somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৩

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় কন্যা আমার-
সেদিন এক আড্ডায় একজন জানতে চাইলো- আমি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি? তাকে আমি কি বলেছি, শোনোঃ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আমার কন্যাকে। আমার কন্যা ফারাজা। আমার কন্যার বয়স এখন ৪ বছর ৪ মাস। সে দারুণ বুদ্ধিমতী। আমার ধারণা বয়সের তুলনায় তার বুদ্ধি বেশি। সেদিন হঠাৎ কন্যা বলল, বাবা রিকশা চালক যা টাকা বলবে তাই দিবে। দামাদামি করবে না। মেয়ের কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম। ইদের দিন এক রিকশা চালক ভাড়া চাইলো ১২০ টাকা। অথচ মুল ভাড়া হচ্ছে ৫০ টাকা। বললাম, ৫০ টাকা ভাড়া তুমি ১২০ টাকা বলছো কেন? রিকশা চালক বলল, আজ ইদের দিন। আমি নিশ্চিত কন্যা এবং কন্যার মায়ের কথা মতো চললে, পথের ফকির হয়ে যেতে হবে আমাকে। সুরভি হিসেবে কাচা। আমি নিজেও হিসাবে খুব পাকা নই।

আমি একজন নরম মনের মানুষ।
হিংস্রতা আমার পছন্দ নয়। মারামারি কাটাকাটি আমার পছন্দ নয়। আজ পর্যন্ত আমি কোনোদিন গরু জবাই দেখিনি। এমনকি কোনোদিন একটা মূরগী পর্যন্ত জবো করিনি। অথচ পৃথিবীটা নিষ্ঠুর। ভয়ংকর নিষ্ঠুর। আমি মরে গেলে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমার মেয়েটা থাকবে কি করে! এই চিন্তায় আমি অস্থির। ভয়ংকর সব হায়েনারা এই দেশে বাস করে। মানবিক এবং হৃদয়বান মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক কম। এই দেশে নিশ্চিন্ত মনে আনন্দ নিয়ে বড় হওয়া প্রায় অসম্ভব। সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার জন্য পিতা মাতার দীর্ঘদিন বেচে থাকা দরকার। যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সে পিতামাতাকে হারায় তাদের দু:খের শেষ নেই। কষ্টের শেষ নেই।

কন্যা নতুন একটা শব্দ শিখেছে, বুঝতে পেরেছো?
সব কথা শেষে ফারাজা বলবে, বুঝতে পেরেছো? যেমন, বাবা বিকেলে বাইরে গেলে আমি আইসক্রিম খাবো। বুঝতে পেরেছো? বাবা শুক্রবার প্লে গ্রাউন্ডে নিয়ে যাবে, বুঝতে পেরেছো? বাবা আমি পার্পল কালারের জামাটা কিনবো, বুঝতে পেরেছো। আমার এক শিক্ষক ছিলেন। তিনি তার সব কথার শেষে বলতেন, বুঝতে পেরেছো? ফারাজার মুখে 'বুঝতে পেরেছো', শুনতে আমার ভালো লাগে। সম্ভবত ফারাজা তার স্কুল থেকে 'বুঝতে' পেরেছো' শব্দটা শিখেছে। অবশ্য এই বয়সে বাচ্চারা নতুন নতুন জিনিস শিখে। কিন্তু সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না, অতি সহজেই ভুলে যায়। হয়তো ফারাজা নতুন কিছু শিখবে তখন আর কথায় কথায়- 'বুঝতে পেরেছো' বলবে না।

