নবীজির জন্মের আগে আরবে বেশ কিছু ধর্ম ছিলো।
ধর্ম না বলে কুসংস্কার বলা ভালো। সেই সময় মানুষ রসিকে সাপ মনে করতো। মগজহীন মানুষ দিয়ে ভরা ছিলো আরব। সেই সময়- সবচেয়ে জমজমাট ধর্ম ছিলো দেবদেবীর পূজা করা। দেবদেবীকে খুশি করার জন্য নাচ গান করা হতো। ভেড়া ও উট বলি দেওয়া হতো। তখন আরবের লোকজন আল্লাহর নাম পর্যন্ত শুনেনি। অবশ্য সেই সময় এক শ্রেনীর লোকজন ধর্মকে তেমন গুরুত্ব দিতো না। আরবরা ডায়োনিসাস ও জিউসের পূজা করত। এর আগে তারা বড় বড় পাথর পূজা করতো। কোথাও গেলে পাথর গুলো সাথে সাথে করে নিয়ে যেতো। লোকজন দলে দলে ভাগ হয়, আর তাদের ধর্মের পরিবর্তন হয়। যেমনঃ অমুক গোত্র পাথর পূজা করে, তাহলে আমরা পাথর দিয়ে মূর্তি বানিয়ে পূজা করবো।
মূলত আরবের লোকজন যাযাবর ছিলো, বেদুইন ছিলো।
তাদের জ্ঞান বুদ্ধি কম ছিলো। তারা মনে করতো সব দেবতা ভালো না, কিছু খারাপ দেবতাও আছে। খারাপ দেবতা ঝড় তুফান দেয়। অসুখ দেয়। ভুলভ্রান্তি আর কুসংস্কার নিয়ে সময় গড়াতে থাকে। কালক্রমে স্থায়ী নাম হয়- 'ঈশ্বর'। প্রভু। উপাধি হিসেবে 'আল্লাহ' শব্দটি আসে। আল্লাহ শব্দটি প্রথম আসে এক কবির লেখায়। কবির নাম সুলমার। সে তার কবিতায় মহান কিছু বুঝাতে গিয়ে 'আল্লাহ' নামটি ব্যবহার করেন। এদিকে অনেক আগে থেকেই- 'ইলাহ', 'ইল' শব্দ গুলো ব্যবহার করতো ব্যাবিলনীয়রা। যার অর্থ প্রভু। আরবরা তাদের কাছ থেকে এই শব্দ গুলো শিখে। একসময় পুরো আরবে- আল্লাহ সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে পরিচিত লাভ করে। কোনো কোনো গোত্র মানতো- রাহমান (দয়ালু) নামে এক দেবতা আছে।
আরবের বিভিন্ন গোত্র আল্লাহকে বিভিন্ন দেবতা মনে করতো।
কেউ কেউ আল্লাহকে দেবী মনে করতো। পাতালের দেবী। ভাগ্যের দেবী। যাইহোক, পুরো আরব জুড়ে কোনো নিয়ম নীতি ছিলো। জোর যার মুল্লুক তার- এরকম অবস্থা। এক গোত্র আরেক গোত্রকে আচমকা আক্রমন করতো। নারীদের নিয়ে যেতো জোর করে। ভোগ করতো। কেউ কেউ নারীদের বিক্রি করে দিতো। এজন্য অনেক বাবা মা তাদের মেয়ে সন্তানকে জন্মের পর-পরই মেরে ফেলতো। বিশ্বের মধ্যে আরবে নারীদের অবস্থা ছিলো সবচেয়ে করুন। অথচ সেই সময় পৃথিবীর অনেক দেশেই নারীরা সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিলো। কিন্তু আরবেরা অসভ্য এবং বর্বর। বর্তমান যুগে আরবেরা অনেক ভালো।
সেই আদি যুগ থেকেই- মক্কা মদীনায় জনসংখ্যা বেশি ছিলো।
