
আমাদের দেশের লোকজন মসজিদে খাবার দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকেন।
রমজান মাসে তো মসজিদে খাবার দেওয়ার জন্য পাল্লা-পাল্লি লেগে যায়। লম্বা লাইন। হুজুরদের সিডিউল পাওয়া যায় না। মসজিদে খাবার দিলে হয়তো অনেক সোয়াব। মুসলমানরা সোয়াবের কাঙ্গাল। আমার ছোট ভাইয়ের বউ রমজান মাসে মসজিদে খাবার দিবেই। কমপক্ষে ৫/৬ বার দিবে। রাজকীয় খাবার। অনেক রকমের ফল। বাবুর্চির হাতের রান্না করা তেহারী বা বিরানী। যেন রাজা বাদশাদের জন্য খাবার। হুজুরদের মধ্যে এমন একটা ভাব সেই খাবার গ্রহন করে তারা যেন আমাদের করুনা করলো। দয়া করলো। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে হুজুরেরা আল্লাহর রহমতে তিনবেলা ভালো খাবার খান।
আমাদের এলাকায় মসজিদের প্রত্যেক হুজুরদের স্বাস্থ্য ভালো।
তাদের বাজার করতে হয় না। কিন্তু যথাসময়ে ভালো ভালো খাবার পেয়ে যান। আমাদের এলাকায় ধনী লোকদের অভাব নেই। সবাই মসজিদে খাবার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সাবেক এক বিএনপির লোক সীমাহীন টাকা দূর্নীতিকারী সে স্পষ্ট বলে দিয়েছে- মসজিদে তিনবেলা খাবার যাবে আমার বাসা থেকে। ব্যস। সেই দূর্নীতিবাজের উপর তো আর কথা চলে না। হুজুরেরা খুব খুশি। তারা নিয়মিত ভালো খাবার খাচ্ছে। মসজিদে নামাজ পড়ানোর জন্য ইমাম সাহেবের সেলারি অনেক ভালো। আমাদের মসজিদ কমিটির দরাজ দিল। একজন মাস্টার্স পাশ করা ছেলেও চাকরি করে এত টাকা পায় না। মসজিদের খাদেমের সেলারিও ভালো।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা মসজিদ আছে।
ছোট মসজিদ। শুক্রবার ছাড়া মসজিদে তেমন একটা লোকজন হয় না। সেই মসজিদে রুগ্ন দশা। মসজিদের ইমাম প্রায়ই আমাদের ফোন দেন। মাইক লাগবে, লাইট লাগবে, দেয়াল ঘড়ি লাগবে, ওজুখানায় টাইলস বসাতে হবে ইত্যাদি। আমি আগামী সপ্তাহে ঢাকা আসিব। আমার বুকের এক্স-রে করাইতে হইবে। আমার ছোট ভাই মসজিদের জন্য মুক্তহস্তে টাকা দেয়। তার ধারনা এটা বিরাট সোয়াবের কাজ। কিছুতেই এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। ছোট ভাই ফিসফিস করে বলে, হুজুর আমিই দিবো। ফাইনাল। অন্য কারো কাছে চাইতে যাবেন না। ইমাম সাহেব, মোয়াজ্জেম, খাদেম এরা মূলত মসজিদে চাকরি করেন। মাস শেষে সেলারি নেন। আচ্ছা, সেলারি না পেলে তারা নিশ্চয়ই মসজিদে আযান দেওয়া বন্ধ করে দিবেন? ইমাম সাহেব নামাজ পড়ানো বন্ধ করে দিবেন। ফরিদপুরে দেখেছিলাম, মোয়াজ্জেম বেতন পায়নি, তাই সে মসজিদের মাইক নিয়ে চলে গেছে।
ফালতু প্যাচাল বাদ দিয়ে আসল কথায় আসি।
