হাসিনা এখন দারুণ ব্যস্ত আছেন।
নেতা কর্মীরা ফোন দিয়ে-দিয়ে বিরক্ত করছে। তিনি অবশ্য সকলের ফোন ধরছেন। তাদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। হাসিনা এখন নিজের আত্মজীবনী লিখছেন। এই আত্মজীবনীতে সব ঘটনা আসবে। তার বাবার কথা, ভাইয়ের কথা, তার সংগ্রামের কথা। দেশের প্রতি তার ভালোবাসার কথা। মুক্তিযুদ্ধের কথা। বিশাল এই আত্মজীবনী শেষ করতে কমপক্ষে দুই তিন বছর লাগবে। পত্রিকা পড়া শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সকালের চা মুখে দেওয়ার আগে পত্রিকা পড়তে হয়। ভারতের নেতারা তার সাথে দেখা করতে আসছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা দেখা করতে আসছেন। সবাইকে তার সময় দিতে হচ্ছে। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে হাসিনা ঘুমাতে যান। যেসব নেতাকর্মী কারাগারে আছেন, তাদের সাথেও শেখ হাসিনার যোগাযোগ আছে। খুব শীঘ্রই নেতাকর্মীরা একে একে জামিনে ছাড়া পাবেন। হাসিনা ইউনুস সাহেবকে ফোন দিয়েছিলেন, ইউনুস সাহেব ভয়ে ফোন ধরেন নাই। সেনা প্রধানের সাথে হাসিনার নিয়মিত যোগাযোগ অব্যহত আছে। গনবভনে তিনি মূরগী পালতেন, মাছ চাষ করতেন, নিজের হাতে লাগানো গাছের যত্ন নিতেন। সেসব মাছ, মূরগী এবং গাছের কথা আজও তিনি ভুলেন নাই। মায়া পড়ে আছে। মায়ার কষ্ট ভীষন কষ্ট।
কোটা আন্দোলন কে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার জীবন বদলে গেলো।
উনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। টানা ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব করলেন। তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে টানা ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকলেন। তার মধ্যে বিশ্বাস ঢুকে গিয়েছিলো, তিনি যতদিন বেচে থাকবেন ততদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তার বিকল্প কেউ নেই। ছাত্ররা আন্দোলন করলো। বিষয়টা নিয়ে তিনি তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি ভেবেছিলেন বিএনপির কোমর ভেঙে দিতে পেরেছি, আর এই সব ছাত্র তো দুধভাত। শেখ হাসিনা ভুলে গিয়েছিলেন, পঁচা শামুকে পা কাটে। কঠিন এক ফাদ পাতা হয়েছিলো, তিনি সেই ফাদে আটকে গেছেন। আমেরিকা, জামাত শিবির, বিএনপি, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফাদে শেখ হাসিনার পরাজয় হলো। শেখ হাসিনা হচ্ছে সূর্য, সূর্য কে দাবিয়ে রাখা যায় না। ৭১ এর পরাজিতদের স্বপ্ন সত্যি হবে না। এই দেশ অনেক কষ্টে পাওয়া দেশ। এত সহজে জামাত শিবিরের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। নো নেভার।
হাসিনা সত্যিকার অর্থে এখন ভালো নেই।
হ্যা তার থাকা খাওয়ার কোনো সমস্যা নেই। তিনি নিয়মিত খাচ্ছেন। নামাজ পড়ছেন। বিকেলে বাগানে হাটাহাটি করছেন। বই পড়ছেন। লিখছেন। বিভিন্ন মানুষজনের সাথে দেখা করছেন। পত্রিকা পড়ছেন। অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলোতে নিয়মিত চোখ বুলাচ্ছেন। একান্ত অবসরে তিনি নিজের ভুল গুলো খুঁজে বের করছেন। দুই বোন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। তাদের দুই বোনকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। যথাসময়ে তারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। অবশ্যই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। এমনকি তিনি আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও যেতে পারেন। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে সব সম্ভবের দেশ। সেনাবাহিনী আওয়ামীলীগের সাথে বেঈমানী করেছে। অথচ এই আওয়ামিলীগ সেনাবাহিনী কে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় জামাত শিবির সেনাবাহিনী কে কিনে নিয়েছে। সেনাবাহিনীর অবস্থা হচ্ছে ঘরের শত্রু বিভীষন। সবাই নিজ নিজ অন্যায়ের শাস্তি পাবে। পাবেই।
