somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

গ্রামের গল্প অথবা মসজিদের হুজুর

১৪ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের দেশের লোকজন মসজিদে খাবার দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকেন।
রমজান মাসে তো মসজিদে খাবার দেওয়ার জন্য পাল্লা-পাল্লি লেগে যায়। লম্বা লাইন। হুজুরদের সিডিউল পাওয়া যায় না। মসজিদে খাবার দিলে হয়তো অনেক সোয়াব। মুসলমানরা সোয়াবের কাঙ্গাল। আমার ছোট ভাইয়ের বউ রমজান মাসে মসজিদে খাবার দিবেই। কমপক্ষে ৫/৬ বার দিবে। রাজকীয় খাবার। অনেক রকমের ফল। বাবুর্চির হাতের রান্না করা তেহারী বা বিরানী। যেন রাজা বাদশাদের জন্য খাবার। হুজুরদের মধ্যে এমন একটা ভাব সেই খাবার গ্রহন করে তারা যেন আমাদের করুনা করলো। দয়া করলো। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে হুজুরেরা আল্লাহর রহমতে তিনবেলা ভালো খাবার খান।

আমাদের এলাকায় মসজিদের প্রত্যেক হুজুরদের স্বাস্থ্য ভালো।
তাদের বাজার করতে হয় না। কিন্তু যথাসময়ে ভালো ভালো খাবার পেয়ে যান। আমাদের এলাকায় ধনী লোকদের অভাব নেই। সবাই মসজিদে খাবার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সাবেক এক বিএনপির লোক সীমাহীন টাকা দূর্নীতিকারী সে স্পষ্ট বলে দিয়েছে- মসজিদে তিনবেলা খাবার যাবে আমার বাসা থেকে। ব্যস। সেই দূর্নীতিবাজের উপর তো আর কথা চলে না। হুজুরেরা খুব খুশি। তারা নিয়মিত ভালো খাবার খাচ্ছে। মসজিদে নামাজ পড়ানোর জন্য ইমাম সাহেবের সেলারি অনেক ভালো। আমাদের মসজিদ কমিটির দরাজ দিল। একজন মাস্টার্স পাশ করা ছেলেও চাকরি করে এত টাকা পায় না। মসজিদের খাদেমের সেলারিও ভালো।

আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা মসজিদ আছে।
ছোট মসজিদ। শুক্রবার ছাড়া মসজিদে তেমন একটা লোকজন হয় না। সেই মসজিদে রুগ্ন দশা। মসজিদের ইমাম প্রায়ই আমাদের ফোন দেন। মাইক লাগবে, লাইট লাগবে, দেয়াল ঘড়ি লাগবে, ওজুখানায় টাইলস বসাতে হবে ইত্যাদি। আমি আগামী সপ্তাহে ঢাকা আসিব। আমার বুকের এক্স-রে করাইতে হইবে। আমার ছোট ভাই মসজিদের জন্য মুক্তহস্তে টাকা দেয়। তার ধারনা এটা বিরাট সোয়াবের কাজ। কিছুতেই এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। ছোট ভাই ফিসফিস করে বলে, হুজুর আমিই দিবো। ফাইনাল। অন্য কারো কাছে চাইতে যাবেন না। ইমাম সাহেব, মোয়াজ্জেম, খাদেম এরা মূলত মসজিদে চাকরি করেন। মাস শেষে সেলারি নেন। আচ্ছা, সেলারি না পেলে তারা নিশ্চয়ই মসজিদে আযান দেওয়া বন্ধ করে দিবেন? ইমাম সাহেব নামাজ পড়ানো বন্ধ করে দিবেন। ফরিদপুরে দেখেছিলাম, মোয়াজ্জেম বেতন পায়নি, তাই সে মসজিদের মাইক নিয়ে চলে গেছে।

