somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

খুনী কে?

২৩ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা খুনের ঘটনার সাথে জড়িয়ে গেলাম।
পুলিশের নজর আমার দিকে। অথচ আমি জীবনে কোনোদিন একটা মূরগীও জবো করিনি। যাকে নির্মম ভাবে বটি দিয়ে কোপানো হয়েছে। লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তার নাম শাহনাজ। বয়স ৩৫ বছর। শাহজানের এক মেয়ে আছে। ৮ বছর বয়স। মেয়ের নাম লিলি। লিলি স্কুলে পড়ে। আমি লিলিকে পড়াই। লিলির মাকে আমি আপা ডাকি। শাহনাজ আপা সহজ সরল ভালো মানুষ। আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন। শাহনাজ আপার স্বামী মারা গেছেন পাচ বছর আগে। তার গলায় ক্যান্সার হয়েছিলো। এরপর শাহনাজ আপা আর বিয়ে করেননি। যদিও তার আত্মীয়স্বজনরা চেয়েছিলেন শাহনাজ আপা বিয়ে করুক।

আমি লিলিকে পড়াই দুই বছর হয়ে গেছে।
লিলি বুদ্ধিমতি মেয়ে। সব বিষয়েই লিলি ভালো। লিলি দেখতে ভীষন মিষ্টি। পড়া শেষ করে লিলির সাথে আমি প্রতিদিন দশ মিনিট গল্প করি। মেয়েটা আমার গল্প শুনে হিহি করে হাসে। বড় ভালো লাগে মেয়েটার হাসি। লিলির মা প্রতিদিন আমাকে নাস্তা খেতে দেয়। আমি মানা করলেও শুনেন না। কোনোদিন স্যান্ডউইচ, কোনোদিন নুডুলস, কোনোদিন ঘরে বানানো সমুচা। সব শেষে এক কাপ চা। চা আমাকে একা খেতে হয় না। শাহনাজ আপাও আমার সাথে বসে এক কাপ চা খান। তখন তার সাথে আমার অনেক বিষয় নিয়ে গল্প হয়। অনেকবার আমার মনে হয়েছে, শাহনাজ আপার মতো যদি সত্যিই আমার একটা বড় বোন থাকতো!

ঘটনা ঘটলো তৃতীয় রোজায়।
ইফতারীর সময় শাহনাজ আপা একা বাসায় ছিলেন। লিলি গিয়েছে তার মামার বাসায়। রাতে খেয়ে ফিরবে। তার মামা তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবেন। হঠাত লিলি আপা আমাকে ফোন দিলেন। বললেন, আমার খুব বিপদ, প্লীজ আমাকে বাঁচাও। ব্যস এরপর শাহনাজ আপার মোবাইল অফ। আমি তাহাহুড়া করে মহাখালি থেকে ইন্দিরা রোড গেলাম। ইফতারীর সময় বলে রাস্তা ফাঁকা ছিলো। তবুও আমার আধা ঘণ্টা সময় লাগলো। আমার খুব টেনশন হচ্ছিলো। শাহনাজ আপার বিপদ। আমার বিপদে আপদে আপা সব সময় আমাকে সাহায্য করেছেন। জগা বাবুতে (জগন্নাথ) ভর্তির সময় আমার কাছে টাকা ছিলো না। আপা টাকা দিয়েছেন।

কলিংবেল বাজাচ্ছি। কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।
দশ মিনিট হয়ে গেছে। খেয়াল করে দেখলাম, দরজার নীচ দিয়ে রক্ত এসে সিড়ি ভেসে যাচ্ছে। তখন আমি দরজার লক ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করি। হায় আল্লাহ! হায় কপাল! এ আমি কি দেখলাম! ঘরের পুরো মেঝে রক্ত দিয়ে ভেসে গেছে। আপা ফ্লোরে পড়ে আছেন। তার জ্ঞান নেই। নাকি মরে গেছেন? তার কপালে ফেটে গেছে। সামনে বটি পড়ে আছে। বটি দিয়ে আপাকে কোপানো হয়েছে। আপার পুরো মুখ ফুলে আছে। মুখ এতটাই ফুলেছে যে চোখ দেখা যাচ্ছে না। ভয়াবহ দৃশ্য। এরকম দৃশ্য সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার হাত পা কাঁপছে! আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার মাথা কাজ করছে না। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। বমি বমি পাচ্ছে।

