somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৯৪

০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নাম তার তারা বিবি।
বয়স ৭৭ বছর। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। সামনের পাটির দাঁত গুলো নেই। খেতে তার বেগ পেতে হয়। আমি তাকে খালা বলে ডাকি। আমাদের এলাকাতেই থাকেন। কিশোর বয়সে তিনি করাচী, লাহোর, মুলতান ও ভারতের কলকাতা, গোহাটি, বারাসাত এলাকায় গিয়েছেন তার বাবা মায়ের সাথে। উনি আমাকে প্রায়ই বলেন, তাকে যেন আমি একবার লাহোর নিয়ে যাই। লাহোরে তার বান্ধবী আছে। বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে চান। এত বছর পরেও নাকি খালা তার বান্ধবীদের দেখলেই চিনতে পারবেন। আমার সাথে দেখা হলেই খালা পুরোনো দিনের গল্প শুরু করেন। আমার যথেষ্ঠ বিরক্ত লাগে। তবু হাসি মুখে খালার গল্প শুনি। একই গল্প অসংখ্য বার করে শুনতে হয়। আজ খালা নিঃসঙ্গ। অথচ তার অনেক গুলো ছেলেমেয়ে আছে।

খালার নিজের বাড়ি। অথচ সে থাকে ছাদে।
ছাদে ছোট একটা ঘর বানিয়েছে। সেই ঘরে একা থাকে। প্রতিটা ফ্লাট ছেলেমেয়েদের নামে লিখে দিয়েছে। তারা ফ্লাট ভাড়া দিয়ে নিজেদের বড় ফ্লাটে চলে গেছে। মাস শেষে তারা ভাড়া নিতে আসে। যে ছেলে আমেরিকা থাকে সে-ও ভাড়া নেয়। এক ছেলে খুলনা জেলা স্কুলের শিক্ষক। সে তার ফ্লাটের ভাড়া নেয় না। তার ফ্লাটের ভাড়া খালাকে নিতে বলেছে। এবং এই ছেলে তার মাকে প্রতিমাসে হাত খরচ দেয়। খালার হাতে এখন অনেক নগদ টাকা। কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা হবে। আমার মায়ের ধারনা ৩০ লাখ টাকা হবে। যাইহোক, সেই টাকা সে ব্যাংকে রাখে নাই। নিজের বালিশের নিচে টাকা রেখে ঘুমায়। অথচ খালা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছে। আমি তাকে বলেছি, খালা আপনি আমার বাসায় চলে আসুন। আরামে থাকুন। অন্তত একা একা থাকতে হবে না।

রাস্তায় খালার সাথে প্রায়ই দেখা হয়।
খালা হেটে হেটে বাজার থেকে ফিরছে। আমি বললাম, বাজার থেকে রিকশা নিয়ে এলেই পারতেন। ঘেমে গেছেন। খালা বললেন, শুধু শুধু চল্লিশ টাকা ভাড়া কেন খরচ করবো? পনের মিনিটের পথ। আমি মনে মনে ভাবি এত টাকা তার বালিশের নিচে, অথচ উনি কষ্ট করছেন কেন? এই টাকা দিয়ে কি করবেন? নিজে ডাল ভাত খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। অথচ উনি বিলাসিতা করতে পারেন। উনাকে কেউ মানা করবে না। ডাক্তার দেখান সরকারি হাসপাতালে। এত কষ্ট উনি কেন করছেন? তার তো টাকা আছে। নিজের ফ্লাটে না থেকে, ছাদে থাকেন। ফ্লাট ভাড়ার টাকাও পান। ছেলেমেয়ে সব বড় হয়ে গেছে, বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই চাকরি বাকরি করছে। আজীবন খালা কষ্ট করেই গেলেন। শেষ বয়সে এসেও কষ্ট করছেন। অথচ এখন তার হাতে টাকা আছে।

সুরভি মাঝে মাঝে রান্না করে খালাকে খাবার দেয়।
খালা সেই খাবার খেতে চায় না। জোর করে তাকে খাবার দিতে হয়। সেই খাবার খেয়ে খালা সুরভিকে ফোন দেয়। বলে, রান্না খুব ভালো হয়েছে। খেয়ে আরাম পেয়েছি। যৌবনে খালা দারুন সুন্দরী ছিলেন। আমি তার ছবি দেখেছি। খালার বিয়ে হয় একজন ফল ব্যবসায়ীর সাথে। সেই লোক একদিন স্ট্রোক করে। মারা যায়। মৃত্যুর সময় সেই ফল ব্যবসায়ী তার পাচ সন্তানকে রেখে যায়। আর নগদ সাত হাজার টাকা। আজিব রহস্য, খালা তার প্রতিটা ছেলেমেয়েকে মাস্টার্স পাশ করান। এবং সবাইকে বিয়ে দেন। গত বছর খালা হজ্ব করেছেন। আজ আমি খালাকে নিয়ে কেন লিখলাম। কারন, গতকাল আমি খালাকে স্বপ্নে দেখেছি। তাকে স্বপ্নে দেখার কোনো কারন নেই। আমার স্বপ্ন গুলোতে সব সময় এডভেঞ্চার থাকে। আগুন লেগেছে, সাপ তাড়া করেছে, পাহাড় থেকে আমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি, হুজুররা চাপাতি নিয়ে আমাকে ধাওয়া দিচ্ছে।

খালাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নটা এই রকমঃ
খালার সাথে রাস্তায় দেখা। খালা বাজার থেকে ফিরছেন। আমাকে দেখেই বললেন, আজ দুপুরে সুরভিকে নিয়ে বাসায় আসো। পালং শাক দিয়ে কই মাছ রান্না করবো। দেশী কই! সাথে ঘনডাল আর কাচকি মাছ। আমি বললাম, এইসব খাবার আমার পছন্দ না। খালা বললেন, কি তোর পছন্দ? আমি বললাম, গরুর মাংস আর সাদা ভাত। সাথে লাল শাক ভাজি। লাল শাকে অবশ্যই চিংড়ি মাছ থাকতে হবে। খালা বললেন, এখন আমি এসব রান্না ভুলে গেছি। আমার দাঁত নাই। এখন খাবার খেতে পারি না। সামান্য সিদ্ধ হলেই আমার চলে। স্বপ্ন এতটুকুই। সকালে আমি সুরভিকে খালার কথা জিজ্ঞেস করলাম। সুরভি বলল, খালা তো আজ তেরো দিন ধরে হাসপাতালে ভরতি। সুরভির উপর মেজাজ খারাপ হলো। এই গুরুত্বপূর্ণ খবরটা সে আমাকে দেয়নি। অথচ তার বান্ধবীর বাচ্চা খেলতে গিয়ে দাঁত ভেঙ্গে গেছে, সেই খবর আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। তার বাবার বাড়ির বুয়া দুই দিন ধরে আসে না, সেই খবর জানিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×