এই বঙ্গ দেশে একটা গ্রাম আছে। গ্রামের নাম বড়ই। ঢাকা থেকে অনেক দূরের গ্রাম। সেই গ্রামে একটা মসজিদ আছে। উপরে টিনের চালা। চারিদিকে ইটের গাঁথুনি। শহরের মসজিদ গুলো সুন্দর হয়। গ্রামের মসজিদ গুলো শহরের মসজিদের মতো ঝাকজমক হয় না। যাইহোক, বড়ই গ্রামে মসজিদে ইমাম, মোয়াজ্জেম আর খাদেম একজনই। খরচ কমানোর জন্য একজনই সব কাজ করেন। মসজিদের হুজুর অন্য অঞ্চলের মানুষ। বিয়েসাদি করেন নাই। হুজুর মসজিদেই থাকেন। ইবাদত বন্দেগি করেন। হুজুরের খাবার আসে বড়ই গ্রামের, একেক দিন একেক বাসা থেকে। হুজুর টিকটক করেন। নাচানাচি-গান টাইপ টিকটক নয়। অন্যরকম টিকটক। প্রতিদিন হুজুর তিনটা টিকটক ভিডিও করেন। সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার নিয়ে। হুজুরের ভিডিও গুলো আমার পছন্দ হয়েছে। সেই সাথে মিউজিক গুলো।
হুজুরের করা দুই একটা ভিডিও'র উদাহরন দেই।
হুজুর বলেন, আজ খাবার এসেছে সৌদি প্রবাসীর বাসা থেকে। খাবারের মান অনুযায়ী হুজুর মিউজিক নির্নয় করেন। তারপর টিফিন বক্স খুলেন। প্রথম বক্সে দেখা যায় লাল শাক বাজি, দ্বিতীয় বাটিতে কই মাছের ঝোল। নিচের বাটিতে ডাল। ডাটা দিয়ে পাতলা ডাল। হুজুর মোটামোটি খুশি। পরের দিনের ভিডিও এই রকমঃ হুজুর আগেই বলে দেন, আজ খাবার এসেছে ভ্যান চালকের বাসা থেকে। দেখা গেলো দারুন সব খাবার। গরুর মাংস, পোলাও, সালাদ। হুজুর খুশি। ভিডিওর সাথে দারুন মিউজিক। তারপর দিন, হুজুর টিফিন বক্স খুলেন। আজ খাবার এসেছে মকবুল চেয়ারম্যান সাহবের বাসা থেকে। চেয়ারম্যান সাহেব গ্রামের ধনী মানুষ। নিশ্চয়ই ভালো খাবার আসবে। কিন্তু টিফিন বক্স খোলার পর দেখা গেলো। খাবার অতি সামান্য। পাটশাক ভাজি আর পাতলা ডাল। আর কিচ্ছু না। ভিডিও'র সাথে করুন মিউজিক বাজে। হুজুরের বিরাট মন খারাপ!
হুজুরের এরকম টিকটক ভিডিও করার মোটিভ কি?
হুজুর মানুষ নামাজ রোজা নিয়ে থাকবেন। তাহাজ্জুত পড়বেন। রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করবেন। গ্রামের বাজারে গিয়ে ধর্মের কথা বলবেন। দ্বীনের কথা বলবেন। সম্ভবত হুজুর টিকটক ভিডিও করে বুঝাতেন চান- গ্রামের গরীবেরা হুজুরকে ভালো খাবার দেয়। ধনীরা ফালতু খাবার দেয়। গরীবদে মন বড়। ধনীদের মন অনেক ছোট। হুজুর কি সুন্দর খাবার দিয়ে ভালো লোক, মন্দ লোক নির্নয় করে ফেললেন! হুজুরদের মানুষের বাড়ি বাড়ি খেয়ে লোভ বেড়ে গেছে। এদের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া দরকার। যা ব্যাটা চড়ে খা। নিজে বাজার কর, রান্না কর। তারপর পেটপুরে খা। আর কত হাওয়ায় জীবন ভাসিয়ে দিবি? হুজুরদের টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব এবং ব্লগ ব্যবহার করা হারাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



