গা মন্দির আছে।
মন্দিরটা বহু পুরোনো। এখন আর এই মন্দিরে পূজা হয় না। মন্দিরের চারপাশে ঘন জঙ্গল। এই মন্দিরের আশেপাশে কেউ কখন যায় না। কেন যায় না, তাও কেউ সঠিক করে জানে না। গত বছর আমি শাহেদ আর নীলা আমরা সবাই নাইক্ষংছড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। নীলা আর শাহেদ দুজনেই ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। কিন্তু যার তার সাথে না, শুধু আমার সাথে। আমি পাশে থাকলে নাকি শাহেদ নীলা এক আকাশ ভরসা পায়, সাহস পায়। সারাদিন আমরা নানান জায়াগায় ঘুরে বেড়ালাম। দুপুরে এক উপজাতি পরিবারের সাথে খেলাম। ভূতের গল্পটা আজ থাকুক। অন্য একদিন বলা যাবে।
একদিন বিকেলে গুলশান গ্লোরিয়া জিন'স এ বসে আছি।
আমরা তিনজন। নীলা, শাহেদ আর আমি। শাহেদ জামালকে নিয়ে আর পারা গেল না। এমন সব অদ্ভুত কথা বলে! এইসব অদ্ভুর কথার উত্তর আমার জানা নেই। চিন্তা-ভাবনা-বুদ্ধি, সব ব্যাপারেই শাহেদ আমাদের থেকে বড্ড আলাদা। চায়ের আড্ডায় শাহেদ হঠাৎ প্রশ্ন করলো- তোমরা কি জানো, চাঁদের বুকে মাঝে মাঝে কিসের কালো দাগ? আমরা জানি এটাই ওর মুল প্রশ্ন না, আসল প্রশ্নটা ঠিক এর পরেই আসবে। শাহেদ বলল- ক্রিকেটের বল আর ভূ-পৃষ্ঠ, কোনটা বেশী মসৃণ? এটা আবার কোনো প্রশ্ন নাকি? চকচকে ক্রিকেট বলটাই ভূ-পৃষ্ঠের চেয়ে বেশি মসৃণ। শাহেদ বলল- তোমরা যা ভাবছো তা নয়। শাহেদ এমন জোর গলায় কথা বলে যে, বিশ্বাস না করে আর উপায় থাকে না। শাহেদের চিন্তা ভাবনাই একেবারেই আলাদা। শুধুমাত্র শাহেদের পক্ষেই ক্রিকেট বলের মধ্যে পৃথিবীর মতো বিশাল আকার চিন্তা করা সম্ভব।
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছাড়তেই শাহেদ অব্যর্থ একটা প্রশ্ন করল।
এই যে ধোয়া ছাড়লে, এর ওজন কত জানো? দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপলে তোমার সিগারেটের ধোয়ার ওজন কত হতো? উত্তর তো দূরের কথা, এ রকম প্রশ্ন যে হতে পারে, তা আমার মাথায় আসেনি। শাহেদ বলল- একটা সিগারেটের ধোয়ার ওজন এক আউন্সের .০০১২৭ ভাগ। অবাক না হয়ে উপায় আছে!
শাহেদ হাসতে হাসতে বলল- ভাবো, আলাদা ভাবে নতুন করে ভাবতে শিখো। ওর বুদ্ধির তারিফ করে বললাম- তুমি কত অদ্ভুত কথা বলো, অদ্ভুত উত্তর দাও, সেগুলো খাতায় লিখে রাখো না কেন? এই লেখাগুলো জমতে জমতে নতুন ধরনের একটা বই বের হতো! শাহেদ আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল- এ পৃথিবীর সর্বকালের দু'জন সেরা লেখক কিন্তু জীবনে একটা লাইনও লেখেননি। তাদের নাম কি? আমি অবাক হয়ে বললাম কারা তারা? শাহেদ বলল- হোমার ও সক্রেটিস।
সত্য-মিথ্যা কিছুই বুঝতে পারি না। শাহেদ এমনভাবে কথা বলে ওর কথা বিশ্বাস না করে পারা যায় না। আসলে ওর প্রতিটা কথার মধ্যেই একটা বিশ্বাসযোগ্যতা ছাড়া, ওর আচার-আচরণ এমনি যে, এক মুহূর্তের জন্যও অবিশ্বাস করা যায় না।
শাহেদ একবার প্রশ্ন করেছিল- এক মুহূর্ত মানে ঠিক কতটা সময় জানো?
না, আমরা কেউই বলতে পারিনি। শাহেদ বলল- এক মুহূর্ত মানে দেড় মিনিট। ইংল্যান্ডে পুরনো আমলে মোমেন্ট বলতে দেড় মিনিট সময় বোঝাত। আমরা আড়ালে বলাবলি করি, শাহেদ যদি একটু চেষ্টা করত- তাহলে জীবনে অনেক কিছু করতে পারত। শাহেদের কানেও কথাটা কয়েকবার পৌছেছে। কিন্তু সে গুরুত্ব দেয়নি। আমি একদিন আড্ডায় খুব বকবক করছিলাম। তখন শাহেদ আমার দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো। বলো, কোন দুধের রঙ গোলাপী? আমি উত্তরটা দিতে পারিনি। শাহেদকে আমি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম- আচ্ছা, সাগর-রুমিকে কারা হত্যা করেছে? ছাত্রলীগের আস্ফালন কবে বন্ধ হবে? রাষ্ট্রপতির জন্য বছরে কত টাকা খরচ হয়? দূর্নীতিতে কোন মন্ত্রী, এমপি এগিয়ে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩৬