
অবশ্যই বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু।
অনেক পুরোনো বন্ধু। ভালো বন্ধু। আগে তো বাংলাদেশ ভারত সব এক ছিলো। ৪৭ সাথে ইংরেজরা দেশ ভাগ করে দিলো। আমাদের কপাল পুড়লো। এখন ভারত যেতে আমাদের পাসপোর্ট লাগে! অবশ্য ভারত বাংলাদেশ আলাদা হয়েছে ধর্মের কারণে। ধর্ম একটা কুৎসিত বিষয়। ধর্ম মানুষের কোনো উপকার করে না। শুধু ক্যাচাল তৈরি করে। ধর্ম আবিস্কারের পর থেকেই ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগেই আছে। ধর্মের কারণে দাংগা হাংগামা তো কম হয় নাই। বিশ্ব এগিয়ে গেছে, তবুও ধর্ম মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে। যাইহোক, ভারত একটা মানবিক দেশ। পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক না রাখলেও চলবে। কিন্তু ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক না রাখলে আমাদের ক্ষতি। শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতায় নেই বলে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
এই কয়েক বছর আগের কথা।
শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষ ঘোষণা করলেন। হাসিনা দেশ বিদেশের অনেক নামী দামী মানুষকে মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেন। তখন সারা বিশ্বে করোনা মহামারী চলছিলো। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এলেন। শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করলেন। আমাদের দেশের যে কোনো বিপদে আপদে সবার আগে এগিয়ে আসে ভারত। ১৯৭১ সাথে ভারত আমাদের সাহায্য না করলে আমাদের খবর ছিলো। ভারতের জন্যই আমরা নয় মাসে স্বাধীনতা লাভ করি। এই কারণে আজ পাকিস্তান ভারতের উপর রেগে আছে। যুদ্ধের দিন গুলোতে ভারত আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দেয়। এই এক কোটি মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে। কলকাতার সমস্ত সরকারি চাকরিজীবিরা তাদের একদিনের বেতনের টাকা শরনার্থীদের দেয়। সেই সব ইতিহাস আমরা ভুলে যাইনি। আসাম, উড়িষ্যা, পশ্চিম বঙ্গ আর আমরা আলাদা নই। দুই বাংলার মানুষ মিলেমিশে একাকার। বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় ভারত পর্যবেক্ষক পাঠায়। ৭১ ও ভারত সবার আগে আমাদের সীকৃতি দেয়।
ইন্দিরা গান্ধী আমাদের সবচেয়ে বড় বান্ধব।
৭১ এ তিনি আমাদের সব রকম সহায়তা করেন। বিশ্বের দরবারে গিয়ে তিনি আমাদের সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেটা তুলে ধরেন। শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে আটক। দেশবাসী জানে না শেখ মুজিব বেচে আছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমেদ ইন্দিরা গান্ধীকে সাথে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছেন বর্ডারে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা। অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন ইন্দিরা গান্ধী। ট্রেনিং দিয়েছেন। খাবার দিয়েছেন। ভারত আমাদের কোনো ক্ষতি করে নাই। আমরাও ভারতের কোনো ক্ষতি করি নাই। আমরা ভারতকে ছায়া দেই, মায়া দেই, ভালোবাসা দেই। বিনিময়ে আমরাও সব রকম সুবিধা পাই। ভারত নিয়ে দু চারটি ভালো কথা বললেই, আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ দালাল বলে। ভারতের সাথে সম্পর্ক অবনতির জন্য বিএনপি আর জামায়াত দায়ী। সেই সাথে কোমলমতিরাও দায়ী। অনেকে বলছেন, হাসিনা ভারতে বসে গুটি চালছেন। ইহা ভুল। তসলিমা নাসরিনকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনাকেও দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হাসিনা এবং তসলিমা নাসরিন কিন্তু পালিয়ে যাননি।
আমাদের দেশে অল্প কিছু লোক ভারত বিরোধী।
এরা মূলত জামায়াত। কিছু আছে বিএনপির। আজ শেখ হাসিনা নেই বলে বিএনপি জামায়াত ভারতের সাথে খারাপ আচরণ করছে। হাসিনা থাকলে আজ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ভারত অবুঝ না। তারা আমাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবে না। আমরাও ভারতকে ছাড়বো না। আমরা চিকিৎসার জন্য ভারত যাই, লেখাপড়া করতে ভারত যাই, শপিং করতে ভারত যাই, ভ্রমণ করতে ভারত যাই। তাহলে কোন মুখে আমরা ভারতের নিন্দা করি? যারা ভারতের নিন্দা করে, তারা হারামী। আর যারা পাকিস্তান কে সাপোর্ট করে তারা বড় হারামী। দেশ ভাগের আগে বাংলাদেশের মানুষ কলকাতা, আসাম যেতো ব্যবসা করতে। কলকাতার বৈঠকখানা রোডে এখনও আমার দাদার একটা দোতলা বাড়ি আছে। এরকম বহু লোকের বাড়ি আছে কলকাতায়। আবার কলকাতার বহু মানুষের ঘরবাড়ি রয়েছে বাংলাদেশে। বাপ দাদার ভিটাকে অস্বীকার করা যায় না। দুই বাংলার মানুষ তো আলাদা নয়। আমাদের ভাষা এক। কলকাতা আর ঢাকার মধ্যে কোনো প্রার্থক্য নেই। ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট দোকানপাট, খাবারদাবার, মানুষ সব এক। ঢাকা থেকে কলকাতা গেলে মনে হয় না অন্য কোথাও গিয়েছি। নিজের দেশ বলেই মনে হয়। ভারত ভালো থাকুক। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকুক।
কিছু লোক ভারতকে নিয়ে উপহাস করেছে, কটু কথা বলেছে।
হয়তো ভারতের পতাকাকে অসম্মান করেছে। ভারতীয় শাড়ি পুড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব লোক ভারতের বিপক্ষে নয়। গুটিকয়েক লোকের জন্য আশাকরি ভারতীয়রা বাংলাদেশকে ভুল বুঝবে না। এদিকে কলকাতার অনেক লোক বাংলাদেশকে গালমন্দ করেছে, নিন্দে করেছে, অতিমাত্রায় বাংলাদেশ কে হেয় করে কথা বলেছে, ইহা দুখজনক। ভারতকে আমরা সব সময় বন্ধু মনে করি। যে বন্ধু বিপদে আপদে আমাদের পাশে থাকবে। এখনও ভারতে যাওয়ার জন্য ভারত দূতাবাসে লম্বা লাইন হচ্ছে। পশ্চিম বঙ্গের এক নেতা বলেছেন, আমাদের ভারত যাওয়া বন্ধ। ভিসা দেবেন না। চিকিৎসার জন্যও যাওয়া যাবে না। ইহা দুখজনক। এরকম ছেলেমানুষী আচরণ একজন নিষ্ঠাবান মানুষ করতে পারেন না। নো নেভার। এদিকে কলকাতার হোটেল গুলো খালি, নিউমার্কেটে বেচাকেনা কম হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। এই সমস্যার সমাধান না হলে আমাদেরও সমস্যা, ভারতেরও সমস্যা। আর এই বিষয়কে মাথায় রেখে পাকিস্তান লাফাচ্ছে। তারা আমাদের কে ভাই বলছে। আরো বলছে আমাদের তারা সব রকম সুযোগ সুবিধা দিবে। প্রয়োজনে আমাদের হয়ে ভারতের সাথে যুদ্ধ করবে। পাকিস্তানের মনে রাখা উচিৎ ৭১ সালের কথা আমরা ভুলি নাই। তোমাদের ক্ষমা নাই।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