কন্যাকে ভালোবাসতে গিয়েই আমি সবাইকে ভালোবাসতে শিখে গেছি।
ফারাজার মতো বয়সী সমস্ত বাচ্চাকেই আমি ভালোবাসি। রাস্তাঘাটে আমার কন্যার বয়সী ছেলেমেয়ে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। আইসক্রিম কিনে দিতে ইচ্ছে করে। নিজের অজান্তেই সমস্ত বাচ্চাদের জন্য প্রার্থনা করি। ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। আমার বাচ্চাকে ভালোবাসতে গিয়ে আমি পুরো দেশকে ভালোবাসি। পুরো জাতিকে ভালোবাসি। একটা ইট গেথে যেমন ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। তাতে পুরো ইমারত তৈরি হয়ে যায় না। অথচ পুরো ইমারত তৈরির কাজ শুরু হয়। ঠিক ভালোবাসাও তেমনি। আমার কন্যাকে ভালোবাসতে গিয়ে সমস্ত বাচ্চাদের ভালো বেসে ফেলি। এজন্যই মানুষ যুগে যুগে ভালোবাসার এত জয়গান গেয়েছে।

আমি আমার মাকে ভালোবাসি। মৃত বাবাকে ভালোবাসি।
ভাইবোনকে ভালাবাসি। তাদের সন্তানকে ভালোবাসি। আত্মীয় স্বজনদের ভালোবাসি। দেশকে ভালোবাসি। প্রভু যীশু বলেছেন, 'যাকে ভালোবাসো তার জন্য কিছু করো। প্রতিদান আশা করো না'। নিজের সবটুকু দিয়ে কাউকে ভালোবাসা চারটেখানি কথা নয়। সবাই পারে না। আমাদের বাসায় ঘরের কাজে সাহায্য করে মিনহাজের মা। মিনহাজ তার মায়ের সাথে প্রতিদিন আমাদের বাসায় আসে। আমি মিনহাজকেও ভালোবাসি। মিনহাজকে আমি ইদের সালামি দিয়েছি। নিজের হাতে তরমুজ কেটে খেতে দিয়েছি। মিনহাজ তরমুজ খুব পছন্দ করে। মিনহাজের মাকে বলেছি, মিনহাজকে ভুলেও মাদ্রাসায় দেবেন না। স্কুলে দিবেন। মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নত জীবন দিতে পারবে না। মাদ্রাসায় পড়লে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। এবং ভুল ভাবনায় জীবন পার করতে হবে।

আমার জন্য ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো ঘুম না হলে পরের দিনটা ভালো যায় না। গা ম্যাজ ম্যাজ করে। ইদানিং দুপুরে খাওয়ার পর খুব ঘুম পায়। আমার ঘুমটা গুরুত্ব দেয় আমার মা। যাইহোক, আজ দুপুরে খেয়েছি, খাওয়া শেষে একটা বই হাতে নিয়েছি। কয়েক পাতা পড়তেই চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছিলো। সুরভি দোতলা গিয়েছে ভাবীর সাথে গল্প করতে। ফারাজা পাশের ঘরে টিভি দেখছে। এই সুযোগে আমি বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলাম। গভীর ঘুম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। একটা স্বপ্নও দেখে ফেললাম। ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। ডাক্তার বাশি বাজাচ্ছেন। আমি বললাম, আমাকে ঘুমাতে দেন। দয়া করে বাশি বাজানো বন্ধ করুন। ডাক্তার বললেন, বাশি আমি বাজাচ্ছি না। আপনার কন্যা বাশি বাজাচ্ছে। ঘুম ভাংলো। কন্যা আমার কানের কাছে এসে বাশি বাজাচ্ছে। ইদের দিন কন্যাকে এই বাশিটা কিনে দিয়েছিলাম। বললাম, কি হয়েছে? বলল, রিমোট কাজ করছে না বাবা। আমি চ্যানেল চেঞ্জ করতে পারছি না।




সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৬
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন থাপ্পড় খাবি!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩



ঘটনাঃ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পতনের সময়।
চৈত্র মাস। সারাদিন প্রচন্ড গরম। জামাই তার বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সুন্দর গ্রামের রাস্তা। পড়ন্ত বিকেল। বউটা সুন্দর করে সেজেছে। গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×