somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আজকের ডায়েরী- ১৫০

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া হবে। ঘুরাফিরা হবে। একটা বড় গাড়িও ভাড়া করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবারের সদস্য তো কম না। এর-উপর আছে তিনজন গেস্ট। আমাদের বাসায় সারা বছর ৩/৪ জন গেস্ট থাকেই। এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে মাওয়া। বাবু বাজার ব্রীজে উঠলে এক ঘণ্টাও লাগবে না। সুন্দর রাস্তা। এই রাস্তা কোন সরকারের আমলে হয়েছে? যাইহোক, আমার দেরীর কারনে রওনা দিতে হয়েছে দুপুর তিনটায়। রাস্তাঘাট ফাঁকা বলা যেতে পারে। আমাদের ড্রাইভার আলী। আলী গাড়ি ভালো চালায়। যদিও বয়স অল্প। আলী বিয়ে করেছে। এযুগের পোলাপান অল্প বয়সেই বিয়ে করে ফেলে ধর্মীয় কারণে।

আমার মনটা ভালো ছিলো না।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর- হঠাত ফারাজার চোখ ফুলে উঠেছে। লাল হয়ে গেছে। সুরভি যখন আমাকে মোবাইলে জানালো। তখন ঠিক করলাম- আমি মাওয়া যাবো না। সুরভিকে বললাম, ওরা যাক। আমাদের যাওয়ার দরকার নেই। সুরভি বলল- মাওয়া যাবো শুনে, গতকাল থেকে মেয়ে অনেক খুশি। এখন না গেলে মেয়ে মন খারাপ করবে। মেয়েকে চশমা পড়িয়ে নিয়ে গেলাম। আমি এক গাড়িতে, মেয়ে আর সুরভি আরেক গাড়িতে। যাইহোক, আমি একটু পর পর মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলেছি। ইদানিং সুরভিকে কেমন অচেনা মনে হয়। তার চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডাক্তার চশমা দিয়েছেন। সুরভি সারাক্ষন চশমা পড়ে থাকে। আরেহ ভাই, ডাক্তার তো আমাকেও চশমা দিয়েছেন- আমি তো সারাক্ষন চশমা পরে থাকি না। আমি তো চশমা পরিই না। মাসের পর মাস চলে যায়।

শ্রীনগর পার হয়ে যাচ্ছিলাম।
তখন বড় ভাই বলল, মাওয়া যাওয়ার আগে আব্বার কবর জিয়ারত করে যাই। গ্রামের বাড়িতে আব্বাকে কবর দেওয়া হয়েছে। শ্রীনগর থেকে মাত্র বিশ মিনিট সময় লাগবে আমাদের গ্রামে যেতে। আমাদের গাড়ি প্রায় মাওয়ার কাছে চলে গিয়েছিলো। আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে শ্রীনগর গেলাম। কাউকে না জানিয়ে হঠাত গ্রামে গিয়েছি। সবাই বেশ অবাক হয়েছে। আব্বার কবর জিয়ারত করা হলো। বাচ্চারা উঠানে অনেক খেলা করলো। আম গাছে আম হয়েছে। অনেক কাঠাল হয়েছে। মসজিদের ইমাম সাহেব দুটা কাঠাল আমাদের গাড়ির ডিকিতে দিয়ে দিলেন। আমরা বিকেলে চা-নাস্তা খেয়ে মাওয়া গেলাম। খুব শ্রীঘই আমরা গ্রামে একটা দোতলা বাড়ি বানাবো। সমস্যা হলো চাচারা চায় না আমরা গ্রামে বাড়ি করি। আব্বা মারা গেছেন। কিন্তু চাচারা আমাদের জায়গাটুকু বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। গড়িমসি করছেন। চাচারা বলেছেন, কোরবানীর ইদের পর জায়গা বুঝিয়ে দেবেন।

