
প্রিয় কন্যা আমার-
আজ শুক্রবার। তোমার স্কুল নেই। অথচ আজ তুমি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বসে আছো। বলছো, মেকাপ বক্স দাও। মাকে মেকাপ করে দিবো। যেদিন তোমার স্কুল থাকে সেদিন তোমাকে টেনেও ঘুম থেকে উঠানো যায় না। গতকাল আমি তোমার জন্য আম এনেছি। তুমি আগ্রহ নিয়ে আম খাও। তোমার আম খাওয়া দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি বললাম, ফাজ্জা আম কি মিষ্টি? তুমি বলল, বাবা খুব মিষ্টি। আম আমার পছন্দ। আমি বললাম, আপেল কি তোমার পছন্দ না? তুমি হেসে বলল, আপেল তো আমার ফেভারিট। আমি খালি হাতে বাসায় ফিরলে তুমি হয়তো মন খারাপ করো।
ফারাজা তাবাসসুম খান-
আর কিছুদিন পর তুমি নার্সারীতে উঠবে। তোমার প্লে-গ্রুপ শেষের দিকে। আগামী রবিবার তোমাদের স্কুলে যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠান হবে। তুমি টিচার সাজবে। তুমি বললে- বাবা আমার জন্য চশমা আনবে। স্কুলে আমি মিস হবো। চশমা লাগবে। ফাজ্জা, তুমি অনেক কথা শিখেছো। পাকনা পাকনা কথা। সেদিন আমি তোমাকে ফোন করেছি, তোমার মা তোমাকে ডাকছে। তুমি বললে, এখন কথা বলতে পারবো না। বিজি আছি। দেখো অবস্থা! বাপ ফোন দিয়েছে, চার বছরের মেয়ে বলছে, বিজি আছি। পরে কথা বলব। আজিব! চার বছর বয়সে তুমি যতটা বুদ্ধিমতি, আমি চার বছর বয়সে বোকা ছিলাম।
প্রিয় কন্যা তাবাসসুম-
তোমার নানা হাসপাতালে। তুমি আর তোমার মা গেছো হাসপাতালে। আমি বিকেলে গেলাম হাসপাতালে। আমাকে দেখে তুমি বললে, বাবা এই হাসপাতালে ক্যান্টিন আছে। চলো। গেলাম হাসপাতালের ক্যান্টিনে। তুমি দেখিয়ে দিলে কি কি খাবে। বার্গার, পিজা আর চিকেন ফ্রাই। আমি বললাম, এত খাবার খেতে পারবে? তুমি বললে, খেতে না পারলে মার জন্য নিয়ে যাবো। ফাজ্জা আমি খেয়াল করে দেখেছি, তুমি তোমার মাকে বেশি ভালোবাসো। এই বিষয়টা আমাকে কষ্ট দেয়। আমি কি তোমার মায়ের চেয়ে তোমাকে কম ভালোবাসি? তোমার ভালোবাসা বাবা মা দুজনের জন্যই সমান হওয়া উচিৎ ছিলো।
প্রিয় কন্যা আমার-
তোমার ফাইহা, নামটা প্রায় হারিয়েই গেলো। প্রথম প্রথম আমি তোমাকে ফাইহা বলেই ডাকতাম। এখন আর ডাকি না। ফারাজা বলে ডাকি। ফাইহা নামটা তোমার মায়ের হয়তো পছন্দ নয়। তোমার মামা তোমার নাম রেখেছেন হানিত্রা। তোমার নানা বাড়ির সবাই তোমাকে হানিত্রা বলেই ডাকে। তুমিও মেনে নিয়েছো তোমার নাম হানিত্রা। যাইহোক, একটু আগে তুমি ফোন করে বললে, বাবা স্যরি। তোমার ফোন তখন ধরতে পারিনি। ব্যস্ত ছিলাম। হ্যা বলো কেন ফোন দিয়েছিলে? একদম তরুনী মেয়েদের মতো কথা! ফাজ্জা তুমি অনেক বেশি ধার্মিক হয়ো না। সহজ সরল সুন্দর জীবনযাপন করো।
ফারাজা খান,
দেখতে দেখতে তুমি বড় হয়ে গেলে! এখন তুমি হাঁটো, দৌড়াও, গান গাও, কথা বলো, খেলা করো, গোছল করো, ফ্রিজ থেকে পানির বোতন বের করে আমাকে দাও। আমাকে শাসন করো। এই তো সেদিন তুমি একদম ছোট ছিলে। সারারাত আমি তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতাম। কোল থেকে নামালেই তোমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো। তোমার ডায়পার চেঞ্জ করে দিতাম। তোমাকে ছাদে নিয়ে রোদে বসে থাকতাম। সেই তুমি এখন স্কুলে যাও। বসে বসে আম খাও। ফরফর করে কথা বলো। ফাজ্জা তুমি বড় হও, কিন্তু কখনো বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ো না। তাদের কষ্ট দিও না।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



