somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭৭

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমার নাম শাহেদ। শাহেদ জামাল।
আমি ঢাকা থাকি। লেখাপড়া শেষ করে আপাতত বেকার জীবনযাপন করছি। আমার এক প্রেমিকা ছিলো। তার নাম নীলা। নীলার সাথে আমার বিয়ে হয়নি। পোড়া কপাল আমার। আপাতত আমি- গাছপালা ভালোবাসি, তাই রমনা পার্কে প্রতিদিন যাই। ভালো লাগে। রমনা পার্কে যাওয়ার আরেকটা কারন হলো- আমার মেস থেকে রমনা পার্ক কাছে। হেটে যেতে ৬৫ মিনিট সময় লাগে। বোটানিক্যাল গার্ডেনও আমার পছন্দ। সেটা রমনা পার্কের চেয়ে বড় এবং গাছপালা অনেক বেশি। বড় একটা দীঘিও আছে। যানজট পার হয়ে প্রতিদিন মিরপুর যাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া বাস ভাড়া আছে, গার্ডেনে প্রবেশ ফি তো আছেই। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কারো কাছে যাই না। তারা আমাকে অবহেলা করেন। দরিদ্রকে কেউ ভালোবাসে না। আর আমার নিয়ম হচ্ছে যেখানে ভালোবাসা পাই না, সেখানে আমি যাই না।

পৃথিবীতে সব কিছুর গন্ধ আছে।
আদর-ভালোবাসা, রাগ-অভিমান এবং দুঃখ-কষ্ট। আমি সব কিছুর গন্ধ অনুভব করতে পারি। গন্ধ দিয়ে আমি পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝি। এই যে আজ এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি কাওরানবাজার মেট্রোরেলের কাছে। কাচের মতো স্বচ্ছ রোদ উঠেছে। চারপাশ কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে। গন্ধটাও খুব একটা সুখকর নয়। গন্ধ থেকেই বুঝতে পারছি শহর ভালো নেই। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। গত ৮/৯ মাস ধরে দেশে যা ঘটছে- তাতে দেশ মন্দের দিকেই যাচ্ছে। আমি শাহেদ জামাল দেশ নিয়ে চিন্তিত। কি হচ্ছে দেশে এসব! হাসিনার আমলে গত ১৫ বছরে তো এরকম হয়নি। আমাদের দেশে পাকিস্তানের পতাকা! জামাত শিবির দেশটারে কি দখল করে নিলো। শেখ হাসিনা আজ নেই বলে- দেশের এই পরিস্থিতি? এই সমাজ, এই জাতি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে। এরা বিকারগ্রস্ত। এই প্রজন্ম হয়ে গেছে পঙ্গু প্রজন্ম।