হাসিনার অনেক ভুল ছিলো।
তার দলের লোকেরা ইচ্ছে মতো লুটপাট করেছে, দূর্নীতি করেছে তিনি তাদের থামান নাই। ছাত্রলীগ দিনেদুপুরে মানুষ কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি ছাত্রলীগকে অফ করেন নাই। অগা মগা জগা এনে তিনি মন্ত্রী এমপি বানিয়ে দিয়েছেন। যোগ্য ও দক্ষ লোকদের তিনি দলে না নিয়ে একদল অসৎ ও চাটুকারদের দলে নিয়েছেন। তার আমলে শিক্ষার মান একদম নিচে নেমে গেছে। সেদিকে তার খেয়াল ছিলো না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম হুহু করে বেড়েছে। তার দলের লোকেরা সাধারণ মানুষের উপর নানান রকম অত্যাচার করেছে, অন্যের জমি জোর করে দখল করেছে, সেদিকে তার নজর ছিলো না। মানুষ আওয়ামী লীগের উপর যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছে। দিন দিন মানুষের ঘৃনা ও ক্ষোভ জমেছে আওয়ামীলীগের উপর। মানুষের সহ্যের বাধ ভেঙে গিয়েছিল। সেদিকে তিনি কোনো তোয়াক্কা করেন নাই। এই জন্যই আজ তার এই অবস্থা। পাপ করলে পাপের শাস্তি পেতেই হয়। হোক সে প্রধানমন্ত্রী, হোক সে রিকশা চালক শামসু। আওয়ামীলীগের আগে বিএনপি অন্যায় করেছে, গত পনের বছর বিএনপি তার পাপের শাস্তি পেয়েছে। প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করে না।
কোথায় আজ ওবায়দুল কাদের, কোথায় আজ হাছান মাহমুদ, কোথায় হানিফ?
কোথায় আইন মন্ত্রী? চ্যাটাং চ্যাটাং কথা তো তারা কম বলেন নাই। কোথায় নায়ক ফেরদৌস? চিৎকার করে বলেছিলেন ফেরদৌস, দুই বোনের দায়িত্ব আমি নিলাম। বিপদের সময় আজ হাসিনার পাশে কেউ নেই। সবাই নিজের জীবন বাচাতে ব্যস্ত। ছাত্রলীগের পোলাপান কোথায় আজ? তারা তো কুকুরের মতো ঘেউঘেউ কম করে নাই। অন্যায় ও জুলুম দীর্ঘদিন চলতে পারে না। জামাত শিবিরের কুট চালে শেখ হাসিনা ধরাশায়ী। কথায় আছে, অতি বাড় বেরো না, ঝড়ে পড়ে যাবে। এখন হাসিনা বুঝুক নিজ দেশে ফিরতে না পাওয়ার কষ্ট। তসলিমা নাসরিন কে তিনি লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনেন নাই। তসলিমা নাসরিন দেশে আসার জন্য কাকুতি মিনতি কম করেন নাই। তসলিমা একজন লেখক। তি লিখেছেন। লেখালেখি করা কি অন্যায়? এজন্য একজন মানুষকে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে? আর দূর্নীতিবাজরা দেশে থাকবে? জামাত শিবির দেশে থাকবে। অপরাধীরা দেশে থাকিবে? শেখ হাসিনা আজ দেশে নেই বলে, একদল অদক্ষ, অযোগ্য এবং জামাত মানসিকতার লোক দেশ পরিচালনা করছে। ছি:।
হ্যা শেখ হাসিনার অনেক দোষ থাকলেও, তিনি ভালো ভালো অনেক কাজ করেছেন।
শেখ মুজিবের খুনীদের বিচার করেছেন। রাজাকারদের বিচার করেছেন। মেট্রোরেল থেকে শুরু করে পদ্মাসেতু করেছেন। করেছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। দেশকে ডিজিটাল করেছেন। সরকারি অফিস আদালত আধুনিকায়ন করেছেন। লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, জামাত শিবিরকে কোনঠাসা করে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশে জংগী উত্থান হতে দেননি। শেখ হাসিনা আজ নেই বলে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করেছে। তিনি যদি আবার প্রধানমন্ত্রী হোন, তাহলে জামাত শিবিরের খবর আছে। বৈষম্যবিরোধীওলাদের খবর আছে। জয় বাংলা স্লোগান মুছে দেওয়া হচ্ছে। ৭২ এর সংবিধান বদলে দেওয়া হচ্ছে, শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ইত্যাদি সব কিছুর বিচার বাংলার মাটিতে হবে। হবেই। অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। হয়তো দেরী হবে কিন্তু অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হয়। কবি বলেছেন, দেরী হোক যায়নি সময়। জামাত শিবির এই দেশের ক্ষতি করতে পারবে না। বাংলা মায়ের একদল দামাল ছেলে আছে, তারা সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক উঁচু করে দাঁড়াবে। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