জমজমাট এলাকা। আরবরা যাদুটোনা, ঝাড়ফুঁক এবং তাবিজ কবচ বিশ্বাস করতো। মূলত যুদ্ধ করে-করে আরবরা নিজেদের সর্বনাশ করেছে। যুদ্ধের কারণে আরবে শান্তি ছিলো না। এ কারণে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আরবে কেউ যেতে চাইতো না। তাছাড়া মরুভূমির দেশ, দরিদ্র দেশ। কুসংস্কারে ভরা। পুরো আরববাসী এরিস্টটল এবং গৌতম বুদ্ধের নাম পর্যন্ত শুনেনি। জ্ঞান থেকে তারা পিছিয়ে। অন্ধ বিশ্বাস নিয়েই তারা ছিলো। একবার এক ব্যবসায়ী তার দল নিয়ে মরুভূমি দিয়ে সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিলো। আচমকা একটা দল তাদের আক্রমন করে। যুদ্ধ শুরু করে দেয়। তখন তাদের বলল ওহে মক্কা মদীনাবাসী- যুদ্ধ করো না। আমাদের সম্পদ ও নারী কেড়ে নিও না। তোমরা ডাকাতি না করে, কর্ম করো। তোমরা সাগর আছে। সাগর থেকে মাছ ধরো। সেই মাছ বিক্রি করে তোমরা মক্কা মদীনাবাসী সুন্দর ভাবে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারবে। আরবেরা সেই লোকের কল্লা কেটে দিলো। নারীদের বন্ধী করলো। সম্পদ লুট করলো। সেই নারী, সম্পদ বন্টন নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু হলো।
জুয়া খেলতে এবং মদ আরবরা খুব পছন্দ করতো।
ধনীরা সুদের ব্যবসা করতো। টাকা দিতে না পারলে স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে যেতো। বিয়ের বালাই ছিলো না। ক্ষমতা আছে, ভোগ করো। কে বোন, কে মা, কে কন্যা এসবের কোনো নিয়ম কানুন ছিলো না। যেসব নারীর রুপ যৌবন থাকতো না, তাদের পাগলা ঘোড়ার লেজের সাথে বেধে দেওয়া হতো। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঘোড়া দৌড়াতে থাকতো। তবে আরবের কতিপয় লোকজন কবিতা, গান আর নাচ পছন্দ করতো। কাবাঘরের দেয়ালে কবিতা লিখে রাখতো। সুর করে তারা কবিতা আবৃত্তি করতো। এরাই আবার ডাকাতি করতো। মরুভূমির পথে দিয়ে কোনো কাফেলা গেলে তারা ডাকাতি করতো। মাসে কমপক্ষে তারা ২০ টা যুদ্ধ করতো। সারা বছর প্রচন্ড তাপ, ধূলিঝড় আর বৃষ্টি হতো বছরে দুই তিনবার। আরবদের জাতীয় খাবার ছিলো খেজুর।
৫৬৯ সালে আল্লাহ আরবের অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন।
আল্লাহ নবীজিকে আরবে পাঠালেন। নবীজি সীমাহীন কষ্ট করে বেলাইনে চলে যাওয়া আরবকে লাইনে নিয়ে আসেন। নবীজির কল্যানে আমরা পেলাম- একটা পরিপূর্ন ধর্ম। একটা কিতাব। আসমানী কিতাব। নবীজি বলে দিলেন, এই কিতাব তোমরা আগলে রাখো। ধার্মিকেরা কিতাব আকড়ে ধরলো। কিন্তু আরেকদল এই কিতাব থেকে দূরে রইলো। যারা দূরে রইলো তাদের কপালে দুঃখ আছে। দুঃখ শুরু হবে মৃত্যুর পর থেকে। কেয়ামত পর্যন্ত এই কিতাব থাকবে। আমার কিছু প্রিয় সূরা হচ্ছে- আল হিজর। মানে- পাথুরে পাহাড়। আরেকটা সূরা হচ্ছে, আন নাহল। অর্থ হচ্ছে- মৌমাছি। তারপর আল কাহফ। মানে গুহা। এই সূরা গুলো পড়লে আল্লাহপাক খুশি হন। আল্লাহকে খুশি রাখা ভীষন জরুরী। অফিসে যেমন বসকে খুশি রাখা ভালো। তেমনি পরকালে ভালো থাকার জন্য আল্লাহকে খুশি রাখা অতীব জরুরী। ইহকাল তো দুই দিনের। পরকাল তো অনন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০২