ভর সন্ধ্যায় আমরা মাওয়া পৌছালাম।
আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে শাবির গরু খুব পছন্দ করে। বিশেষ করে লাল গরু। মাওয়া ঘাটের কাছেই এক বিশাল গরুর ফার্ম। ডাচ ডেইরী। আধুনিক ফার্ম। আমরা সবাই মিলে গরু দেখতে গেলাম। আগেই অনুমতি নেওয়া ছিলো, তাই প্রবেশের কোনো সমস্যা হয় নাই। ফার্ম দেখে আমি মুগ্ধ। দুই হাজারের উপর গরু আছে। বিশাল সাইজের সব গরু। একটাও রোগা পাতলা গরু নেই। প্রতিদিন ১২ টন ঘাস লাগে। ১৫০ জন মানুষ এখানে কাজ করেন। আগামী কোরবানী ইদের জন্য অনেক গুলো গরু অলরেডি বিক্রি হয়ে গেছে। অবাক বিষয় হলো- এই ফার্মে বিদেশী কুকুর আছে অনেক গুলো। শাবির মন ভরে গরু দেখলো। আমি গরুর সাথে সেলফি তুললাম। আমরা ফেরার সময় ২০ লিটার খাটি দুধ কিনে নিলাম। ইচ্ছা ছিলো কোরবানীর জন্য একটা গরুর এডভান্স করে যাবো। কিন্তু যে গরু পছন্দ হয়- সেই গরুর দাম ৭ লাখ, ৮ লাখ। আমাদের বাজেট সর্ব্বোচ ১ লাখ আশি।

বড় একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।
দেখে মনে হয় যেন- কমিউনিটি সেন্টার। এখানে খাওয়া বিরাট দিকদারি। আগে আস্তো ইলিশ কিনতে হয়। প্রতিটা ইলিশ ২ কেজি করে ওজন। ২৪ শ' টাকা কেজি। সেই ইলিশ কিনে লাইন ধরতে হয়। মাছ কাটার পর আবার লাইন ধরতে হয়, মাছ ভাজার জন্য। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে এক ঘন্টা লেগেছে। পরিবারের সবাই মিলে খেলাম। ফারাজা শরীর ভালো না। তার জন্য রোস্ট পোলাউ নিয়েছি। সে কিছুই খায়নি। খাবার নষ্ট করেছে। এখানে খাবার স্বাদ নয়। কিন্তু দাম ঢাকার চেয়ে ২/৩ গুন বেশি। এদিকে মাওয়া ঘাটের পরিবেশ সুন্দর নয়। রাস্তা ভাঙ্গা। চারপাশে বালু। বালুর স্তূপ জমে আছে। এদিকে এত রেস্টুরেন্ট কিন্তু কেউ রাস্তার পরিবেশ ভালো করছে না? বালু গুলো সরায় না। খুব ধুলো উড়ে। রাস্তায় অটো রিকশা প্রচুর। এখানে কিছু রেস্টুরেন্ট প্রচুর ভিড়। কিছু রেস্টুরেন্ট একদম ফাঁকা। আমি বুঝি না, ঢাকা থেকে তেল পোড়ায়ে এখানে কেন খেতে আসতে হবে?

ফেরার পথে আমরা- কফি খাওয়ার জন্য একটা আধুনিক রেস্টুরেন্টে গেলাম।
নাম- লিফ লাউঞ্জ। মাওয়া রোডে সুন্দর রেস্টুরেন্ট। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। গাড়ি পার্কি এর ব্যবস্থা আছে। দেশী এবং চায়নিজ সব রকম খাবারই পাওয়া যায়। নানান রকম জুস আর কফি। আমরা এখানে কেউ জুস খেলাম কেউ কফি। খাবারের মান ভালো। অনেক ছবি, তুললাম। ভিডিও করলাম। রাত এগারোটায় বাসায় ফিরলাম। এভাবেই বৈশাখের দিনটি পরিবারের সবাই মিলে পার করে ফেললাম। মা আমাদের সাথে যায়নি। সে বাসায় ছিলো। মা'র শরীর ভালো না। সে সারাদিন ইউটিউবে নাটক সিনেমা দেখে। আজ কন্যাকে চোখের ডাক্তার দেখাবো। আমি জানি ডাক্তার না দেখালেও সমস্যা নাই। ৩/৪ দিন পর এমনি চোখ ঠিক হয়ে যাবে। ক'দিন আগে সুরভির চোখেও সমস্যা হয়েছিলো। যাইহোক, সামু ব্লগে ক্রিমিনাল ছাড়া সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×