এম্বুলেন্স এলো। আপাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো।
পুলিশ আমাকে চুলের মুঠি ধরে পাচ কেজি ওজের এক থাপ্পড় দিলো। আমি ছিটকে পড়লাম তিন হাত দূরে। এদিকে এই ঘটনা এলাকাবাসী জেনে ফেলেছে। অসংখ্য লোকজন ভিড় করে আছে। পুলিশ আমাকে মারতে মারতে গাড়িতে তুললো। ভিড় করে থাকা জনতা বলল, হারামজাদাকে আমাদের হাতে তুলে দেন। একজন বলল, শাহনাজ আপার সাথে নাকি আমার অবৈধ সম্পর্ক। একজন বলল, টাকা, গহনার জন্য আমি শাহনাজ আপাকে খুন করেছি। পুলিশ আমাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে গেলো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলল, হারামজাদা সব কিছু ভালোয় ভালোয় স্বীকার কর। নইলে ডলা দিয়ে সব স্বীকার করাবো। আসামীর কাছ থেকে কি করে কথা বের করতে হয়, আমরা জানি। খুব ভালো করেই জানি।

থানা থেকে আগামীকাল আমাকে কারাগারে পাঠানো হবে।
আসামীদের ২৪ ঘন্টার বেশি থানায় রাখার নিয়ম নেই। বাংলাদেশের পুলিশের উপর ভরসা নেই। ওরা ভালো লোকদের ধরে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কারাগারে যারা আছে, এদের বেশির ভাগই দরিদ্র কয়েদী। টাকা নেই বলে আজ তারা কারাগারে। ধরনীরা হাজার অপরাধ করেও টাকার জোরে বেচে যায়। পুলিশের ধারনা টাকার জন্য আমি শাহনাজ আপাকে খুন করেছি। বাংলাদেশের পুলিশ কখনও সঠিক ধারনা করতে পারে না। লকাপের ভেতর আমার ঘুম আসে না। বাজে গন্ধ। উন্মুক্ত টয়লেট। প্রচুর মশা ও মাছি। সহ্য হচ্ছে না আমার। ইচ্ছা করছে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই। আমি লিলির কথা ভাবতে থাকলাম। লিলি আমার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রী। বড় ভালো মেয়ে। লিলি এখন কি করছে? লিলির বাবা আগেই মারা গেছেন। এখন মা নেই। মেয়েটা আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারবে না।

ডাক্তারেরা অসাধ্য সাধন করেছেন।
তারা শাহনাজকে বাঁচিয়ে তুলেছেন। পুলিশ শাহনাজের জবানবন্ধী নিয়েছেন। 'শাহনাজ স্পষ্ট করেই প্রথমেই বলেছেন, আমাকে লিলির মাস্টার হত্যা করতে চেষ্টা করে নাই। আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন জেরিন। জেনির আমাদের বিল্ডিং এ থাকে। পাচ তলায়। নয় বছর ধরেই সে থাকে। তার ধারনা তার স্বামীর সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক। আমরা পরকীয়া করি। এই রাগ থেকে সে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি বেচে গেলাম'। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। এদিকে আমি ছাড়া পেয়েছি। পুলিশ আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে সাত দিন আমাকে হাজতে থাকতে হয়েছে। জেরিন যে এই কাজ করবে কেউ ভাবতে পারে নাই। জেরিনকে আমিও চিনি। সুন্দর হাসিখুশি মহিলা। জেরিনের সাথে শাহনাজ আপার বন্ধুর মতো সম্পর্ক। আসলেই কি জেরিনের স্বামীর সাথে শাহনাজ আপার সম্পর্ক আছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×