কয়েকটা ঘটনার কথা বলি-
ঘটনা-১। এক মেয়ে ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সে ফাঁস নিবে। জামাই বটি দিয়ে জানালা ভাঙছে। জানালা ভেঙ্গে বউকে উদ্ধার করেছে। পুরো ঘটনাটা ভিডিও করেছে শ্বাশুড়ি। ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে দিয়েছে। নানান রকম লোকজন নানান রকম মন্তব্য করছে। মন্তব্য গুলো পড়লেই বুঝা যায় কি মারাত্মকভাবে জাতি অসুস্থ।
ঘটনা-২। একটা পরিবার। তাদের বাসায় জ্বিন আছে। জ্বিনটা খুব রাগী। সে ঘরের জিনিসপত্র ফেলে দেয়। পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা জ্বীনকে দেখতে পায়। মহিলা আয়াতুল কুরসি পড়ে। জ্বীন পালিয়ে যায়। পরিবারটি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে। চ্যানেলের ভিউ দিন দিন বাড়ছে।
ঘটনা-৩। ক'দিন পর-পরই ঢাকা কলেজ আর সিটি কলেজ ধুমধাম লেগে যায়। পুরো রাস্তা গজব অবস্থা হয়। ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলতেই থাকে। ব্যস্ত রাস্তায় লম্বা জ্যাম লেগে যায়। পুলিশের বাধ ভেঙ্গে যায়। এক পুলিশ এক ছাত্রকে পরপর কয়েকটা থাপ্পড় দিলো। থাপ্পড়ের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লো ফেসবুকে। পুলিশ থাপ্পড় দেওয়াতে জনগন খুশি।
ঘটনা-৪। একলোক অসুস্থ হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়েছে। যায় যায় অবস্থা। সেই লোক চিৎকার করে বলছে, জয় বাংলা। জয় বন্ধু। বলেই যাচ্ছে।
ঘটনা-৫। ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে একটা দল তাবলীগে গেছে বরিশাল। দুপুরে খাওয়ার জন্য ১৪ কেজি মাংস আনা হয়েছিলো। তাবলীগের লোকজন যোহর নামাজ পড়তে গেছে। নামাজ শেষ করে এসে দেখে মাংস নাই। কে বা কারা ১৪ কেজি মাংস নিয়ে গেছে। মসজিদ কমিটি বিরাট লজ্জার মধ্যে পড়েছে। পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ বলেছে তদন্ত হবে।
ঘটনা-৬। সিএনজিওলারা একটা দাবী করেছে। মিটার চলবে না। এদিকে অটোরিকশা চালকরা পাঠাও চালকদের মেরেছে। এই ঘটনার দুদিন পর ছাত্র-জনতা অটোচালকদের ধরে ইচ্ছা মতো চড় থাপ্পড় মেরেছে। অনেক অটো রিকশা ওভার ব্রীজের উপর উঠে। ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে লোকজন। তারা ব্রীজ অটোরিকশা ব্রীজ থেকে নামতেই- কান টেনে দিচ্ছে। চড় থাপ্পড় দিচ্ছে।
ঘটনা-৭। একটা অনুষ্ঠান করা হয়। সেখানে জনপ্রিয় টিকটকারদের আমন্ত্রন জানানো হয়। ফালতু কিছু প্রশ্ন করা হয়। যেমন- আপনার ইনকাম কত? স্বাধীনতা দিবস কবে? অতিথি (মেয়ে) চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। তারপর তার হাতে একটা লম্বা বেগুন দিয়ে বলা হয়- আপনার হাতে কি? এরপর নারী অতিথির কানে হেডফোন দেওয়া হয়। সঞ্চালক বলেন- পুদিনা। নারী অতিথি বলেন *দিনা। এই হচ্ছে অবস্থা।
ঘটনা-৮। ফেসবুক পেজে বলা হয়- ''আমি গুরুতর ভাবে ৭ জন বেকার ব্যাক্তিকে খুজছি। যারা আগামীকাল সকাল থেকেই কাজ করতে আগ্রহী''। একই লেখা, একই কথা প্রতিদিন কমপক্ষে বিশ/ত্রিশ টা পেজে লেখা হয়। দেশে বেকারের অভাব নেই। তারা সেই পেজে ঝাপিয়ে পড়ে। তখন বলা হয়- ইনবক্সে যোগাযোগ করতে। ইনবক্সে গেলে বলা হয়- একটা অনলাইন মিটিং হবে। অনেক লোক আমাদের সাথে কাজ করতে চায়। কিন্তু আমরা নিবো সাত জন। যারা কাজ করতে আগ্রহী তারা **** এই নম্বরে ৫০০/১০০০ টাকা বিকাশ করুন দ্রুত। বিকাশ করার পর আর এদের খুজে পাওয়া যায় না।

পুরো বাংলাদেশ টাই পচে-গলে নষ্ট হয়ে গেছে।
চারিদিক থেকে পচা গন্ধ আসছে। শাহেদ জামালের বমি পায়। চারিদিকে ঠক প্রতারক। একটা দেশে এত এত খারাপ মানুষ থাকলে, সাধারন মানুষ এত খারাপের মাঝে বেঁচে থাকবে কি করে? দেশের কোনো মানুষের মধ্যে ভালোত্ব নেই, সততা নেই, মহৎত্ব নেই। রাস্তায় বের হলেই শাহেদ জামাল মানুষের আচার আচরন দেখে অবাক হয়। সবাই কেমন হিংস্র, মারমুখী। দয়া মায়ার লেশ মাত্র কারো মধ্যে নেই। এই জন্য আমি শাহেদ জামাল আজকাল রাস্তায় ঘুরাঘুরি কমিয়ে দিয়েছি। পার্কে বসে থাকি। গাছপালার মধ্যে বসে থাকতে ভালো লাগে। ফেসবুক, টিকটক আর ইউটিউব এই প্রজন্মকে নির্বোধ, নোংরা ও নির্ল্লজ বানিয়ে দিয়েছে। প্রতিবন্ধী বানিয়ে দিয়েছে। আহাম্মক বানিয়ে দিয়েছে। আমাদের কালচার ঢাকা পড়ে গেছে কালো চাদরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১১
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×