ফালতু প্যাচাল বাদ দিয়ে আসল কথায় আসি।
এই বঙ্গ দেশে একটা গ্রাম আছে। গ্রামের নাম বড়ই। ঢাকা থেকে অনেক দূরের গ্রাম। সেই গ্রামে একটা মসজিদ আছে। উপরে টিনের চালা। চারিদিকে ইটের গাঁথুনি। শহরের মসজিদ গুলো সুন্দর হয়। গ্রামের মসজিদ গুলো শহরের মসজিদের মতো ঝাকজমক হয় না। যাইহোক, বড়ই গ্রামে মসজিদে ইমাম, মোয়াজ্জেম আর খাদেম একজনই। খরচ কমানোর জন্য একজনই সব কাজ করেন। মসজিদের হুজুর অন্য অঞ্চলের মানুষ। বিয়েসাদি করেন নাই। হুজুর মসজিদেই থাকেন। ইবাদত বন্দেগি করেন। হুজুরের খাবার আসে বড়ই গ্রামের, একেক দিন একেক বাসা থেকে। হুজুর টিকটক করেন। নাচানাচি-গান টাইপ টিকটক নয়। অন্যরকম টিকটক। প্রতিদিন হুজুর তিনটা টিকটক ভিডিও করেন। সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার নিয়ে। হুজুরের ভিডিও গুলো আমার পছন্দ হয়েছে। সেই সাথে মিউজিক গুলো।

হুজুরের করা দুই একটা ভিডিও'র উদাহরন দেই।
হুজুর বলেন, আজ খাবার এসেছে সৌদি প্রবাসীর বাসা থেকে। খাবারের মান অনুযায়ী হুজুর মিউজিক নির্নয় করেন। তারপর টিফিন বক্স খুলেন। প্রথম বক্সে দেখা যায় লাল শাক বাজি, দ্বিতীয় বাটিতে কই মাছের ঝোল। নিচের বাটিতে ডাল। ডাটা দিয়ে পাতলা ডাল। হুজুর মোটামোটি খুশি। পরের দিনের ভিডিও এই রকমঃ হুজুর আগেই বলে দেন, আজ খাবার এসেছে ভ্যান চালকের বাসা থেকে। দেখা গেলো দারুন সব খাবার। গরুর মাংস, পোলাও, সালাদ। হুজুর খুশি। ভিডিওর সাথে দারুন মিউজিক। তারপর দিন, হুজুর টিফিন বক্স খুলেন। আজ খাবার এসেছে মকবুল চেয়ারম্যান সাহবের বাসা থেকে। চেয়ারম্যান সাহেব গ্রামের ধনী মানুষ। নিশ্চয়ই ভালো খাবার আসবে। কিন্তু টিফিন বক্স খোলার পর দেখা গেলো। খাবার অতি সামান্য। পাটশাক ভাজি আর পাতলা ডাল। আর কিচ্ছু না। ভিডিও'র সাথে করুন মিউজিক বাজে। হুজুরের বিরাট মন খারাপ!

হুজুরের এরকম টিকটক ভিডিও করার মোটিভ কি?
হুজুর মানুষ নামাজ রোজা নিয়ে থাকবেন। তাহাজ্জুত পড়বেন। রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করবেন। গ্রামের বাজারে গিয়ে ধর্মের কথা বলবেন। দ্বীনের কথা বলবেন। সম্ভবত হুজুর টিকটক ভিডিও করে বুঝাতেন চান- গ্রামের গরীবেরা হুজুরকে ভালো খাবার দেয়। ধনীরা ফালতু খাবার দেয়। গরীবদে মন বড়। ধনীদের মন অনেক ছোট। হুজুর কি সুন্দর খাবার দিয়ে ভালো লোক, মন্দ লোক নির্নয় করে ফেললেন! হুজুরদের মানুষের বাড়ি বাড়ি খেয়ে লোভ বেড়ে গেছে। এদের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া দরকার। যা ব্যাটা চড়ে খা। নিজে বাজার কর, রান্না কর। তারপর পেটপুরে খা। আর কত হাওয়ায় জীবন ভাসিয়ে দিবি? হুজুরদের টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব এবং ব্লগ ব্যবহার করা হারাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×